উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েও কেন যোগ দেননি অধ্যাপক ফারুক
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক। সম্প্রতি রাবিপ্রবির ভিসি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদেরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ফলে তিনি ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েও ডিন নির্বাচন অব্যাহত রাখেন এবং বিজয়ী হন। এরপর তিনি রাবিপ্রবিতে ভিসি পদে যোগদান করবেন না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেন। অধ্যাপক ফারুক সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন জানে আলম—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ একজন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করানোকে কতটুকু উপভোগ করেন?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষই আমার আসল পরিচয়। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মাধ্যমে যে আনন্দ পাই তা অন্য কিছুতেই পাই না। শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি যে মিথস্ক্রিয়া তা খুবই উপভোগ করি এবং এটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা আমার থেকে কিছু শিখতে পারছেন কিনা তাতেই আমার প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনার মতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ এই সম্পর্ক অবশ্যই আন্তরিক হবে; যেখানে শ্রদ্ধার জায়গা থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা এবং চাওয়া-পাওয়া তা একজন শিক্ষককে পূরণ করতে হবে। শ্রদ্ধা তো এমনি এমনি আসে না, এগুলো পূরণ করলেই শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি হয়। আমি আমার শিক্ষার্থীদের থেকে এটা বুঝতে পারি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি দীর্ঘসময় আছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন কতটুকু শিক্ষার্থীবান্ধব?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ আমি এখানে ২৩ বছর যাবৎ আছি। একজন শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনের বিগত কর্মকাণ্ড এবং পদক্ষেপ থেকে মনে হয় প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব। তবে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রশাসনের আরো আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার আরো সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাবিপ্রবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনি রাবিপ্রবির উপাচার্য হবেন এটা কি আগে থেকে প্রত্যাশা ছিল না?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ না, রাবিপ্রবির উপাচার্য হওয়ার প্রত্যাশা ছিল না। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হওয়ার জন্য আমার জীবনবৃত্তান্ত মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ছিল। রাবিপ্রবির উপাচার্য হতে সরাসরি কোনো প্রত্যাশা ছিল না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ সম্প্রতি আপনি রাবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটি অত্যান্ত সম্মানিত পদ। অনেকের কাছে পদটি স্বপ্নের মতো। আপনি সেটা পেয়েও ডিন হিসেবেই থেকে গেলেন। কিন্তু কেন?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ আমার পারিবারিক কারণে উপাচার্য পদে যোগদান থেকে বিরত থেকেছি। এখানে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। আর আইন বিভাগকে এগিয়ে নিতে ডিন হিসেবে থেকে গেছি।
আরও পড়ুন: ‘মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, রাবিপ্রবি ভিসি পদে যোগ দেব না’
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কি গুনগুলো থাকা প্রয়োজন?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ প্রযুক্তির ডিসিপ্লিনের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে ভালো হয়। তবে এটি মুখ্য নয়। প্রশাসনিক দক্ষতা এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার কথা বলতে গেলে যেহেতু নেতৃত্বের বিষয় আছে আমি সবদিকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করতাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনার কোন গুনগুলোর কারণে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে মনে হয়?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ডিসিপ্লিনের উপাচার্য আছে। একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক দক্ষতার কারণে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এমনটি হতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ এখন চবিতে ডিনের দায়িত্বে রয়েছেন। লোকে বলে চবির উপাচার্য হওয়ার স্বপ্ন থেকেই আপনি রাবিপ্রবির উপাচার্য পদ ছেড়ে দিয়েছেন? বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য।
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ বিষয়টা এমন নয়। এমন কোনো প্রত্যাশা করে আমি রাবিপ্রবির উপাচার্য পদ ছাড়িনি। ডিন হিসেবে আমার অনুষদকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এটাই আমি প্রত্যাশা করি, চবির উপাচার্য হতে নয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ অনেক সময় দেখা যায়, ভিসির মত সম্মানিত পদ থেকে বিদায়ের মুহূর্তটা সুখকর হয় না। এটা কেন?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ বিষয়টা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। তবে, উপাচার্যের আশেপাশে যারা থাকেন বা পরামর্শকরা ভুল পথে পরিচালিত করেন অনেক সময়। এছাড়াও উপাচার্যদের দায়বদ্ধতার একটা জায়গা থাকা উচিৎ। তারা নিয়মানুযায়ী কাজ করছেন কিনা তা নিয়ে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা উচিৎ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনার মতে, একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ একাডেমিক ফলাফল, গবেষণায় অবদান, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত সততা ও নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা থাকা উচিৎ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ চবির ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি? কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ রয়েছে কিনা?
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ অবশ্যই স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কোনো হস্তক্ষেপ দেখছি না। একজন ডিনের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় আইনে লেখা আছে। সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আইন বিভাগ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা থাকলে শুনতে চাই।
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ আইন বিভাগে ২০১৭-এর পর থেকে জার্নাল প্রকাশিত হয়নি, তা পুনরায় চালু করবো। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আইনের উচ্চতর বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান বাড়াতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করবো।
গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করবো। আ্যলামনাইদের সংযুক্ত করে অনুষদকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবো। প্রয়াত প্রফেসর শাহ আলমের উদ্দেশ্যে কিছু কর্মকাণ্ড করবো। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের ক্যান্টিন এবং লাইব্রেরীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।