ক্লাস নিচ্ছেন ওসি, মনোযোগী শিক্ষার্থীরা

  © সংগৃহীত

মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুরের মতলব সরকারি কলেজের ৭ নম্বর শ্রেণিকক্ষে চলছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একত্রে ক্লাস। তারা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে শিক্ষকের পাঠদান। কিন্তু নিয়মিত শিক্ষক নন তিনি। নতুন এ শিক্ষকের গায়ে পুলিশের পোশাক, তিনি মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ। কলেজের অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে এ পাঠদান করেন তিনি। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক-অভিভাবকরা। 

কলেজের শিক্ষকরা জানান, ওসি স্বপন কুমার আইচ তার পাঠদানে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিষয় তুলে আনেন। গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করা, কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা, পলিথিনের ব্যবহার না করা, বাড়ির ভেতর ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাল্যবিবাহ, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং, মাদক ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ বর্জন করা এবং এসবের নেতিবাচক দিক ও পরিণতি সম্পর্কে তিনি শ্রেণিকক্ষে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাঠদানের একপর্যায়ে এসব খারাপ ও ঘৃণ্য বিষয়গুলোকে ‘না’ বলে হাত উঁচিয়ে সেগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার অঙ্গীকারনামাও পাঠ করান তিনি।

এছাড়া বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণের প্রাথমিক ও খুঁটিনাটি বিষয় এবং রসায়নশাস্ত্রের বেশ কয়েকটি অ্যাসিডের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করেন ওসি। শিক্ষার্থীরাও মনোযোগ সহকারে তার আলোচনা শোনে। এ সময় ওই শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত ছিলেন কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. মোশারেফ হোসেন, সেলিনা হক, আইনুন্নাহার কাদ্রী, মিজানুর রহমান ও স্টাফ কাউন্সিলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানাজ পারভীন কাকলীসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

এ বিষয়ে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও ওসি যেভাবে শ্রেণিকক্ষে তাদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পাঠদান করেছেন, তা খুবই ইতিবাচক। তার আলোচনা ও পাঠদান তাদের ভালো লেগেছে। এখন থেকে এসব বিষয়ে তারা নিজেরা সচেতন হবে এবং অন্যকেও সচেতন হতে অনুরোধ করবে। 

কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষক না হয়েও মতলব দক্ষিণের ওসি একজন পেশাদার শিক্ষকের মতোই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি যেভাবে সচেতন করেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

ওসি স্বপন কুমার আইচ বলেন, আজকাল অনেক শিক্ষার্থীই নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এতে তারা নিজেরা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পরিবারকেও ধ্বংস করছে। এছাড়া স্পর্শকাতর অনেক বিষয় নিয়ে তাদের তেমন ধারণাও নেই। এসব বিষয় মাথায় রেখে ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ধারণা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, সময়-সুযোগ পেলে নিজের মূল দায়িত্বের পাশাপাশি এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে তিনি পড়ানো অব্যাহত রাখবেন।


সর্বশেষ সংবাদ