অনুষ্ঠিত পরীক্ষার নম্বর ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এইচএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব করবে বোর্ডগুলো
অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর নম্বর ও আগের এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিই পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে প্রকাশ করা হতে পারে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কী উপায়ে প্রস্তুত করা হতে পারে—তা প্রস্তাব আকারে পেশ করতে সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের বলা হয়েছে। সে প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ফল প্রস্তুত করার কার্যক্রম শুরু হবে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সব শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে সভা শেষে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য জানান আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলোর নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো হয়নি সেগুলো সাবজেক্ট ম্যাপিং বা কোন উপায়ে ফল প্রকাশ করা যায় সে বিষয়ে খসড়া প্রস্তাবনা পাঠাতে বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে খসড়া প্রস্তাবনা পেলে আমরা তা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয় পাঠাবো। মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ফল প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল চান না ৭৫ শতাংশ
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলোর নম্বরতো আছে। যেগুলো হয়নি সেগুলোর জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করা যেতে পারে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টদের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বিষয়ের পরীক্ষাগুলো হয়েছে কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়নি, ওই বিষয়গুলোর ব্যবহারিকের নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। আসলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টদের প্রস্তাবনা বা তাতে অনুমোদন পাওয়ার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সভায় অংশ নেয়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল। ২০২১ সালেও তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলোর ফল সাবজেক্ট ম্যাপিং করে দেয়া হয়েছিল। তাই আমাদের সামনে দুইটা উদাহরণ রয়েছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে সব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বলা হয়েছে। আমরা তা প্রস্তুত করে জমা দেব।
আরও পড়ুন: অর্ধেক প্রশ্নোত্তরেও ‘না’, ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’য়ের মতো বিকল্প দাবি পরীক্ষার্থীদের
এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে কিন্তু প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা হয়নি সেগুলোর ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা যেতে পারে৷ আমরা এ বিষয়গুলোও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করবো।
অনুষ্ঠিত হওয়া এইচএসসি ও আগের এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিই পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবি করেছেন আন্দোলনকারী এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এইচএসসির যে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর নম্বর ও আর যে পরীক্ষাগুলো বাতিল হয়েছে সে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিই পরীক্ষায় প্রাপ্ত-নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এরপর থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কী উপায়ে হবে-তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
আরও পড়ুন: স্লোগান দিতে দিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এক জরুরি সভায় ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা আরও দুই সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এছাড়া, ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থেকে ৫০ নম্বরের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে পরীক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরীক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় সচিবের কক্ষের বাইরে পরীক্ষা না দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত অনেক পরীক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা।