পরীক্ষায় অনুপস্থিত ও বহিস্কার
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়েও কপাল পুড়ছে এইচএসসির লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর
- মুহতাসিম মুনাওয়ার মুগ্ধ
- প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫১ PM , আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৫ PM
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আগামী ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত হবে। এবার সাতটি বিষয়ে নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হলেও ১৩টি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। ১৩টি বিষয়ে ‘অটোপাস’ দেওয়া হলেও পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার কারণে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর কপাল পুড়ছে।
জানা গেছে, এবার ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে সব মিলিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ৯৬ হাজার ৯৯৭ জন। আর বহিস্কার হয়েছেন ২৯৭ জন। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে কিংবা বহিস্কার হলে সামগ্রিক ফলাফল ফেল আসে। সে হিসেবে এবার প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর কপাল পুড়ছে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শুধু অনুপস্থিত কিংবা বহিস্কার নয়; অনুষ্ঠিত হওয়া সাতটি পরীক্ষায় যারা পাস নম্বর তুলতে পারবেন না তাদের ফলাফলও ফেল আসবে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ১৫ হাজার ২০৩ জন। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে এদিন ৪৯ জন শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।
এইচএসসির দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় সাধারণ বোর্ডে অনুপস্থিত ১০ হাজার ৪৪০। এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে ৩ হাজার ২৬৯ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। সবগুলো বোর্ড মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় ২৯ জনকে বহিস্কার করা হয়।
গত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত এইচএসসির তৃতীয় দিনের পরীক্ষায় সব মিলিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ১৬ হাজার ২৭০ জন। আ বহিস্কার কর হয় ৫৯ জনকে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডে ১২ হাজার ৪৫৯ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে তিন হাজার ৩৩০ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪৮১ জন অনুপস্থিত ছিলেন।
এইচএসসি ও সমমানের চতুর্থ দিনে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ১২ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী। আর অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৭৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
এইচএসসি ও সমমানের পঞ্চম দিনের পরীক্ষায় সারা দেশে অনুপস্থিত ছিল ১৩ হাজার ৫৯০ জন পরীক্ষার্থী। আর অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এইচএসসি পরীক্ষার ষষ্ঠ দিনে সারাদেশে ১০ হাজার ৪০২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত এবং ৫২ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।৭ম দিনে নকল করার দায়ে মোট ১৬ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ দিন সারা দেশে অনুপস্থিত ছিলেন ১৩ হাজার ৫৯০ জন পরীক্ষার্থী।
তথ্যমতে, এবার এইচএসসি বা সমমানের মোট পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদিও তা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকার থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনে নামেন পরীক্ষার্থীদের অনেকে। তাঁদের দাবি ছিল, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকার বিষয়টি তাঁদের মানসিক চাপে ফেলেছে। তাই অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে হবে। একপর্যায়ে আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।