দেশে-বিদেশে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সিকৃবি গ্র্যাজুয়েটরা
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর)। প্রানীসম্পদ রক্ষা ও দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালে সিলেট নগরীর আলুরতল এলাকায় সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ পায়।
বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে কৃষি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এবছর প্রতিষ্ঠানটি ১৮তম বর্ষে পদার্পণ করছে। গত ১৭ বছরে নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রসারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সিকৃবি নিয়ে ভাবনা, অনুভূতি ও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. মাসুদুর রহমান খোন্দকার।
দেশে-বিদেশে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সিকৃবি গ্র্যাজুয়েটরা
শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক আমাদের এই প্রাণের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। নিজ গুণাবলিতে শুধু সিলেটকেই গৌরবান্বিত করেছে এমন নয়, বরং তার দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতি বছর এই ক্যাম্পাসকে আলোকিত করে বের হচ্ছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, নিজের মেধা, শ্রম, যোগ্যতাবলে আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার মত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও অবদান রাখছেন শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা দেশের জন্যে সুনাম কুড়িয়ে আনছেন।
দেখতে দেখতে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৮তম বছরে পা রাখলো। প্রতিষ্ঠার সতেরো বছরের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়কে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবুও সকল বাঁধা পেরিয়ে সন্ধ্যার শুকতারার মত সবসময় জ্বলজ্বল করে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সুদীর্ঘ পথযাত্রায় একটু একটু করে এগিয়ে গেছে আমাদের এই ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রাপ্তির মাঝেও শূন্যতা কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি অপর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সংকটে জর্জরিত। এখানকার কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হলে থাকলেও শিক্ষার্থীদের বড় অংশ থাকছেন এ সুবিধার রাইরে। এছাড়া নানাবিধ প্রয়োজনে ক্যাম্পাস থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। তবে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধার অভাবে প্রায়শই বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। মাত্র কয়েকটি বাস পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যা অপর্যাপ্ত।
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরোলেও আমাদের ক্যাম্পাসে রয়েছে নান্দনিক ফটকের অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনারও। এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রিয় ক্যাম্পাসটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেন তাহলে সকলের প্রত্যাশীত ক্যাম্পাস হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।
খাদিজা আক্তার শিল্পী
ভেটেরিনারি অনুষদ।
সংকট-সংকীর্ণতা দূরে ঠেলে মাথা উচু করে দাঁড়াবে সিকৃবি
দেখতে দেখতে আরেকটি বছর পেরিয়ে ১৭তম বর্ষে পদার্পন করতে যাচ্ছে টিলায় ঘেরা সবুজ প্রিয় এই ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠার এই অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে দেশ-বিদেশে অনন্য হয়ে উঠেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাম্প্রতিক জলজ সম্পদ ও মৎস্য নিয়ে বাংলাদেশের ৩৪টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং বাংলাদেশে প্রথম হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সকল সংকট ও সংকীর্ণতা দূরে ঠেলে নিজ যোগ্যতা বলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, এই প্রত্যাশা।
মোহাম্মদ ফাহিম
ফিশারিজ অনুষদ।
পর্যাপ্ত গবেষণা সুবিধা এখনো তৈরি হয়ে উঠেনি
যদিও এই ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু আমাদের এই গর্বের প্রতিষ্ঠানটি অনেক ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে। বেসরকারি চাকরির বাজারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন বরাবরই ভালো করে। শুধু ভালো নয় বরং ঈর্ষনীয় সাফল্য বয়ে আনে। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা খুব কমই বলা চলে। বরং শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যমে, নিজ আগ্রহে ও অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের সাথে টিকে থেকে সফল হতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
অন্যদিকে সরকারি সেক্টরের অবস্থা খুবই নাজুক। তাছাড়া একই সাথে প্রায়োগিক বিষয় এবং শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এখানে পর্যাপ্ত গবেষণা সুবিধা এখনো তৈরি হয়ে উঠেনি। এই দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশলের অভাব রয়েছে।
এছাড়া ক্লাসরুমেরও পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। ক্যাপেটেরিয়ার অব্যাবস্থাপনা, আছে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব। এর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিশেষ দিনকে ঘিরে বিশেষ কোন আয়োজন করা, একটা মঞ্চের ব্যবস্থা করা কি যায় না? এসব বিষয়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা ছাপ স্পষ্ট।
আবদুল্লাহ আল কাফি
ভেটেরিনারি অনুষদ।
১৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি শিক্ষা ও গবেষণার কাঙ্খিত লক্ষ্য
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে একটি পরিচয়, ভালোবাসা আর আবেগের নাম। আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ছোট ছোট টিলায় বেষ্টিত সবুজ ক্যাম্পাসের মধ্যে টিলার উপর তৈরিকৃত দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনারটি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণে বাড়িয়েছে। একাডেমিক চাপ ও বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষার মধ্যেও ক্যাম্পাস এবং তার আশেপাশের সৌন্দর্য আমাদেরকে মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখে।
ক্যাম্পাসে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্যে অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে। যা আমাদের মেধাবিকাশে সাহায্য করে আসছে। আমাদের ক্যাম্পাস থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবেও নিযুক্ত আছেন। অনেকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্যে পাড়ি জমিয়েছেন, যা আমাদের জন্যে গর্বের।
বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়নও হয়েছে। তবে খেলাধুলার উপযোগী একটি সুন্দর খেলার মাঠের অভাব এখনো রয়ে গেছে। আশা করি এই সমস্যারও একটা সমাধান হবে। প্রকৃতি এবং পরিবেশগত অবস্থানের দিক বিবেচনায় এখানে পড়ালেখার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তবে এখনো এখানকার শিক্ষার মান, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।
আরিফুল ইসলাম আরিফ
ভেটেরিনারি অনুষদ।
শিক্ষার্থীরা জনগণের চাহিদা মেটাতে খাটছে, কিন্তু হল তাদের জন্য কী করছে?
টিলাবেষ্টিত একটি ক্যাম্পাস সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর সিকৃবির প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেখতে দেখতে আজ ১৭টি বছর পার করে ফেললো। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন নিয়ে তৈরী এই বিশ্ববিদ্যালয় একটা দীর্ঘ পথই অতিক্রম করেছে। ছয়টি ফ্যাকাল্টি আছে এখন। চমৎকার কতগুলো ভবন হয়েছে। দারুণ একটি অডিটোরিয়ামের কাজও প্রায় শেষের দিকে। পড়াশোনাতেও ভালোই নাম-ডাক হয়েছে, বহু গবেষণাও হচ্ছে। তবে সমস্যাও আছে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন খুব একটা বিশ্রাম করার জন্য উপযুক্ত না। প্রচুর খাটুনি খাটতে হয়। এজন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাবারও দরকার। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা জনগণের খাদ্য চাহিদা, পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এতো খাটছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের পুষ্টি চাহিদা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবারে মিটছে?
ভার্সিটিতে যখন এসেছিলাম একটা আশা ছিলো এই বুঝি ডানা মেলার সময় হয়েছে। এখন থেকে বাবা-মার আটকে রাখা ছেলে হয়ে থাকা লাগবে না। এই বুঝি স্বাধীনতা পেতে যাচ্ছি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও পূর্ণ বাকস্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয় সেই বাকস্বাধীনতা কি নিশ্চিত করছে?
আমি ব্যাক্তিগতভাবে আশা করতে চাই ‘করছে’। আশা করতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতিকে একদল শক্ত মেরুদন্ডসম্পম্ন গ্র্যাজুয়েট উপহার দেবে। একটা ব্যাক্তিগত কথাও বলতে চাই, আশা করি প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীরাই একমত হবেন। সেটি হচ্ছে প্র্যাকটিকেল খাতা।
এই প্র্যাক্টিকেল লিখার কাজটা খুব বিরক্তিকর। শুধুমাত্র একটা খাতা লিখার পেছনে ১০-১৫ নম্বর না রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহনমূলক কোনো কাজে লাগিয়ে সেই কাজের ওপর নম্বর নির্ধারণ করলে ছাত্রদের যেমন সুবিধা হয় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও ভালো। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় আরো এগিয়ে যাক। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে কৃষিখাতের আরো নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হোক, এটাই প্রত্যাশা।
রাকিব হোসেন আফ্রাদ
কৃষি অনুষদ।
এগিয়ে যাক প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি, কৃষিই মুক্তি, কৃষিই শক্তি, কৃষকরাই মানব সভ্যতার আদি উদ্ভাবক। আর এই কৃষিবিজ্ঞান শিক্ষার আতুরঘর আমাদের পরিচয় এবং অস্তিত্বের অংশ প্রিয় সিকৃবি আজ সফলতার ১৮তম বছরে পদার্পণ করলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষি, মৎস এবং প্রাণীসম্পদ বিষয়ক যুগোপযোগী ও মানসম্মত আধুনিক শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তাছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কৃষি, মৎস এবং প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য সফলতার সাথে নিত্যনতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন করে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
নাদিম হাসনাত
কৃষি প্রযুক্তি অনুষদ।