ছোটবেলায় সান্তা ক্লজের চকলেট না পেয়ে কেঁদে দিয়েছিলাম

সৃষ্টি সারা বর্ম্মন
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন  © টিডিসি ফটো

আজ ২৫ ডিসেম্বর (সোমবার)। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস)। একজন খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী হিসেবে অন্য সবার মতো এ উৎসবে মেতেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সৃষ্টি সারা বর্ম্মন। তিনি বড়দিনের ইতিহাস, এ দিনের পরিকল্পনা এবং তার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি—রিয়া মোদক

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাই।
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: আমাদের ঈশ্বরপুত্র ও এ জগতের ত্রাণকর্তা প্রভু যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ডে পালন করা হয়। আজকের এই দিনে আমাদের যিশুখ্রিষ্ট ২০০০ বছর আগে একটা গোয়াল ঘরে বেথলেহেম নগরে মাতা মেরী ও সাধু যোসেফের ঘর আলো করে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খ্রিষ্টান ধর্মের মূল কথা কি? 
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: খ্রিষ্টান ধর্মের মূল কথা হচ্ছে আমরা যিশুখ্রিষ্টের জন্ম ও মৃত্যুতে বিশ্বাসী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খ্রিষ্ট ধর্মের ত্রিত্ত্ববাদ বলতে কি বোঝায়?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: খ্রিষ্ট ধর্মের ত্রিত্ত্ববাদ বলতে বোঝায় স্বর্গে স্থিত পিতা ঈশ্বর প্রভু তার পুত্র যিশুখ্রিষ্ট ও পবিত্র আত্মা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খ্রিষ্টান ধর্মের পোপ কিভাবে নির্বাচিত হন? পোপের সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা কেমন?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: পোপ মহোদয় নির্বাচিত হন আমাদের যাজক, বিশপ, কার্ডিনালগণদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে। আর পোপ মহোদয়ের সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতার দিক দিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, নান পোপেরা কি বিয়ে করে?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: না, খ্রিষ্ট ধর্ম যাজক, সিস্টার, পোপ, ব্রাদার, বিশপ, কার্ডিনাল—কেউই বিবাহ করেন না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বড় দিন ছাড়া আপনাদের আর ধর্মীয় উৎসবগুলো কি কি?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: আমাদের বড়দিন ছাড়া আর প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো— ইস্টার সানডে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্রিসমাসে আপনি কি করেন বা আপনি ক্রিসমাসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: ক্রিসমাস ডে আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রধান উৎসব। তাই অনেক প্রস্তুতি রাখতে হয় আমাদের। ঈদ-পূজার মত আমরা বড়দিন উপলক্ষে প্রচুর কেনাকাটা করি। নতুন জামা-কাপড় ক্রয় করি। সেই সাথে আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের উপহারও দেই।

এছাড়া পুরো ঘরবাড়ি ক্রিসমাস ট্রি, বেলুন, পেপার, রঙিন বাতি দিয়ে সাজাই। আর আমাদের যিশুখ্রিষ্ট ২০০০ বছর  আগে একটা গোয়াল ঘরে বেথলেহেম নগরে মাতা মেরী ও সাধু যোসেফের ঘর আলো করে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাই আমরা সেটির প্রতিকৃতি হিসেবে গোশালা ঘর সাজাই, এটা বিশেষ কাজ।

অনেক সময় দেখা যায়, বড়দিনের পরের দিন বা আগের দিন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ ঈদ-পূজা যেমন ধর্মীয় উৎসব তেমনি বড়দিনও একটি উৎসব।

May be an image of 1 person and smiling

আর বাড়িতে যে কোনো উঁচু জায়গায় (ছাদ) আমরা বড় করে স্টার ঝুলাই। যেটা আমাদের যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রতীক। সান্টা ক্লজ সেজে অনেক সময় উপহার আদান-প্রদান করি। বড়দিন উপলক্ষে গির্জায় উপাসনাও করা হয়। সেজন্য গান ও কীর্তন অনুশীলন করে থাকি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বড়দিনে আপনার ছোটবেলার মজার কোনো স্মৃতি আছে কি?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: বড়দিনে ছোটবেলার মজার স্মৃতি অনেক আছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে আমি চকলেট গিফট না পেয়ে অভিমান করে কান্না করে দিয়েছিলাম। তারপর অবশ্য পেয়েছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্রিসমাস আপনার ব্যক্তির জন্য কোনো বিশেষ অর্থ বহন করে কিনা?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: বিশেষ অর্থ তো বহন করেই। আমি বিশ্বাস করি, আমার হৃদয় মন্দিরে, আত্মায় খ্রিষ্ট ছোট্ট যিশু আগমন করেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ক্রিসমাসের দিনে প্রভু-যিশুর কাছে কি প্রত্যাশা করেন?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: আমি ক্রিসমাসে প্রভু-যিশুর কাছে প্রার্থনা করি—যেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা পুরো পৃথিবীর সব মানুষ এক হয়ে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি। একইসঙ্গে আমার দেশ, পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অন্য ধর্মের কেউ কি আপনাদের এ উৎসবে যোগ দিতে পারেন?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: অবশ্যই। কেন পারবে না! আমার বাসায় ক্রিসমাস ডেতে আমার অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও আসেন। আমি নিমন্ত্রন করি। আমরা একসাথে ক্রিসমাস উদযাপন করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কি মনে করেন, ক্রিসমাস সব ধর্মের মানুষের জন্য একটি উৎসব হতে পারে?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: আমি বিশ্বাস করি ক্রিসমাস ডে সকল মানুষের কাছেই একটি উৎসব। কারণ যিশুখ্রিষ্ট এ জগতে এসেছিলেন মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে। অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে আনতে। সত্যিই তিনি আবার আসবেন জগতের শেষ দিনে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই বিশেষ দিনে আপনারা বিশেষ কি ধরনের খাবারের আয়োজন করেন?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: বিভিন্ন রকমের পিঠা, কেক, চকলেট, পোলাও-মাংস, বিরিয়ানি—সব কিছুর আয়োজনই থাকে।

পোপ মহোদয় নির্বাচিত হন আমাদের যাজক, বিশপ, কার্ডিনালগণদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে। আর পোপ মহোদয়ের সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতার দিক দিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা, মুসলিমদের ইফতার-মাহফিল বড় পরিসরে ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হিসেবে আপনাদের উৎসব নিয়েও প্রশাসনের কাছে কোনো প্রত্যাশা থাকবে কিনা?
সৃষ্টি সারা বর্ম্মন: অনেক সময় দেখা যায়, বড়দিনের পরের দিন বা আগের দিন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ ঈদ-পূজা যেমন ধর্মীয় উৎসব তেমনি বড়দিনও একটি উৎসব। এছাড়া রমজানে যেমন ক্যাম্পাসে ইফতার-মাহফিল হয়। সেখানে আমিও অংশগ্রহণ করি। তেমনি সরস্বতী পূজা, হোলি, দীপাবলিও উদযাপন করা হয়।

আমার প্রত্যাশা থাকবে যেন একটা প্রি-ক্রিসমাস প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়। এটা সব দেশের বিভিন্ন ইনস্টিটিউটেও হয়। এমনকি বাংলাদেশেরও অনেক জায়গায় প্রি-ক্রিসমাস প্রোগাম করা হয়। কারণ খ্রিষ্টমাসে যেহেতু শীতের ছুটি  আর সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়, সেজন্য নির্ধারিত দিনে উৎসবের সুযোগ থাকে না।


সর্বশেষ সংবাদ