০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০০

তা’মীরুল মিল্লাতের নতুন অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান

ড. হিফজুর রহমান

মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় বরাবরই তা’মীরুল মিল্লাতের নাম প্রথমে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির টঙ্গি শাখায় ২০১৮ সাল থেকে প্রায় সাত বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছিল। তবে এবার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও শিক্ষার্থীদের ‘অধ্যক্ষ নিয়োগের এক দফা’ আন্দোলনের পরপরই দ্রুততম সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন ড. হিফজুর রহমান।

মাদরাসাটির মোট তিনটি শাখা রয়েছে— তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা যাত্রাবাড়ী, এটা ১৯৬৩ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র আরেকটি শাখা হলো তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা, যা ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইলে অবস্থিত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আমলে তীব্র রোষানলে থাকতে হয়েছে মাদ্রাসাটিকে। কারণ, একসময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি দেখভালে চলত প্রতিষ্ঠানটি। সে সময় দায়িত্বে ছিলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। পরে অবশ্য দলটি তাদের দেখভালের পরিসর থেকে আলাদা স্বতন্ত্র একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীন করে নাম দিয়েছে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট। এখন সেভাবেই চলছে।

নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার জয়পুর গ্রামে। আবিদুর রহমান ও মাজেদা দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থতম। পিতা মাওলানা আবিদুর রহমান জেলার ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর মুহাদ্দিসের দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন ড. হিফজুর রহমান। ছোটবেলায় বাবার কাছেই পড়াশোনার হাতে-খড়ি এবং ১৯৮৬ সালে ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা থেকে মেধাবৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে দাখিল পাস করেন। ১৯৮৮ সালে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থানসহ আলিম, ১৯৯০ সালে প্রথম শ্রেণীসহকারে অষ্টমস্থান অর্জনসহ ফাজিল পাস, ১৯৯২ সালে প্রথম শ্রেণিসহ হাদীস বিভাগে কামিলে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।

এছাড়াও ড. হিফজুর রহমান শিক্ষকতা পেশায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালে কামিলের ফিকহ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন এবং ১৯৯৯ সালে কামিলের আদব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও আরবী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালে “আবুল আতাহিয়্যাহ ও আবুল আ‘লা আল মা’আরবীর কবিতায় মরমিবাদ” শীর্ষক গবেষণা কর্মের উপর এমফিল ডিগ্রি অর্জনসহ পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে (মাস্টার্স) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। 

১৯৯৩ সালের শুরুতে শিক্ষকতা পেশায় ড. হিফজুর রহমান প্রথমে কুমিল্লা জেলার সৈয়দপুর কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস (হাদিস বিশারদ) পদে নিয়োগ লাভ করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৩ সালের মার্চে তিনি টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষের পদে দায়িত্ব পালন করেন। 

২০০৫ সালে দাউদকান্দির দশপাড়া হযরত কবির উদ্দিন কামিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ দারুল উলুম আহমাদিয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১ ডিসেম্বর বেলা এগারোটায় ড. হিফজুর রহমান মাদ্রাসার অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তা'মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কোরবান আলী, জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগরীর আমীর প্রফেসর জামাল উদ্দিন, মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক আব্দুর রহিম, তা’মীরুল মিল্লাত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।