২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৫

ফেসবুক গ্রুপ কীভাবে নতুন লেখক তৈরি করছে

বইমেলা  © সংগৃহীত

সাদাত হোসাইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখি করেন অনেক দিন আগে থেকেই। শুরুতে তার লেখার বিষয়বস্তু ছিল সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা, শৈশবের স্মৃতিচারণ। পরে ২০১২ সালের দিকে তিনি ফটোগ্রাফির উপর একটি বই লেখেন। সেই বই-এর ছবি এবং ছবিগুলোর গল্প লিখতে থাকেন ফেসবুকে। তখনই ফেসবুকে অনেকে তাকে অনুরোধ করেন গল্প লেখার জন্য।

সাদাত হোসাইন বলেন, "এই মানুষগুলো ব্যক্তি আমাকে চেনেন না। তারা আমার লেখা পছন্দ করছেন। আমার লেখা তাদের স্পর্শ করছে। এটাই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।" সাদাত হোসাইন এখন জনপ্রিয় একজন লেখক। তার প্রকাশিত বই-এর সংখ্যা ২৪টি। এর মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস এবং ফটোগ্রাফির উপর বই।

ফেসবুকে লেখার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে- লেখকদের আগে থেকেই একটা পরিচিতি তৈরি হয়ে যায়। অর্থাৎ তার লেখার একটা পাঠক সংখ্যা তৈরি হয়। তাই যখন সে বই প্রকাশ করে তখন তাকে নতুন করে পরিচিত হওয়া বা নতুন লেখদের মত খাবি খেতে হয় না।

আরও পড়ুন- বাবা-মা ভোট দিলে সন্তানের ফলাফলে যোগ হবে ১০ নম্বর

শিক্ষক এবং লেখক আরজু নাসরিন পনি বলেন, "যেমন ধরেন একজনের যদি ফেসবুকে দুই লাখ ফলোয়ার থাকে তাহলে তার বই অন্তত কমপক্ষে ৫০০টা হলেও বিক্রি হবে, নির্দ্বিধায়।" তিনি বলেন প্রকাশক তার ব্যবসায়িক দিকটা দেখে। তাই একজন নতুন লেখকের বই প্রকাশ করার আগে তিনি চিন্তা করেন তার বই কে পড়বে। "কিন্তু ফেসবুকে পরিচিতি থাকলে ঐ লেখক প্রকাশককে এটা বলতে পারেন যে তার একটা 'ফ্যান-ফলোয়ার' আছে। ঐ প্রকাশক তখন একটা রিস্ক নিতে পারেন," বলেন তিনি।

প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে বই এর মার্কেটিং পলিসিতেও তত পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করেন অনেক লেখক। আরজু নাসরিন পনি বলেন, "আগে আমাদের লেখা প্রকাশের মাধ্যম ছিল পত্রিকার সাহিত্য পাতা বা ম্যাগাজিন। কিন্তু সেখানে লেখার মান ভাল হলেই হত না। এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িত ছিল। কিন্তু এখন অনেকে আগে থেকেই ফেসবুকে একটা ফ্যান-বেস তৈরি করেন যাতে করে তার বই-এর কাটতি বাড়ে।"

আরও পড়ুন- নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই লেখেন। লেখেন কবিতা, ছোট গল্প। কখনো তারা নিজের প্রোফাইলে সেটা শেয়ার করেন। আবার কখনো অনলাইন ভিত্তিক যেসব গ্রুপ রয়েছে সেখানেও তাদের লেখা শেয়ার করেন। ফেসবুক-ভিত্তিক তেমন একটা গ্রুপ পেন্সিল। এই গ্রুপের মডারেটর মুস্তাফিজ শুভ বলেন, দেশ বিদেশের অনেকেই এই গ্রুপে লেখালেখি করেন।

এখন তাদের একটা পাবলিকেশন্স আছে। মি. শুভ বলেন তারা যাদের বই প্রকাশ করেন তারা সবাই তরুণ অথবা নতুন লেখক। এবারের বই মেলায় পেন্সিল পাবলিকেসন্স থেকে ৪৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন নতুন লেখক। মি. শুভ বলেন, "আমরা প্রতিষ্ঠিত লেখদের বই প্রকাশ করি না। যারা নতুন লিখছেন তাদের বই প্রকাশ করা হয় এখান থেকে।" এই বইমেলায় প্রথমবারের মতো বই বেড় হচ্ছে হুমায়রা কণার। তিনি বলেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম না থাকলে তার বই প্রকাশ করা হতো না।

তিনি বলেন, "লেখাগুলো আমি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেছি। একই সঙ্গে ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করেছি। আমার বিভিন্ন সময়ের লেখার সংকলন করে এই বই বের করা হয়েছে।" তিনি বলছেন ভবিষ্যতে লেখাকেই পেশা হিসেবে নেয়া যায় এমন ধারণা তার মধ্যে জন্মেছে। লেখক সাদাত হোসাইন বলেন লেখাটাকে তিনিও এখন মূল পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

তিনি অবশ্য বলেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লিখে সহজে জনপ্রিয় যেমন হওয়া যায়, তেমনি বিভ্রান্তিতে পড়ারও আশঙ্কা থাকে। "কাছের মানুষ বা পরিচিতরা লেখা পড়ে বাহবা দেবেন। অনেক ফলোয়ার হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে কতজন নিয়মিত পরছেন এবং ভাল-মন্দ ফিডব্যাক দিচ্ছেন। অনেকে বলেন ফেসবুক সেলিব্রেটি। কিন্তু লেখার মধ্যে যদি মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কিছু না থাকে, মানুষ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেটা বুঝতে পারে। অর্থাৎ অনেক বেশি লাইক দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না," বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা