কলেজে না গিয়েই কাটছে কলেজজীবন

মহামারীকালের কলেজ জীবন চলছে অনলাইনে
মহামারীকালের কলেজ জীবন চলছে অনলাইনে   © ফাইল ফটো

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এখন হয়তো নিজেদেরকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিত। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারিতে ১৬ টানা ছুটিতে তাদের শিক্ষাবর্ষের সূচি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ২০২০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) পাস করা এসব শিক্ষার্থী কলেজে না গিয়েও কলেজজীবন শেষ করার পথে রয়েছে। এক বছর আগে ভর্তি হলেও এখনও ক্লাসে যেতে পারেনি তারা। অথচ আগামী বছরের মাঝামাঝিতেই শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হবে তাদের।

এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে তাবাস্সুম রিপা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ২০২২ সালের এইচএসসি ব্যাচ। অথচ আমরা একদিনও কলেজে যায়নি। সিদরাতুল মুনতাহা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে পড়ার সময় কলেজজীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো কই। এখন যা ঘটছে, সবই তো ছিল কল্পনার বাইরে।

এইচএসসিতে পড়াশোনা দুই বছরের। এটাই মূলত কলেজজীবন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা। সামান্য দেরিতে হলেও ৩১ মে ফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় পাস করে এসএসসি ও সমমানের ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। করোনার কারণে একাদশে অনলাইন ভর্তিতেও দেরি হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে অক্টোবর থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। যদিও অন্য বছরগুলোতে ১ জুলাই থেকে একাদশের ক্লাস শুরু হয়।

করোনাকালে শহরের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে তাও জোটেনি। গ্রামের কলেজগুলোতে অনলাইন ক্লাস হয় না। আবার কোনো কোনো কলেজ কিছু ক্লাস আপলোড করলেও তা শিক্ষার্থীরা দেখতে পারছে না। কারণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস নেই। ইন্টারনেটের উচ্চ দাম ও ধীরগতির কারণেও অনেকে ক্লাস করতে পারছে না। ফলে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা মূলত পড়ালেখা ছাড়াই দিন পার করছে। এমনকি অনেকে নানা ধরনের কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে। আবার কেউ কেউ পড়ালেখায় নাও ফিরতে পারে।

এছাড়া রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের বড় কলেজগুলোতে দূর-দূরান্তের ও গ্রামের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়। কিন্তু এখনো সরাসরি ক্লাস না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এখনো তার কলেজ ক্যাম্পাসই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ফলে ভালো কলেজে ভর্তি হয়েও অনেক শিক্ষার্থী কলেজে পড়ার আনন্দই উপভোগ করতে পারছে না।

যেসব শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা টেকনিক্যাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে (ভোকেশনাল) ভর্তি হয়েছে তারা রয়েছে আরো সমস্যায়। তাদের শিক্ষা ব্যাবহারিকনির্ভর হওয়ায় তারা অনলাইনেও সেভাবে ক্লাস করতে পারছে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সর্বশেষ আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ পরিস্থতি যে রকম তাতে আগস্টেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। এভাবে যদি চলতি বছরটাও পার হয়ে যায়, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিকের এই শিক্ষার্থীদের পুরো শিক্ষাবর্ষই শেষ হয়ে যাবে।

শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে, ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বর্তমানে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি। ক্লাসের বিকল্প হিসেবে আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতি গ্রহণও করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ