৫০০-এ ৪৯৯, স্রোতশ্রী বললেন- পরীক্ষার আগে ৩ মাস মোবাইল ছোঁয়নি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০১:৫৯ PM , আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ০১:৫৯ PM
দিনে ১২ ঘণ্টা মোবাইল থাকত হাতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অ্যাকাউন্ট খোলাটাই হয়ে উঠেছিল নেশা। ‘লাইক, কমেন্টস আর শেয়ার’–এর বিশ্রী জীবনে ঢুকে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। লেখাপড়া উঠেছিল শিকেয়। শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনটি ছুঁড়ে ফেলে, তিন মাস মন দিয়ে পড়াশোনা চলল। আর তাতেই একেবারে সেরাদের একজন।
এবছর ভারতের কলকাতায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ৪৯৯ পেয়ে সেরাদের একজন (ছাত্রীদের মধ্যে সেরা) হওয়া ছাত্রীটির জীবনের গল্প এমনই। শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের ছাত্রী স্রোতশ্রী রায় দেখিয়ে দিল মনের জোরে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র কুৎসিত নেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারলে কেমন করে সবার মন জয় করা যায়। এত বড় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া তো সবারই মন জয় করা। তাই না? স্রোতশ্রীর এই মনের জোর তরুণ প্রজন্মের সামনে দৃষ্টান্ত। সে নিজেই বলেছে।
‘দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর হাতে মোবাইল ফোন পাই। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে মেতে উঠি। এমনও হয়েছে দিনে ১২ ঘণ্টাই মোবাইল দেখেছি। মোবাইল নেশা হয়ে উঠেছিল। টেস্টের রেজাস্টে গোলমাল হয়ে গেল। বুঝতে পারি, খুব ভুল করছি। মোবাইল ফোনকে জীবন থেকে বাদ দিলাম। শেষ ক’টা মাস শুধুই পড়েছি। পড়া হয়ে গেলে ভেবেছি। ঘুমোতামও কম। শুধু পড়াশোনা নিয়েই থাকতাম। প্রচুর রেফারেন্স বই পড়েছি।’
স্রোতশ্রী ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। করোনার প্রকোপে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও রাশিবিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে পারেনি। দিতে পেরেছিল শুধু অঙ্ক। আর অঙ্কের নম্বরেই বাজিমাত। ১০০–তে ১০০ পেয়েছে সে। ফলে বাকি বিষয়গুলিতেও ১০০ই নম্বর হয়েছে। ইংরেজিতে ৯৯ পাওয়ায় কাটা গেছে মাত্র ১ নম্বর। বাংলায় ৯২ পেয়েছে।
স্রোতশ্রীর কথায়, ‘এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত। পরীক্ষা বাতিল শুনে অঙ্কেই ভরসা রেখেছিলাম। প্রথম হয়েছি, খুবই ভাল লাগছে। কিন্তু সবক’টা পরীক্ষা দিয়ে এই নম্বরটা পেলে আরও ভাল লাগত।’ টেস্টে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল স্রোতশ্রী। ফল খারাপ হওয়ায় মন খারাপ হয়েছিল।
স্কুলের দিদিমণিরা বুঝিয়েছিলেন, উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টটাই সারাজীবন থেকে যাবে। এটাই ঠিক করে দেবে ভবিষ্যৎ জীবনের গতিপথ। তাই সে যেন একটু মন দিয়ে পড়ে। স্রোতশ্রীর কথায়, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরে এই স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ স্রোতশ্রীর এই ফলে খুব খুশি। জেইই (মেন)–এর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে স্রোতশ্রী।
মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল চুঁচুড়া হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ঐক্য ব্যানার্জি। এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর অর্থাৎ ৪৯৯ পেয়েছে ঐক্যও। তার বক্তব্য, ‘আশা ছিল ভাল ফল হবে, তবে এত ভাল হবে সেটা আশা করেনি।’ সমস্ত বিষয়ে ১০০ নম্বর পাওয়া ঐক্য ইংরেজিতে ১ নম্বর কম পেয়েছে। বাবা সমরেশ ব্যানার্জি কলেজিয়েট স্কুলে কাজ করেন। মা রেখা ব্যানার্জি সংসার সামলান। বাড়ি চুঁচুড়ার ষণ্ডেশ্বরতলা এলাকায়। পাদর্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে মহাকাশ গবেষণা করতে চায় ঐক্য। দিনে মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পড়েই এই ফল। ছবি আঁকা, কুইজ খুব ভাল লাগে তার।
বাঁকুড়া কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র, স্কুলের ‘ফার্স্ট বয়’, অর্পণ মণ্ডলও ৪৯৯ পেয়েছে। বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকায় তাদের বাড়ি। বাবা অসিতকুমার মণ্ডল শালতোড়া বিধানচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক। অর্পণ ডাক্তার হতে চায়। মাধ্যমিকে পেয়েছিল ৬৬৮। ছবি আঁকতে ভালবাসে। প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯৮, ইংরেজি ৯৯, অঙ্ক ১০০, পদার্থবিজ্ঞান ১০০, রসায়নবিজ্ঞান ১০০, জীববিজ্ঞান ১০০।
বড়জোড়া হাইস্কুলের মেধাবী ছাত্র, স্কুলের ‘ফার্স্ট বয়’ গৌরব মণ্ডলও ৪৯৯ পেয়েছে। গৌরবদের বাড়ি বড়জোড়ার মণ্ডলপাড়ায়। খবরটি ছড়িয়ে যেতেই গৌরবদের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড় জমে। গৌরবের বাবা সুবোধবাবু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। মা গৃহবধূ। গৌরব মাধ্যমিকে দশম হয়েছিল। এবার টেস্টে পেয়েছিল ৪৮০। ফাইনালে আর একটু বেশি আশা ছিল। পেয়েছে ৪৯৯। প্রত্যেকটি বিষয়ে একজন করে গৃহশিক্ষক ছিলেন। দৈনিক ৬–৭ ঘণ্টা পড়ত। চিকিৎসক হতে চায়। এই স্বপ্ন অনেকদিনের। তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯৪, ইংরেজি ৯৯, অঙ্ক ১০০, পদার্থবিদ্যা ১০০, রসায়নবিদ্যা ১০০, জীববিদ্যা ১০০।