ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোবাসায় মুগ্ধ কাওসারের পরিবার

  © ফাইল ফটো

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র কাওসার আহমেদ। তার দুই জমজ সন্তান ও পরিবারকে সাহায্যের জন্য ‘ফান্ড ফর টুইনস’ নামে  ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন, বিভাগ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তহবিল সংগ্রহ করে। সংগৃহীত তহবিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’র মাধ্যমে একত্রিত করে নিহত কাওসারের সন্তানদের নামে ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জুয়েল কাওসারের সন্তানদের জন্য মাসে ১৫হাজার টাকা করে সাহায্য দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তবে রবিবার সকালে কিছু গণমাধ্যমে ‘সংসার আর চলছে না’ শিরোনামে কাওসারের স্ত্রী নুশরাত জাহান মুক্তার বরাত দিয়ে খবর বের হয়। সেখানে বলা হয় খুব কষ্টে, খেয়ে না খেয়ে দুই সন্তান নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। নিউজটি ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে  রবিবার দুপুরের দিকে কাওসারের স্ত্রী, মা এবং তার বড় ভাইকে নিয়ে ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ লাইভে আসেন ঢাবি শিক্ষার্থী সৈয়দ শরিফুল ইসলাম শপু এবং হাবিবুর রহমান জুয়েল।

ফেসবুক লাইভে কাওসারের স্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং জুয়েল ভাইয়ের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলিনি। জুয়েল ভাই সব সময় আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং যেকোনো সমস্যায় তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি সাংবাদিকদের শুধু ভালোটা বলেছি। তারা কেন এরকম একটা ভুয়া নিউজ আমাদের নামে করলো আমি জানি না।

তিনি ফান্ডের ব্যাপারে বলেন, তারা (ঢাবি পরিবার) আমার বাবুদের জন্য আরও বেশি ফান্ড তোলার চেষ্টা করছেন। তারা অনেক ভাল মানুষ। তিনি টাকাগুলো তার এতিম দুই শিশুর নামে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেয়ার অনুরোধ জানান।

কাওসারের বড় ভাই ইলিয়াস বলেন, এরকম নিউজ আসলেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কেন এ ধরনের নিউজ করা হলো আমি জানি না। তিনি এ ধরনের নিউজে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান এবং ভবিষ্যতে এরকম নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

অন্যদিকে হাবিবুর রহমান জুয়েল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। আমি নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। তিনি এমন নিউজের তীব্র নিন্দা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপের পক্ষ থেকে জানায়, ডাকসু নির্বাচনের কারণে টাকা হস্তান্তরে একটু দেরি হয়েছে। তারা এ ধরণের বিভ্রান্তিকর নিউজ ছাড়ানোর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতে এরকম নিউজ না করার আহ্বান জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ফেসবুক গ্রুপের সাবেক এডমিন এবং ‘ফান্ড ফর টুইনস’ এর অন্যতম উদ্যোক্তা সাদমান শাকিল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পত্রিকাগুলো হয়তো কাওসারের পরিবারের ভালোর জন্য নিউজটা করেছিল। কিন্তু এটা সবাই নেতিবাচকভাবে নেয়ার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, টিএসসির সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে কাওসারের জমজ শিশুর জন্য টাকা সংগ্রহ করে। সকলের মধ্যে সমন্বয় করে টাকা কিভাবে হস্তান্তর করা হবে সেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পক্ষ থেকে আরো এক লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার আশ্বাস দেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষকেরা। এজন্য আমাদের এপ্রিলের ১ম সপ্তাহের কয়েকটি দিন লাগবে। আর কাওসারের পরিবারকে জুয়েল ভাই তার ওয়াদা অনুযায়ী মাসের খরচ প্রদান করছেন।

আমরা চাই কাওসারের পরিবার যাতে আমাদের থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পায়। কাওসারের স্ত্রীর কোন চাকরির ব্যবস্থা করা যায় কিনা- সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে। তিনি এখন পর্যন্ত মোট টাকা ছয় লাখ আটারো হাজার আটশো টাকা উঠেছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের টাকাযুক্ত হলে আরো বেশি হবে, সেটার জন্যই মূলত আমাদের অপেক্ষা।


সর্বশেষ সংবাদ