নীতিমালা ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর নামে কলেজ ভবন, পরে বাতিল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩৭ AM , আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০২ AM
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও আমজাদ আলী মহাবিদ্যালয়ের একটি পুরনো অসম্পূর্ণ ভবনের নাম নীতিমালা ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর নামে করা হয়। পরে ভবনটির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর সে নাম বাতিল করে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নামে করা হয়। অন্যদিকে কলেজটিতে সরকারি অনুদানে হওয়া পৃথক অপর ভবনের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর নামে। এখন এমিলির নামে করা ভবনটির নামকরণ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কলেজটির শিক্ষক শ্যামল কুমার রায় বলেন, কলেজ মাঠে গরুর হাটের টাকা এবং স্থানীয়দের অনুদানে হওয়া অপরিকল্পিত-অসম্পূর্ণ ভবনের নাম ‘বঙ্গবন্ধু’ রাখা হয়েছিল। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আপত্তির প্রেক্ষিতে সে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটি কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর সে ভবনে নামকরণ করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নামে।
তবে স্থানীয় একটি পক্ষের অভিযোগ, আগের ভবনের নাম ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ মুছে ফেলে এমপি নিজেই সেটিকে নিজের নামে ‘সাগুফতা ইয়াসমিন ভবন’ নামকরণ করেছেন। এ বিষয়ে স্কুলের একাধিক শিক্ষক বিরোধিতা করলেও সেটি মোটেও গ্রাহ্য করেননি তিনি। তার নামেই ভবনের নামকরণ না করা হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
শ্যামল কুমার রায় বলেন, প্রায় সমসাময়িক সময়ে কলেজটিতে সরকারি অনুদানে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে সে ভবনের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করে দেওয়া হয়েছে। আগের ভবনটির আর্থিক অনুদান নিয়ে যেহেতু কথা ছিলো, তাই বঙ্গবন্ধুর সম্মানার্থে নতুন চারতলা বিশিষ্ট এ ভবনের নামে করা হয়। কিন্তু একটি শ্রেণি কেন এ নামকরণ নিয়ে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে তা তিনি জানেন না।
জানা যায়, স্থানীয়দের ব্যক্তি প্রচেষ্ঠায় ২০০৩ সালে বালিগাঁও আমজাদ আলী কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। কলেজের বর্তমান সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন। কলেজের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন সরকারের দৃষ্টি গোচর হওয়ায় ২০১০ সালের মে মাসে সরকার কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করেন। বর্তমানে কলেজটিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, কলেজ মাঠে বসানো গরুর হাটের টাকা এবং স্থানীয়দের অনুদানে একটি ছোট আকারে ভবন তৈরি করা হয়। অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয় ভবনটি। পরে কিছু অতি উৎসাহী লোক না বুঝেই রেজল্যুশন ছাড়া ভবনটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ লিখে দেয়।
তিনি বলেন, এই নামকরণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা আপত্তি করে। গরুর হাটের টাকার ভবন কিভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে হয়? পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিনের প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে কলেজটিতে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে রেজল্যুশন করে প্রধান ভবনটিকেই ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ নামকরণ করা হয়। পুরনো ভবনটি হয় ২০০৯ সালে।
মোফাজ্জল হোসেন জানান, নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০১৩ সালে, হস্তান্তর করা হয় ২০১৬ সালে। নতুন ভবনের নামকরণের পরই পুরনো ভবনের নাম পরিবর্তন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য একজন শিক্ষাবিদ, এই কলেজের প্রতি তার অনেক অবদান। তাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সম্মিলতভাবে পুরনো ভবনের নাম রাখা হয় ‘সাগুফতা ইয়াসমিন ভবন’। সেই পুরনো ঘটনা নিয়েই এখন রাজনীতি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বর্তমানে কলেজটিতে আমার নামে যে ভবনটি রয়েছে, সেটি একটি নতুন ভবন। যা গরুর মাঠের টাকা, স্থানীয়দের অনুদানের টাকায় ভবন করেছি। আমি নিজেও সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়েছি। গরুর মাঠের আয় করা টাকা দিয়ে যে ভবন করা হয়েছে সেটির নাম বঙ্গবন্ধু ভবন কিভাবে রাখা সম্ভব?
ভবনটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় রাজনীতিক আওলাদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এমন বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে কেন, তা-ও স্পষ্ট সবার কাছে।
শিক্ষা অধিদপ্তরেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালিগাঁও আমজাদ আলী কলেজের পুরনো ভবনটির ‘বঙ্গবন্ধু’র নামকরণে নীতিমালা মানা হয়নি। শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক বলেন, ‘যেহেতু নীতিমালা মেনে করা হয়নি, সেটিকে নামকরণ বলা যাবে না।’
কলেজটির অধ্যক্ষ এস এম আনিসুল হক বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে দুটি ভবনের নাম বঙ্গবন্ধু ভবন থাকাও সঠিক নয়। তাই পুরনো ভবনটি সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামে নামকরণ করা হয়, যা রেজল্যুশন করা। কিন্তু একটি স্থানীয় পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি সবাইকে বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।