ক্যারিয়ার প্ল্যান করুন একাধিক অপশন রেখে

নোবিপ্রবির সহকারী অধ্যাপক ঊম্মে হাবিবা
নোবিপ্রবির সহকারী অধ্যাপক ঊম্মে হাবিবা  © টিডিসি ফটো

ঊম্মে হাবিবা। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্যবিজ্ঞান  ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও  এমফিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষক পেশার বিভিন্ন বিষয় এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুর রহমান—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ছেলেবেলা কেমন কেটেছিল?
ঊম্মে হাবিবা: আমার ছেলেবেলা, কথাটি মনে পরতেই সেইসব মধুময় স্মৃতিগুলো ভেসে উঠে। আসলে ছেলেবেলা বলতে আজকের জেনারেশনের ছেলে-মেয়েরা যেভাবে বেড়ে উঠছে তেমন নয়। আমার ছেলেবেলা ছিল দুষ্টুমিতে ভরা, সব বন্ধুদের নিয়ে চূড়ইভাতি করা, সাতার কাটা, বিভিন্ন ইনডোর এবং আউটডোর খেলা যেমন, লুডু, কেরাম, গোল্লাছুট, লুকোচুরি ইত্যাদি। আরেকটি কথা না বললেই নয়, পড়াশোনার ব্যাপারে আমি ছিলাম উদাসীন, এর জন্য আব্বুর হাতে উত্তম-মাধ্যম খেয়েছি অনেক, কিন্তু আমি যখন বুঝতে শিখেছি যে আমাকে জীবনে বড় হতে হলে পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই তখন কিন্তু আর উদাসীন ছিলাম না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
ঊম্মে হাবিবা: আমি একজন মেয়ে, তাই পড়াশোনায়তো প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। আমার মনে পরে, যখন আমি এসএসসি পরীক্ষা শেষ করি, তখন অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। ওই সময় বাবা-মার কাছে আমি একটাই কথা বলতাম, “তোমরা কি আমার কাছ থেকে ভালো রেজাল্ট চাও, নাকি সংসারী দেখতে চাও?” আমার বাবা-মা এর তখন একটাই চাওয়া ছিল, ভালো রেজাল্ট। ব্যাস আমাকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবা-মা আমাকে অনেক সার্পোট পেয়েছি এবং বিয়ের পরও বাবা-মার পাশাপাশি আমার স্বামীর প্রেরণায় আজ আমি এই অবস্থানে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতা পেশায় যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
ঊম্মে হাবিবা: আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন থেকেই আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল আমি আমাদের নিজ বিভাগেরই শিক্ষক হবো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় আমি সেটি আর পারিনি। কিন্তু শিক্ষক হয়েই গেলাম। আমি মনে করি শিক্ষক হতে হলে আমাকে অবশ্যই টার্গেট রাখতে হবে টপার শিক্ষার্থী হবার। যাদের ধ্যান-জ্ঞান শুধু শিক্ষক হবার তাদের পড়াশোনার প্রতি যত্নবান হতে হবে। আমি আরেকটি কথা পাশাপাশি বলতে চাই- জীবনে শুধু মাত্র শিক্ষকতা করবো এমন চিন্তা করা ঠিক না, আমি শিক্ষক নাও হতে পারি, সেক্ষত্রে আমার ২য় ক্যারিয়ার কি হবে তাও ক্যারিয়ার লিস্টে আমাকে রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমি একটি সত্য ঘটনা শেয়ার করি। আমাদের বিভাগের এক বড় ভাই, সে অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম হয়েছিলেন। সে ধরেই নিয়েছিলেন বিভাগের শিক্ষক হবেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে আর শিক্ষক হতে পারেন নি আর সেই শোকে তিনি মারা গেছেন। এজন্যই বলছি, কোন পেশাকেই ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে ভাবা যাবে না, অপশন রাখা উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার প্রয়োজন মনে করেন কিনা- সেটা কী ধরণের বই হতে পারে?
ঊম্মে হাবিবা: আমি মনে করি পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানভিত্তিক অন্যান্য বই যেমন, ধর্মভিত্তিক বই, সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি পড়া উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন কি কোনো বিষয় আছে যেটার প্রয়োজন অনেক, সিলেবাসেও বিদ্যমান। তদুপরি আপনার চোখে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে? আর এই সমস্যা থেকে উত্তরলের পথ কী?
ঊম্মে হাবিবা: আমি মনে করি ইংরেজী বিষয়ে প্রত্যেকরই সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। এই বিষয়ে আসলেই আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা কম। উল্লেখ্য যে, ইংরেজী ভাষার দক্ষতা একজন শিক্ষার্থীকে তার পড়াশোনা, গবেষণা এবং ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাহিত্য-সংস্কৃতিক চর্চা তথা বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, হামদ-নাত, প্রবন্ধ-রচনা এবং আর্ট ও ক্যালিগ্রাফিসহ এ জাতীয় প্রোগ্রামের প্রয়োজন কতটুকু? এর কোনো উপকারিতা আছে, নাকি অযথা সময় নষ্ট?
ঊম্মে হাবিবা: সাহিত্য-সংস্কৃতিক চর্চা তথা বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, হামদ-নাত, প্রবন্ধ-রচনা এবং আর্ট ও ক্যালিগ্রাফিসহ এ জাতীয় প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এটা কখনই সময় নষ্ট হওয়া নয়। এসব প্রোগ্রামে পারদর্শী হতে হবে শিক্ষার্থীদের, যাতে তারা ভবিষ্যতে যে পজিশনই থাকুক না কেন বিভিন্ন পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করতে পারবেন বলে মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে আপনার কি পরামর্শ থাকবে?
ঊম্মে হাবিবা: ক্যারিয়ার গঠনে পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য বইও পড়া উচিত। আমি যদি বিএসএস ক্যাডার হতে চাই, তাহলে আমাকে সেভাবেই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান অনলাইন শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কেমন সুফল বয়ে আনছে বলে আপনি মনে করেন?
ঊম্মে হাবিবা: পুরো পৃথিবী আজ করোনা মহামারি আতঙ্কে রয়েছে। আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর প্রভাব বিদ্যমান। লকডাউন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের পড়াশোনায় পিছিয়ে না পরে, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আমি মনে করি, অনলাইন শিক্ষা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ঊম্মে হাবিবা: শিক্ষার্থীদের কে আরো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়াই আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা। আর সেজন্য উচ্চশিক্ষা জরুরি। তাই ভাবছি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করবো। কারণ আমি নিজে না জানলে আমার শিক্ষার্থীরাতো কিছু জানবে না। কাজেই আমাকে আগে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ঊম্মে হাবিবা: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যও শুভকামনা।


সর্বশেষ সংবাদ