পাড়ায় পাড়ায় তরকারি বেচেই দিন কাটছে পরীক্ষার্থীর
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ০৯:১৩ AM , আপডেট: ২২ জুন ২০২০, ০৯:১৩ AM
উচ্চ মাধ্যমিকের এখনও দু’টি পরীক্ষা বাকি। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষায় ভাল ফল করতে দিনরাত এক করে ফেলছে পড়ুয়ারা। কিন্তু তাঁর সে উপায় নেই। লকডাউনে বাবার সবজি-তরকারির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সংসারে সম্বল বলতে লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করে মায়ের রোজগার করা সামান্য কিছু টাকা। তবু হাল ছাড়তে নারাজ ছেলে। লেখাপড়া করার প্রবল বাসনা থাকলেও অভাবের সঙ্গে টক্কর দিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিশ্বজিৎ বায়েন বাধ্য হচ্ছেন রাস্তায় নেমে সবজি বিক্রি করতে।
ঢাকুরিয়া রামচন্দ্র হাইস্কুলের বাণিজ্য শাখার ছাত্র বিশ্বজিতের সামনে এখন নতুন লড়াই। একদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করে নিজেকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে অভাবের সংসারের হাল ধরা।
লকডাউনে বাবা ধনঞ্জয়বাবুর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় এখনও বহু মানুষ চাইছেন যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকতে। ছোঁয়াচের আশঙ্কা থেকেই পিছিয়ে গিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও। কিন্তু বিশ্বজিৎকে সেই আশঙ্কা দূরে সরিয়েই তরকারি বিক্রি করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে। তিনি নিজেও জানেন কোনও ভাবে সংক্রমিত হলে রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি দু’টি পরীক্ষা দেওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে।
বিশ্বজিতের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার গোবিন্দপুর এলাকায়। পাশের যোধপুর পার্ক, ঢাকুরিয়া এলাকায় তাঁকে দেখা যায় ভ্যানে করে তরকারি বিক্রি করতে। বিশ্বজিতের মা মিনতিদেবী দু’টি বাড়িতে রান্নার কাজ করেন।
বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘তরকারি বিক্রি করতে করতেই সকালটা কেটে যায়। তার পরে লেখাপড়া করার সময় পাই। লেখাপড়া করে একটা চাকরি জোগাড় করতেই হবে। না হলে সংসারটা চলছে না।’’
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনই এভাবে ছেলের কাঁধে আচমকা সংসারের জোয়াল চেপে বসায় চিন্তিত মিনতিদেবীও। উদ্বিগ্ন মায়ের কথায়, ‘‘একটা চাকরির যে ছেলেটার খুব দরকার। ওকে তো লেখাপড়াটাও এখন মন দিয়ে করতে হবে।’’
বিশ্বজিতের মতোই অবস্থা ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্র সৌম্যজিৎ হালদারের। বাবা রিকশা চালান। মা-ও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। গোবিন্দপুর এলাকারই বাসিন্দা সৌম্যজিতের বাবার রোজগার লকডাউনে বন্ধ ছিল। তার পরে সৌম্যজিৎ বাধ্য হয় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফল বিক্রি করতে। তবু একরাশ স্বপ্ন দেখা চোখে ওই ছাত্র বলে, ‘‘ভাল একটা চাকরি তো করতেই হবে। একটা বাড়ি তৈরি করতে হবে।’’
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মা মধুমিতাদেবী। সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরাও তো চাই ছেলে লেখাপড়া শিখুক। কিন্তু পারিবারিক আর্থিক অবস্থা যে বাদ সাধছে।’’ (সূত্র: আনন্দবাজার)