গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় মাত্র ১ শতাংশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫০ PM , আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫০ PM
দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য গবেষণা কর্ম খুবই জরুরি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই কাজে বরাদ্দ একেবারে নগন্য। দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ১২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয় বরাদ্দ বিশ্লষণে এমনটি জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
২০১৯ সালে গবেষণার কাজে দেশের ১২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ১৫৩ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় এক কোটি ২২ লাখ টাকা দাঁড়াচ্ছে। যা কিনা তাদের মোট ব্যয়ের ১ শতাংশের সমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে কম ব্যয়ের ফলে ২০২০ সালের বিশ্বজ্ঞান সূচকে তলানিতে বাংলাদেশ। ১৩৮টি দেশের মধ্যে দুর্বল জ্ঞান অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশ ১১২তম হয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ।
তবে এ বছর সার্বিক স্কোরে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ থেকে উন্নতি করে ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। এরপরও বৈশ্বিক গড় পয়েন্ট ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশের অনেক নিচেই রয়ে গেছে বাংলাদেশ। অন্য ক্যাটাগরিগুলোতে ভাল করলেও গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়ে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানেরা গবেষণা কাজে ব্যয় বাড়ানোর কথা বলছেন।
ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৩ কোটি টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে আর ৮৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি গড়ে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা করে মোট ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
একই বছরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা ব্যয় মোট চার হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা ব্যয় মোট তিন হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
বেসরকারি সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে ৮২ কোটি টাকা গবেষণা ব্যয় করেছে। অন্যদিকে সরকারি সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই খাতে ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
সরকারিগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ব্যয় ৭ কোটি আর প্রকাশনা রয়েছে ৩০৪টি। দ্বিতীয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এখানেও বরাদ্দ ছিল সাত কোটি; তবে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ১০৬টি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় পাঁচ কোটি ২০ লাখ আর প্রকাশনা এসেছে ৪৭২টি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চার কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৪টি গবেষণা প্রকাশ করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারিতে সর্বোচ্চ ৫১৮টি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আর দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩৬টি প্রকাশনা নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
বেসরকারিগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় ব্যয় করেছে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা দেশের শীর্ষ ১০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট গবেষণা ব্যয়ের চেয়েও পাঁচ কোটি বেশি। ব্র্যাকের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ১৭৯টি। দ্বিতীয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), এখানে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ১৫৮টি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) ব্যয় আট কোটি ৯৭ লাখ আর প্রকাশনা এসেছে ২৩৩টি। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাত কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। তাদের গবেষণা প্রকাশ নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তাদের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সর্বোচ্চ ১১৩৫টি। চার কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯০টি গবেষণা প্রকাশিত হয়ে ষষ্ঠ হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। আর দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৫টি প্রকাশনা নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণা কাজের অবস্থা বিবেচনায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা গবেষণা খাতে এই ব্যয়কে অত্যন্ত অপ্রতুল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজই হচ্ছে গবেষণা কাজকর্মের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফলপ্রসূ গবেষণা হচ্ছে না, যেটা খুবই অপ্রত্যাশিত।