৪৬তম বিসিএস লিখিতের শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার হলে করণীয়
আগামী ২৪ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। সাধারণ বিষয়ের পরীক্ষা চলবে ৩ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত। দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাসের অপেক্ষা শেষে আয়োজিত এই পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে মানসিক দৃঢ়তা, কঠোর পরিশ্রম ও ভালো প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু বাস্তবভিত্তিক কৌশল। লিখিত পরীক্ষার হলকেন্দ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ক্যারিয়ার পরামর্শক ও বিসিএস ক্যাডার শাকিল আল-আমিন—
‘রিটেন যার, ক্যাডার তার’ এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে বলা যায়, লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফলই বিসিএসের মূল নিয়ামক। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেকেই আত্মতুষ্টিতে ভোগেন, কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়লে ভাইভায় ভালো করেও কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, রিটেনে ৫০ নম্বর কম পেয়ে ভাইভায় ১৫০ বা ১৬০ পেয়েও কেউ কেউ সাধারণ ক্যাডারে জায়গা পান না। লিখিত পরীক্ষার নম্বর তাই প্রতিযোগিতায় অনেক দূর এগিয়ে রাখে।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ:
প্রথমেই বলি পড়াশুনার কথা চিন্তা না করে পরীক্ষার হলের জন্য একটা মাস্টার প্লান করুন। যারা খুব বেশি প্রস্তুতি নিয়েছে বলে আপনাকে শোনাচ্ছে তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। অনেকে অনেক দুর্দান্ত প্রস্তুতির গল্প শোনাবে। কানে তুলা গুজুন অথবা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন আপাতত।
আরও পড়ুন: ২ ঘণ্টায় ২০০ এমসিকিউ, প্রশ্নপ্রতি সময় ৩৬ সেকেন্ড, যেভাবে সামলাবেন বিসিএস প্রিলির হল
লিখিত পরীক্ষার দিন ভেবে পরিকল্পনা করুন কীভাবে তথ্য উপস্থাপনা করবেন। যেমন- রচনা, এপ্লিকেশন, কিছু নিয়ম ভালো করে দেখে নিন। শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞান, ম্যাথের যে অংশগুলি ভালো পারেন সেগুলো ঝালিয়ে নিন। নতুন করে পড়ে মাথাটাকে ভারী করবেন না। নতুন পড়া ভুলেও পড়বেন না। যথা সম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। পুষ্টিকর খাবার খান, সুপেয় পানি পান করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান, চাপমুক্ত থাকুন। মোট কথা অসুস্থ যেন না হয়ে যান কেননা পরীক্ষার ৭/৮ দিন প্রচুর ধকল যাবে। যারা হলে থাকেন ক্যান্টিনের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। সুস্থ থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
পরীক্ষার কেন্দ্র দূরে হলে যাতায়াতের পরিকল্পনা রাখুন। সম্ভব হলে কেন্দ্রের কাছাকাছি থেকে রিলাক্স মুডে পরীক্ষা দিন। সময়মতো পরীক্ষার হলে যাবেন। পরীক্ষাটা হবে ৫ দিনের টেস্টের মত। সেশন বাই সেশন যেমন টেস্ট, পরীক্ষা বাই পরীক্ষা দিবেন। আগের দিনের পরীক্ষা নিয়ে একদম ভাববেন না। প্রচুর এনার্জি নিয়ে পরের পরীক্ষা দিন।
মনে রাখবেন, আপনি ম্যাথে কিংবা বিজ্ঞানে দুর্বল হতেই পারেন, এটা নিয়ে ভাববেন না। কোন পরীক্ষা খারাপ হয়ে গেল এটা না ভেবে পরের পরীক্ষাটা আরো মনোবল নিয়ে দিন। ৩৫-৪০ এর লিখিত মার্ক্সশীট দেখে অবাক হবেন অনেকেই গণিতে ১৫/২০ পেয়ে এডমিন ক্যাডারও পেয়েছে। যেভাবেই হোক সব পরীক্ষা দিয়ে আসবেন। লিখিত হলো ৮০% প্রস্তুতি ৫০% লিখে আসা। অল্প প্রস্তুতিতেও অনেক ভালো পরীক্ষা হতে পারে। প্রস্তুতি কম আপসেট হবেন না।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যা পড়তে পারেন:
ইংরেজি : Essay এর পয়েন্টগুলো বা হেডিংগুলো যেটার উপর প্যারা করে আপনি লিখবেন।আশা করছি নোট করেছেন বা কালেক্ট করেছেন।পরীক্ষার খাতায় লেখার essay লেখার আগে পেন্সিল দিয়ে ভেতরের পাতায় হেডিংগুলো লিখে নিবেন।তাতে কিছু বাদ পড়ার বা আগের পয়েন্ট পিছনে ,পরের পয়েন্ট আগে এই ঝামেলাটা হবেনা। ৪৫ এর প্রশ্নের প্যাটার্ন দেখে যাবেন।
পৃষ্ঠা ভরা নয় তথ্যবহুল essay লিখবেন।বানান ভুল পরিহার করতে হবে। জানা থাকলে ডাটা দিবেন। পেন্সিলে করা নোট মুছে আসতে ভুলে যাবেননা। আর কিছু পড়ার আছে বলে আমার মনে হয়না। শেষ মুহুর্তে অনুবাদ,ভোকাবুলারি পড়তে যাবেননা। লেটার টু এডিটর প্যাটার্ন দেখতে পারেন। দরকার হলে খাতায় প্র্যাক্টিস করে যাবেন।
আরও পড়ুন: এসএসসিতে ৩.৩৮ পেয়েছিলেন, আল-আমিন এখন বিসিএস ক্যাডার
বাংলাদেশ বিষয়াবলি : জুলাই বিপ্লব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখুন। ভৌগোলিক বিষয়ে ম্যাপ দিন—ম্যাপ আঁকার অভ্যাস আগে থেকেই গড়ে তুলুন। সংবিধান থেকে প্রায় ৩০–৪০ নম্বর আসে—টু দ্য পয়েন্ট লিখলে ভালো নাম্বার পাওয়া সম্ভব। হতাশ হবেন না—সবাই একই অবস্থায় আছেন। আপনার আগেই করা নোট, কোটেশন, ডাটা, গ্রাফ–এসব দেখে নিন। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেবেন না। ভুল তথ্য দিলে পরীক্ষক চিহ্নিত করবেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি : সম্ভবত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ও অন্যান্য সমসাময়িক কূটনৈতিক ইস্যু থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, চুক্তি, ম্যাপ, নোট, গ্রাফ রিভিউ করে নিন।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : শেষ মুহুর্তে আপনার নোট পড়তে থাকুন। অথবা দাগিয়ে যা পড়েছেন তা বারবার রিভিশন দিন। আর যে যে অংশটুকু জটিল মনে হয় সেটা দেখুন আর রিভিশন দিন।
বাংলা : বাংলা ব্যাকরণ এর অংশ কিছু নির্বাচিত প্রশ্ন আসে বিভিন্ন সময়ে সেগুলো রিভিউ করুন। সাহিত্য যতটুকু দেখা যায়,পত্রলিখনের নিয়ম,ব্যাকরণের যে অংশটুকু আপনার একদমই মনে থাকেনা সেটুকু দেখুন। এইগুলো খাতায় লিখে প্র্যাক্টিস করতে থাকুন।
আরও পড়ুন: ডিগ্রিতে পড়ে প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডার
গাণিতিক যুক্তি : নতুন করে ম্যাথ করবেন না। যে ম্যাথ একদম পারেন না বাদ দিন একেবারেই বাদ দিন। যে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাথগুলো পারেন সেগুলো ঝালিয়ে নিন। সব সূত্র ঝালিয়ে নিন । সম্ভব হলে কিছু জ্যামিতি দেখতে পারেন।
খাতায় লেখার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা :
গড়পড়তা না লিখে তথ্যবহুল লেখা লিখুন।২/৪ লাইন পড়েই পরীক্ষক একটা প্রশ্নের মান বুঝতে পারবেন,২/৪ টা প্রশ্ন পড়েই খাতার মান সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন এটুকু নিশ্চিত থাকুন। অনেকে ভাবেন খাতা ভরলেই নাম্বার। ভুল ভুল ভুল।
উত্তরগুলো সুন্দর করে প্যারা করে লিখবেন।বানান ভুল করা যাবেনা।সবার লেখা সুন্দর হবে এমন না তবে পরিষ্কার যেনো হয়।পড়তে অসুবিধা হলে পরীক্ষক বিরক্ত হন। ছোট প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করবেন।আগের রাতেই সময় ভাগ করে নিবেন পার্ট বাই পার্ট। লিখা বুঝা গেলেই হলো। সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করবেন কারণ একটা পার্ট বেশী লিখবেন আরেকটা একদমই খারাপ লিখবেন তাতে ভালো নাম্বার আসবেনা। টাইম ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ডাটা কোটেশন(রেফারেন্স সহ) আলাদা করে নোট না করে থাকেন তবে ফাইনাল রিভিসন দিচ্ছেন এখন আলাদা করুন। বাংলাদেশ এর তথ্য বাংলা ২য় রচনা লিখা যায়।
ডাটা চার্ট আলাদা করে রাখলে দেখতে সুবিধা হয় সবচেয়ে বড় কথা মনে থাকে বেশী।লিখবে তো সবাই।এই একটা জিনিস আপনার খাতাকে বাকি সব খাতা থেকে আলাদা করবে।আপনি যত ডাটা,চার্ট,কোটেশন,গ্রাফ জানেন চেষ্টা করবেন যেখানেই সুযোগ পাবেন কাজে লাগাতে।তবে প্রাসঙ্গিকভাবে টানবেন।রেফারেন্স সহ। টাইম বাজেট করুন। সময়মত সব এন্সার করে আসাই মূল লক্ষ্য হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সময়মতো পরীক্ষার হলে পৌঁছানো এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। শুভ কামনা রইল ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীদের জন্য। সফল হোন মেধা, মানসিক দৃঢ়তা ও সঠিক কৌশলে।