পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনজট নিরসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো  © সংগৃহীত

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এই মহামারী কতদিন প্রলম্বিত হবে, আবার কবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গণগুলো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসবে সে বিষয়ে আপাতত কেউও কিছু বলতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহনে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহন না হলে ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে শুধু সম্মান শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা। তাদের মতে, এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

জানা যায়, গত মার্চের ৮ তারিখে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না কমায় আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে তাদের কর্মজীবন শুরু করার ওপরেও।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্মান শেষ বর্ষ এবং স্নাতোকত্তোরের ছাত্ররা শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিলে এবং বছরের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়ার সকল প্রস্তুতি নিলেও, সেশনজট ঠেকানো যাবে না। করোনাভাইরাস তাদের সব প্রত্যাশা নস্যাৎ করে দিচ্ছে এবং একই অবস্থা হয়েছে প্রকৌশল ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এমনকি ছয় মাসের সেমিস্টার যদি চার মাসে এবং এক বছরের সেমিস্টার ১০ মাসে শেষ করে, তা হলেও তার বাকি লেখা পড়া শেষ করতে আরো আট মাস ও দশ মাস সময় লাগবে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরীক্ষা গ্রহনে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহন না করে তা হলে সেশন জট থেকে রক্ষা পাবার কোন উপায় থাকবে না। কমপক্ষে এক বছরের ক্ষতি হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন বিভাগকে এ ধরনের স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতোকত্তোর পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই শেষ বর্ষের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা গ্রহনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের হলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ১৪ দিনের কোরেন্টিনে রাখা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর এ পরীক্ষা হবে। গত মে মাসে তাদের এ পরীক্ষা হবার কথা ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০টি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শেষ বর্ষের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ সকল পরীক্ষা গত মার্চ এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। তাদের শেষ বর্ষের পরীক্ষার সময় চলে আসছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অন লাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। তবে, উপস্থিতি কম। তারা এখনো পরীক্ষার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ সেশনজটের ভীতি কাজ করছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশের প্রকৌশল এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষাবর্ষেও শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারে। কেননা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ব্যবস্থা না নিলে সেশনজটের অধিক ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবতে হবে, তারা অন্তত শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটা নিতে না পারলে সেশনজটের বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। বাকি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তার পরামর্শ হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেশনজট কমিয়ে আনতে অন্তত, একটি সেমিস্টার কমিয়ে আনা যায় কিনা, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মনে হচ্ছে, আমাদেরকে করোনা আরো দীর্ঘ সময় মোকাবেলা করতে হবে। এই দীর্ঘ সময় আমাদেরকে শুধু ঘরে বসে না থেকে সবকিছুতে স্বাভাবিক চিন্তা করতে হবে। স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শেষ বর্ষের পরীক্ষা নেয়া হবে একটি ভাল সমাধান।


সর্বশেষ সংবাদ