৪ মাসের জিইডি কোর্সকে এইচএসসির মর্যাদা দিতে ফের তোড়জোড়!

৪ মাসের জিইডি কোর্সকে এইচএসসির মর্যাদা দিতে ফের তোড়জোড়!
৪ মাসের জিইডি কোর্সকে এইচএসসির মর্যাদা দিতে ফের তোড়জোড়!  © সংগৃহীত

এক সময় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি ও সমমানের মর্যাদা দিয়ে জেনারেল ইকুইভ্যালেন্সি ডিপ্লোমা (জিইডি) কোর্সের সনদে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যেত। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এই সনদ দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে সে সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে এই সনদে এইচএসসি ও সমমানের মর্যাদা দেয়া যাবে না বলে এক অফিস আদেশ জারি করা হয়েছিল। যদিও ফের গুঞ্জন উঠেছে, ৪ মাসের এই জিইডি কোর্সের সনদকে এইচএসসি ও সমমানের মর্যাদা দিতে তোড়জোড় করছে দেশের উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের আগে ৪ মাস মেয়াদি জিইডি কোর্সকে দেশের শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমমান ধরে স্নাতকে ভর্তি হওয়া যেত। কেউ কেউ একমাসেও কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়ে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পর সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, সেসময় উচ্চ শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউজিসি নতুন এক নির্দেশনা জারি করেছিল। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম টু পয়েন্ট ফাইভ করে বা দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে বলেও বাধ্যতামূলক করেছিল ইউজিসি। কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

সেসময় ইউজিসির উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জিইডি প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, “৪ মাস মেয়াদি জিইডি কোর্স শেষ করে স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কোনও কোর্সে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

জানা গেছে, দুই বছর মেয়াদি উচ্চমাধ্যমিকে ১২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পর উচ্চমাধ্যমিক সনদ অর্জন করেন একজন শিক্ষার্থী। এরপর ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু জিইডি কোর্সের মাধ্যমে মাত্র ৪ মাসে চারটি বিষয় পড়েই উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের সার্টিফিকেট অর্জন করে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পেতেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলে বিষয়টিকে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে অনেক বড় অন্তরায় উল্লেখ করে সমালোচনা করেন। শিক্ষা বোর্ডগুলোও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে সেসময়।

বিভিন্ন মহলের আপত্তিকে আমলে নিয়ে ২০১৮ সালে ইউজিসি জানিয়ে দিয়েছিল, জিইডি কোর্সধারী উচ্চমাধ্যমিক সমমানের সার্টিফিকেট নিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্য হবেন না। পরে ২০২০ সালে ফের এইচএসসি সমমানের মর্যাদা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে জিইডি কোর্স পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা। সে আবেদনটি পর্যালোচনার জন্য ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেসময় ইউজিসি সেটি নিয়ে নতুন করে আর সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এদিকে, গত বছরের শুরুতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে এক অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, জিইডি কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমান সনদ দেয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমান সনদের জন্য আবেদন না করার নিদের্শনা দেয়া হল।

সম্প্রতি জিইডি কোর্সের সনদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ফের বিতর্ক উঠেছে। এই সনদ দিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনায় এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইউজিসি সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাবসহ (ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ) বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জিইডি সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। নর্থ সাউথের ভর্তি পরীক্ষায় জিইডি সনদ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলে কর্তৃপক্ষ তাদের মতামত জানতে চান। পরবর্তীতে এ সনদ দিয়ে ভর্তি হওয়া যাবে না মর্মে তাদের জানানো হয়।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, জিইডি সনদে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি নতুন করে সামনে আসায় বেশ সমালোচনা হচ্ছে। ২০১৮ সালে এ বিষয়ে কমিশনের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা বোর্ডও এ সনদকে এইচএসসির সমমান না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জিইডি সনদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আগে ছিল। এখন সেটি বন্ধ আছে। শিক্ষা বোর্ড জিইডিকে এইচএসসি সমমানের মর্যাদা দিলে তখন বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সভায় আলোচনা করা হবে। এর আগে এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।

এদিকে জিইডি সনদকে উচ্চমাধ্যমিকের সমমান হিসেবে ধরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টিতে নাখোশ শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় দু’বছর। ১২০০ নম্বরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় এ ডিগ্রি পেতে।

অথচ মাত্র ৪ মাসেই লাভযোগ্য জিইডি সনদকে উচ্চমাধ্যমিক সমমানের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে জিইডি সনদ দেশে অবৈধ। তবুও এ সনদ দেখিয়ে নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক। ভর্তি পরীক্ষায় কারা কোন সনদ নিয়ে আবেদন করছেন সে বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে জানতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

বাংলাদেশে এ কোর্সটি পরিচালনা করছে মেন্টরস নামের একটি প্রতিষ্ঠানও। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ডিগ্রি নিয়ে স্নাতকে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে জিইডি সনদ গ্রহণ করে বলে জানানো হয়।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জিইডি কোর্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশনের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ