ববি শিক্ষার্থীদের আবিষ্কার

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য চশমা পড়বে লেখা, শুনাবেও

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিন শিক্ষার্থীর আবিষ্কার ‘টকিংগ্লাস’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিন শিক্ষার্থীর আবিষ্কার ‘টকিংগ্লাস’   © টিডিসি ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তিন শিক্ষার্থী ২ বছর পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের শোনার এবং পড়ার জন্য একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন।

তরা ডিভাইসটির নাম দিয়েছে ‘টকিং গ্লাস’। এখন পর্যন্ত জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নতুন উদ্ভাবনের অনুরূপ কোনো ডিভাইস বা প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি বলে দাবি করেছেন তারা। বাংলাদেশ সরকারে আইসিটি বিভাগের এটুআই (A2I) এর ডিজেবিলিটি চ্যালেঞ্জ ফান্ডে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পটি গৃহীত হয়।

এটি অন্ধ মানুষের জন্য একটি লাইভ শোনার যন্ত্র যা ব্যক্তির সামনে সমস্ত লেখা পড়তে পারে, যে কোনো বস্তু শনাক্ত করতে পারে। উদ্ভাবকরা এই ডিভাইসটিকে ‘টকিং গ্লাস’ নামকরণ করেছেন।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই ‘টকিং গ্লাসে’। ব্যবহারকারীরা এটা গগলস বা চশমা হিসেবে ব্যবহার করবে। চোখের সামনে লেখার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা চশমায় সংযুক্ত থাকবে ক্যামেরা। ডিভাইসটি একটি স্থিরচিত্র নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিত্রের লেখা ব্যবহারকারীকে পড়ে শুনাবে।

একজন স্বাভাবিক মানুষ যেভাবে বই পড়তে পারেন ঠিক একইভাবে উপযুক্ত গতিতে শুনতেও পারবেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যবহারকারী। ভয়েস কমেন্টের মাধ্যমে ছবি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য সেভ করে রাখা যাবে। এই চশমা ব্যবহারকারীর সামনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু থাকলে নামসহ সনাক্ত করতে পারবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা জানিয়ে দিবে ব্যবহারকারীকে।

প্রাথমিকভাবে টকিংগ্লাসটিতে মোট ৬টি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। ফিচার ৬টি হল- অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকোগনিশন (ওসিআর), ফেইস রিকোগনিশন, অবজেক্ট ডিটেকশন, অবজেক্ট রিকোগনিশন, কারেন্সি রিকোগনিশন, ডিরেকশন ডিটেকশন, লোকেশন আইডেন্টিফিকেশন। এটি মানুষের চেহারা চিহ্নিতকরণ এবং পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণসহ বিভিন্ন দিক নির্ণয়, কোনো বস্তু দেখলে তার নামসহ চিহ্নিতকরণ, বাংলা ইংরেজি বই পড়া থেকে শুরু করে কোনটা কত টাকার নোট তাও নির্ণয় করতে পারবে।

‘টকিংগ্লাস’ উদ্ভাবক টিমের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ, রিপন চন্দ্র দাস এবং ২০১৭-১৮ সেশসনের শিক্ষার্থী বিপুল মণ্ডল। টিম ‘টকিংগ্লাসে’র সুপারভাইজার ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল এবং কো-সুপারভাইজার সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান রাজু।

সোহেল মাহমুদ বলেন, আমার ইচ্ছা এই ডিভাইসে আরো সুন্দর কিছু ফিচার যুক্ত করে খুব শিগগিরই প্রত্যেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। ডিভাইসটি একজন ব্লাইন্ড হেল্পার হিসেবে কাজ করবে। যখন একজন অন্ধ ব্যক্তির কাছে কোন মানুষ থাকবে না তখনো ঔ ব্যক্তি নিজেকে সাবলম্বী ভাবতে পারবে। সে নিজ থেকে পথ তৈরি করতে পারবে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে।

শুধু যে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ ব্যবহার করবে তা নয়, বরং একজন স্বভাবিক মানুষও ব্যবহার করতে পারবে, তার একাকিত্বের সময় সে গান শুনতে পারবেন, অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এর ইন্টারনাল কার্যক্রম হলো এই ডিভাইস থেকে একটা পিকচার নিয়ে ওই পিকচারটি প্রসেস করে অডিও হিসেবে ইউজারকে শুনিয়ে দিবে।

টিম টকিংগ্লাসের সুপারভাইজার কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল জানান, ব্লাইন্ড পিপলদের জন্য এই চশমাটি তৈরি করতে আমাদের দুই বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে।

সাধারণ মানুষ জীবনকে যেভাবে উপভোগ করে এই চশমা ব্যবহার করলে একজন অন্ধ মানুষও একইভাবে জীবনকে উপভোগ করতে পারবে। নর্মাল হিউম্যানের মতোই তারা ফিল করতে পারবে। এটা মানুষকে আইডেন্টিফাই করবে। আমরা এখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেছি।


সর্বশেষ সংবাদ