ছাত্রনেতা থেকে পুলিশ ক্যাডার শাস্ত্রী
মো. সোহেল রহমান (শাস্ত্রী) ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। তার জন্ম রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায়। বাবা মো. সওকাত আলী ও মা মোছা. সেলিনা আক্তার শিল্পী। ২০১২ সালে বদরগঞ্জের লালদীঘি ও/এ দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।
সোহেল পড়াশোনা পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ইউনিট ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিফাত হক
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
সোহেল রহমান: আমাদের সোনার বাংলার শিল্প নৈপুণ্যে সাজানো সুন্দর গ্রামগুলোয় আর দশটা ছেলের শৈশব-কৈশোর যেমন দূরন্তপনায় কাটে, ঠিক যতটা আমরা আজকের শহুরে জীবনে কল্পনা করতে পারি না, ততটাই গল্পের মত আনন্দমুখর ছোটোবেলা কাটিয়েছি আমি। রংপুরের বদরগঞ্জে রাধানগর শাস্ত্রীপাড়া অনেক বড় গ্রাম। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। ছোটোবেলার বন্ধুদের সাথে দল বেধে স্কুলে যাওয়া, হৈ-হুল্লোড়, গোল্লাছুট আর ক্রিকেট-কাবাডির সেই দিনগুলো এখনো স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল!
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রজীবনে কখনো কি টিউশন করেছেন? টিউশন করার অভিজ্ঞতা থেকে বিসিএসে কি কি উপকার পেয়েছিলেন?
সোহেল রহমান: সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর পরই যদি ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যায়, তাহলে বলতে হয় আমি আমার ছাত্রজীবনের শেষ দিনেও টিউশন করেছি! আমার ছাত্রের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, সেটা রক্ষার্থে আমি হয়তো তাকে আরও কিছুদিন পড়াবো। বিসিএসে উপকার পাওয়ার প্রসঙ্গ মুখ্য না হলেও আমি বলবো শতভাগ পারিবারিক অর্থনৈতিক ব্যাকআপও যাদের আছে, এমন শিক্ষার্থীদেরও অন্তত একটি টিউশন করানো উচিত। শিক্ষকতা অনেক উপভোগ্য একটা ব্যাপার। শেখানোর পাশাপাশি নিজেও শেখা সম্ভব।
এর বাইরে সম্মানির অর্থে নিজের হাতখরচ চালানো যায়, অতিরিক্ত কোনো খরচের জন্যও বাবা-মাকে বলতে হয় না। যদি বিসিএসের কথাই বলি, প্রিলিমিনারি-লিখিত এসব প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও আমরা অনেকটাই নবম-দশম শ্রেণির এনসিটিবি প্রকাশিত বইগুলোর উপর নির্ভর করি। শিক্ষার্থীকে পড়াতে গিয়েই যদি পরোক্ষভাবে এ প্রস্তুতিটুকু হয়ে যায়, সেটা তো অবশ্যই ভালো একটা ব্যাপার!
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে দেখছেন?
সোহেল রহমান: এই স্বপ্ন আমার অনেক পুরোনো। আমার একজন খালাতো ভাই বিসিএস প্রশাসনে কর্মরত। আমার চাচা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তাদের এই সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের মতো কিছু করার আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছিল যখন, তখন আমি হাইস্কুল ছাত্র। আমার পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এই স্বপ্নকে লালন করেছি তাদেরই সুপরামর্শে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এটা আপনার কততম বিসিএস পরীক্ষা ছিল?
সোহেল রহমান: ৪০তম বিসিএসই আমার প্রথম বিসিএস। স্নাতক অষ্টম সেমিস্টারের শেষের দিকে আবেদন করেছিলাম এপিয়ার্ড প্রার্থী হিসেবে। ৪০তম বিসিএসই আমার প্রথম প্রিলিমিনারি, প্রথম লিখিত ও প্রথম ভাইভা পরীক্ষা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
সোহেল রহমান: এটি মূলত প্রতিযোগীর নিজের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে। অনেকে খুব দ্রুত শুরু করে, যেমন প্রথম বর্ষে। আবার অনেকে করে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষে। আমার মতে এর কোনোটাই করা উচিত না। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নিজের কোয়ালিটি বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া উচিত। তৃতীয় বর্ষ বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু উত্তম সময়। দুবছরে বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানের মত বিষয়ে কিছুটা লিখিত প্রস্তুতি ও প্রিলির সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে পড়াশোনার রুটিন কেমন ছিল?
সোহেল রহমান: স্বপ্ন পূরণের জন্য সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে স্বপ্ন পূরণের তাড়না। সৌখিনতায় বিসিএস হয় না। গা-ছাড়া ভাবে বিসিএস অসম্ভব। দীর্ঘ সময় একাগ্রতা নিয়ে যে লেগে থাকবে, সেই সফল হবে। আমি পড়াশোনার ক্ষেত্রে গৎবাঁধা রুটিন মেনে চলতে পারিনি কখনো। ছাত্র রাজনীতি, হল সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন করে যতটুকু সময় পড়ার জন্য বের করেছি, সেই সময়টুকু পরিপূর্ণ ব্যবহার করেছি।
আমার সময়কেন্দ্রিক রুটিন ছিল না, ছিল লক্ষ্যকেন্দ্রিক। একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিদিন দুই-তিনটা বিষয় পড়তাম। হলের পাঠাগার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেবিতে আমি কখনোই বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য যাইনি। নিজের কক্ষটিকেই পাঠাগার বানিয়ে ফেলেছিলাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই সংগ্রামের পথে আপনার কোন স্মরণীয় কিংবা দুঃখের ঘটনা মনে পড়ে?সোহেল রহমান: সংগ্রামের মূলত বড় কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সেটা বাস্তবায়নের জন্য নিরন্তন প্রচেষ্টার আরেক নাম। বিসিএস যদি সংগ্রাম হয়, তবে সেই সংগ্রামে সফলতা অর্জনের পথটা বন্ধুর। দীর্ঘদিনের পারিপার্শ্বিক সকল সমস্যা-সংকটের মুখোমুখি হয়েও নিজেকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নেয়ার কাজটা করে যেতে হয়। এই জার্নির প্রতিটি দিনই আসলে স্মরণীয়, তবে দুঃখের না। কখনো সামান্য কষ্টবোধ হলেও সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন সেটাকে ঘাড়ে চেপে বসতে দেয় না।
আরো পড়ুন: ব্যর্থতার গল্প কেউ শুনতে চায় না, সবাই চায় ব্যর্থতা জয়ের গল্প জানতে
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার আইডল কে?
সোহেল রহমান: আমি একজন বাঙালি। আমি বিশ্বাস করি শত-সহস্র বছর ধরে বিদেশি-বিভাষীদের দ্বারা শাসিত শোষিত এই বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে মহান পুরুষ আজীবন লড়ে গেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া বাঙালির আর কোনো আইডল হতে পারে না। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠার কারণে ছোটোবেলা থেকে তাঁকেই ব্যক্তিত্ববোধ, লিডারশিপ ও মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার ক্ষেত্রে আইডল মেনে এসেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
সোহেল রহমান: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় আমাদের প্রতিনিয়তই শত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। আমি একটি গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। টানাপোড়েনের মাঝেই বেড়ে ওঠা। প্রতিবন্ধকতা যতটুকু ছিল, সময়ের সাথে কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনার সিক্রেট কি ছিল?
সোহেল রহমান: আমরা যারা তরুণ, তারা বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল একটি আগামীর স্বপ্ন দেখি। আমরা স্বপ্ন দেখি জাতির পিতার সোনার বাংলা বাস্তবায়নের যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, ভেদাভেদ বা অসাম্য। আমাদের বীরত্বপূর্ণ অতীত ও পূর্বপুরুষদের উৎসর্গের প্রতিশ্রুতি রক্ষা আমাদের কর্তব্য। এই চেতনা জাগ্রত রাখতে আমি বিশ্বাস করি ছাত্রলীগের মতো প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে নিজেকে এক কাতারে সামিল করতে পারাটা সৌভাগ্যের।
অসংখ্য সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু এটি অস্বীকারের উপায় নেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পিছনে ছাত্ররাজনীতি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে ছাত্র হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পড়াশোনা। এরপর রাজনীতি। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই করে না। আমি নিজে বিগত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমি দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি আমার দায়িত্ব পালনে আমি পুরোটা দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং একই সাথে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। ছাত্ররাজনীতি ও পড়াশোনা কখনোই সাংঘর্ষিক কিছু না। একই সাথে সমান্তরালে দুটোই চলতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাধারণত দেখা যায়, ক্যাডার হওয়ার পর দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কি?
সোহেল রহমান: একজন মানুষের সততা, দায়িত্ববোধ, কর্মনিষ্ঠার বিষয়গুলো আসে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে। যারা দেশকে আপন ভাবে না, দেশের প্রতিটি মানুষের মাঝে নিজের বাবা, মা, ভাই, বোনের চেহারার প্রতিরূপ খুঁজে পায় না, তারাই মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থের পূর্ণতার জন্য। তবে ক্যাডার সার্ভিসে এ সংখ্যা খুবই কম। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতি-নেতি আছে। সরকারের দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারণে এখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকার কারণে দূর্নীতি ধীরে ধীরে দূরীভূত হচ্ছে এবং জনগণ উত্তম সেবাও পাচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিসিএস দিতে চান বা বিসিএস এ ভালো কিছু করতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ কি?
সোহেল রহমান: বিসিএস লম্বা সময়ের একটা রেস। এখানে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে নিরন্তন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পরিশ্রম বিনে সফলতা প্রত্যাশা করা যাবে না। এটুকু মনে রাখতে হবে, আমরা যতটুকু পরিশ্রম করবো, আমাদের অর্জনও ততটুকুই হবে। মাঝপথে বাধা আসবে, কখনো হয়তো ব্যর্থতার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হবে কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না। নিরন্তর প্রচেষ্টাই সফলতার চাবিকাঠি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইভা ও রিটেন নিয়ে বিস্তারিত বলুন?
সোহেল রহমান: বিসিএস শব্দটাকে অনেকে ভীতিকর শব্দে পরিণত করেছে। অথচ এটি সুনির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত একটি সিলেবাসভিত্তিক পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি বাছাইয়ের নামে ৯৫ ভাগ প্রার্থীকে ছাটাই করলেও ক্যাডার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা থাকে লিখিত ও ভাইভার নম্বরের। লিখিত পরীক্ষার গোছানো প্রস্তুতি ও খাতায় সুন্দর উপস্থাপনা অনেক ভালো মার্ক পেতে সহায়তা করে। ভাইভা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় কথা বলার ভঙ্গি, উপস্থাপন কৌশল, প্রত্যুৎপন্ন স্বভাব আর নম্রতা-ভদ্রতা প্রশ্নোত্তর করতে পারা না পারার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাই নিজেকে প্রত্যহিক জীবনেই এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন ভাইভা বোর্ড দশ-পনেরো মিনিটের সাক্ষাতেই প্রার্থীর সব পটেনশিয়ালটির খোঁজ পেয়ে যায়। একই রকম লিখিত দেওয়া দুজন প্রার্থীর মধ্যে ক্যাডার প্রাপ্তির বিষয়টি উপর্যুক্ত বিবেচনায় ভাইভা বোর্ডেই অনেকটা নির্ধারণ হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: চাকরির জন্য নয়, ব্যক্তিত্ব গড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়ালেখার পাশাপাশি নন-ফিকশন কিংবা বাইরের বই পড়ার ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?
সোহেল রহমান: আমরা যেসব বইকে বাইরের বই বলছি, সেসব অয়াঠ করাও মূলত পড়াশোনারই অংশ। একজন বাঙালি হিসেবে আমরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি সাহিত্যের অংশীদার। চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ, মধ্যযুগের সাহিত্যসমূহ থেকে বঙ্গিম, রবীন্দ্র, নজরুল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ, সমরেশ মজুমদার, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদসহ এপার-ওপার বাংলার সাহিত্যিকদের অমর কীর্তিগুলো রস আস্বাদন করতে না পারলে তো বাঙালি-জন্ম বৃথা। প্রতিটি গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর প্রবন্ধ একেকটি ভিন্ন জগৎ। এসব বই চিন্তাত নতুন জগৎ উন্মুক্ত করে দেয়।
এছাড়া ইতিহাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কিত বলসমূহ পড়া বিসিএসের জন্য খুবই সহায়ক। আমি নিজে একজন বইপোকা হিসেবে প্রত্যাশা করব, বিসিএস প্রার্থীরা বাংলা সাহিত্যসহ সমকালীন দেশকালের ও গণ্ডি পেরোনো বইগুলো পড়বে ও অবশ্যই স্পষ্ট ধারণা রাখবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসসহ চাকরি পরীক্ষার প্রিলি সহজে পার হতে পারে। যদি প্রথম তিনটি করণীয় কাজের কথা বলতে বলি। তাহলে এর মধ্যে কী কী রাখবেন?
সোহেল রহমান: সহজে প্রিলি পাস অসম্ভব। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকে আমরা বাছাই পরীক্ষা বললেও আপনি দেখবেন এটি মূলত ছাটাই পরীক্ষা। চার সাড়ে চার লাখ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২০ হাজার বা এর আশেপাশে প্রার্থী এখানে কৃতকার্য হয়। পাসের হার খুবই কম। আমি মনে করি, বিসিএসের সবচেয়ে কঠিন ধাপ এই প্রিলিমিনারি। সেজন্য সহজে প্রিলি পাস করা আসলে খুবই কঠিন। খুব ভালো বেসিকসহ প্রতিটি বিষয়ে ভালো দখল ছাড়া প্রিলিতে টেকা কঠিন।
পরামর্শ হিসেবে আমি বলতে চাই- প্রিলির সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিষয়ে ভালো ধারণা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় বইগুলো পড়তে হবে, বিগত বিসিএসসহ অন্যান্য সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নাবলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয় এবং প্রিলি পরীক্ষার আগে অবশ্যই নিজেকে যাচাই করার জন্য নিয়তিম মডেল টেস্ট অনুশীলন করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে বিসিএস নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যায়। এমনকি কেউ কেউ বিসিএসকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করে। এমনটা কী হওয়া উচিত?
সোহেল রহমান: আমাদের মনে রাখা উচিত বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস দিন শেষে একটা চাকরি মাত্র। জীবন মানেই বিসিএস নয় বা একমাত্র লক্ষ্যও নয়। বিসিএসকে লক্ষ্য হিসেবে নেয়া খারাপ না, তবে বিসিএসে কৃতকার্য না হলে বা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলেও এটি ভাবার অবকাশ নেই যে, আর কিছুই সম্ভব না। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারাই মানুষের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
তবে বিসিএস নিয়ে উদ্দীপনাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। এটি সত্যিই অনেক আশা জাগানিয়া যে, দেশের অধিকাংশ তরুণ নিজেকে একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে দেখতে চায় এবং প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চায়। তাই এটিকে ইতিবাচক ভঙ্গিতে দেখতেই আমি পছন্দ করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?
সোহেল রহমান: আমি সত্যি বলতে আমার ভবিষ্যতকে সচরাচর ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেখি না। আমার জাতির ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ যা, সামষ্টিকভাবে আমার ভবিষ্যতও তাই। রাষ্ট্রীয় উত্তরণের যে অদম্য মনোবলে বাংলাদেশের সরকার এগিয়ে যাচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমি সেই উদ্যোগে শামিল হয়ে আমার সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই। স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে একজন যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত রাখাই আমার আগামীর লক্ষ্য।
সেই সাথে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে সুখ, আমি আমার বাকি জীবন সেই সুখ উপভোগ করতে চাই। ন্যায়-নীতি-নিষ্ঠা বজায় রেখে কর্তব্যপরায়ণ একজন কর্মচারী হিসেবে আমার কর্মজীবন যেন অতিবাহিত করতে পারি, সেজন্য আমি সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
সোহেল রহমান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।