ঢাবি অধিভুক্তি ইস্যু: যা ভাবছেন কলেজ অধ্যক্ষরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজ ইস্যু বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয়। একদিকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। অন্যদিকে সেশনজট, ‘গণহারে ফেল’, সুষ্ঠভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করার জন্য আন্দোলন করে আসছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়েছে। তাই বৈজ্ঞানিক উপায়ে সাত কলেজ ইস্যু সমাধানের জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে সুপারিশ করার জন্যও বলা হয়েছে।

সাত কলেজের এই জটিল ধাঁধার কী ধরণের সমাধান চান— তা জানতে চাওয়া হয়েছে অধিভুক্ত কলেজগুলোর কয়েকজন অধ্যক্ষের কাছে। তাঁরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, কলেজ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের ভাবনার কথা। প্রথমে কথা হয় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদের সঙ্গে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাবিতে সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন?
প্রফেসর নেহাল আহমেদ: শিক্ষার্থীরা যে সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আস্তে আস্তে সে সব কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। তবে সরাসরি ঢাবির অধীনে যে দুই ব্যাচ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, সে সকল শিক্ষার্থীদের কিন্তু খুব বেশী সমস্যা নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে আপনারা কী ভূমিকা পালন করছেন?
প্রফেসর নেহাল আহমেদ: যে কোন কাজ শুরুর দিকে গুছিয়ে আনতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে সেগুলো সমাধান হয়। অধিভুক্তির সময় কোন নিয়মকানুন ছিল না। এখন আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে। সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে ঢাবিতে একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। যেখানে শুধুমাত্র সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজগুলোই সম্পাদন করা হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এই বিষয়ে আপনারা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
প্রফেসর নেহাল আহমেদ: শিক্ষার্থীরা ৫টি দাবি জানিয়েছিল। আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ৯০ দিনের মাঝে ফলাফল প্রদান করতে হবে। অধিভুক্ত হওয়ার পর ঢাবির শিক্ষকরা পরীক্ষার খাতা দেখতেন। কিন্তু এখন সাত কলেজের শিক্ষকরা নব্বই শতাংশ খাতা দেখছেন। আশা করছি, আমরা ৯০ দিনের আগেই ফলাফল প্রকাশ করতে পারব। এছাড়াও সেশনজট কমাতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেটে এটি পাশ হওযার কথা রয়েছে।

সাত কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে এবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসাইন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাবির অধিভুক্তির পর থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসাইন: ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ করে তৎকালীন ঢাবি উপাচার্য সাত কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে এক সভা করেন। সেখানে ঢাকার সাতটি কলেজকে অধিভুক্তের ঘোষণা দেন তিনি। যদি পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে একটি প্রশাসনিক অবকাঠামো করে অধিভুক্ত করা যেত, তাহলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ত না। এরকম আন্দোলনও হত না। তবে আশার বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। যা আপনারা সবাই জানেন। ১৫ কর্মদিবসের মাঝে কমিটিকে সমস্যা সমাধানের জন্য সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত থেকে বাতিল হওয়া উচিত বলে মনে করেন কী?
প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসাইন: ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী অধিভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছিল। উন্নত বিশ্বেও এরকম শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। আর বাতিল করলে সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন আবারও হুমকির মুখে পড়বে। প্রয়োজনে সাত কলেজের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। যেখানে ঢাবি ও সাত কলেজ থেকে অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে সাত কলেজের কাজগুলো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

সবশেষে সাত কলেজের ইস্যুতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন: যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু সব কিছুই বুঝা উচিত। সব পক্ষই চেষ্টা করছে দ্রুত সমস্যা নিরসনে। সময় একটু লাগছে। কিন্তু ঢাবিতে অধিভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষার মান বেড়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে। আমরা সবাই চাই, শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বের হয়ে যাক।


সর্বশেষ সংবাদ