কোরবানির গোশতের চেয়ে সুস্বাদু খাবার আর নেই
বাংলাদেশ থেকে যেভাবে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমান উচ্চশিক্ষার জন্য, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আসছেন অনেকে। ভারত, ইরান, নেপালের মতো দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে।
বাংলাদেশের মাটিতে এসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঈদ কেমন কাটছে? ভারত থেকে বাংলাদেশে পড়তে এসেছেন শাহনিজা সুলতানা রশীদ। তিনি পড়ালেখা করছেন রাজধানীর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে। তার ঈদ কেমন কেটেছে সে গল্প শুনেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সিয়াম আহমেদ।
* আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: আমি ভারতের আসাম থেকে এসেছি। বর্তমানে আমি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করছি। এখানে আমার ৪র্থ বর্ষের পাঠদান চলছে।
* কত বছর হলো আপনি আপনার জন্মভূমি আসাম থেকে বাংলাদেশে রয়েছেন?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: আমি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসেছি। সে হিসেবে প্রায় ৪ বছর হয়ে গেছে। এখানে এটা আমার চতুর্থ ঈদ।
* ঈদের দিন কেমন ব্যস্ত থাকে? কি কি করেন সেদিন?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: ঈদ বরাবরই অনেক আনন্দের। আমার ঈদের দিন ফজরের নামাজের মাধ্যমে শুরু হয়। তারপর আমার বাবা আমাকে ও আমার ছোট বোনকে ঈদের সালামি দেন। এরপর তিনি ঈদের নামাজে যান। তবে এখানে আসার পর পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
ঈদুল আজহায় সবচেয়ে ভালো সময় ছিল আমার বাবা যখন কোরবানির মাংস নিয়ে ফিরে আসতেন...। তারপর আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ শুরু করতাম। সব ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করতাম। শেষে আমরা আমাদের মায়ের বিখ্যাত পোলাও এবং গরুর মাংস দিয়ে আমাদের ভোজসভা করতাম।
আসামে আমরা যে জায়গায় থাকি, আশেপাশে খুব বেশি মুসলিম লোক নেই। তবুও মাঝেমধ্যে আমার বন্ধুরা এবং অন্যান্য পরিবার, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ঈদের দিনে আমাদের বাড়িতে আসতেন। তাদের সাথে আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করি।
আরও পড়ুন: ভারতে পরিবার রেখে বাংলাদেশে পড়তে আসা শাফিয়ার ঈদ ‘বেদনাদায়ক’
* ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন অনেকটা আলাদা। আপনার জন্য এবারের ঈদ উদযাপন কেমন?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: দুটি ঈদই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঈদুল আজহা আমার হৃদয়ে বেশি দাগ কেটেছে। কারণ এখানে পশু কোরবানি করতে হয়। এ ঈদে সবাই তাই করেন। সবার ঘরে একটা আমেজ থাকে। সবার রান্নায় নিজস্ব স্বাদ থাকে। আর কোরবানির মাংসের চেয়ে সুস্বাদু খাবার আর নেই। পশু কোরবানির এ দিনটি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পশু কোরবানির মাধ্যমে আমরা আমাদের ঈমানকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পারি।
* সাংস্কৃতিক চিন্তাধারায় কোন দেশে ঈদ উদযাপন আপনার কাছে বেশি প্রাধান্য পাবে?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি না যে একটি দেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো। অবশ্যই আমি আমার পরিবার এবং আমার বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে চাই। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।
কিন্তু এখন একইসঙ্গে বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় পরিবার। এখানে আসার পর আমার কিছু বিশেষ মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। তাদেরকে আমি পরিবারের সদস্য বলে মনে করি। তারাও আমাকে একইভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।
* তবুও নিজের পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিদেশে ঈদ উদযাপন করাটা অবশ্যই বেদনাদায়ক...
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: হ্যাঁ, পরিবার থেকে আমাদের দূরে থাকাটা অবশ্যই কষ্টের। কিন্তু আমি এখানে কিছু বিশেষ মানুষকে পেয়েছি...। সবসময় আমি তাদের উষ্ণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ হই। এ দেশের মানুষ যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ। পরিবার রেখে এসে এসব মানুষগুলোর সঙ্গে মিশে আমার জীবনযাত্রা অনেকটাই সহজ হয়েছে।
এখন আমরা সবাই বড় হয়েছি, পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকছি। তাই ঈদে দাদা-দাদির বাড়িতেও যাওয়া কঠিন। আশা করি সেই দিনটি খুব শিগগিরই আসবে, যখন আমি আবার আমার সকল কাজিন এবং আত্মীয়দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারব।
* আপনার ছোটবেলার ঈদের স্মৃতির কথা বলুন। ছোটবেলার ঈদের কোন স্মৃতি কি এখনো মনে পড়ে?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: ছোটবেলার ঈদের অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে। কাজিনদের সাথে খেলা করা, অন্যের বাড়িতে গিয়ে সালামি সংগ্রহ করা... এগুলো অন্যতম।
* ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা কী হওয়া উচিত?
শাহনিজা সুলতানা রশীদ: ঈদুল আজহা মূল শিক্ষা হজরত ইব্রাহিমের আত্মত্যাগ থেকে শেখা উচিত। এটি মুসলমানদের তাদের দৈনন্দিন জীবনে ত্যাগের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের প্রিয় বস্তুকে তার রাস্তায় কোরবানির করার মাধ্যমে যার প্রতিফলন ঘটে।