শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট: তীব্র সেশনজটে চবির আইএমএল ইনিস্টিটিউট
- এ এইচ আজহার, চবি
- প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৭ PM , আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:২৮ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে (আই এম এল) সেশনজট যেন দিনদিন লাগাম ছাড়া হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, ক্লাস-পরীক্ষার প্রতি শিক্ষকদের অবহেলা, নিয়মিত বিভাগীয় প্রধান না থাকা এবং ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছেনা শিক্ষা কার্যক্রম। এতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
২০০৮ সালে চবিতে আইএমএল-এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে বিভিন্ন ভাষার উপর ডিপ্লোমা কোর্স চালু থাকলেও পরে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এই ইনস্টিটিউটে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। কিন্তু অনার্স কোর্স চালু করা পর থেকেই যেন ঝিমিয়ে পড়েছে ইনস্টিটিউটটি। ইনস্টিটিউটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ হয়েছে এবছর। নির্ধারিত চার বছর মেয়াদী কোর্স শেষ হতে লেগেছে ছয় বছর। অন্যদিকে শেষ করেও যেন তাদের হইলোনা শেষ অবস্থা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ছয়মাস পার হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। একই অবস্থা ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের। ২৪ মাসের দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছে এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ৩য় ব্যাচের ১৮ মাস, ৪র্থ ব্যাচ ১৩ মাস এবং ৫ম ব্যাচের ০৬ মাসের সেশনজট রয়েছে।
ব্যাচ ভিত্তিক তারতম্য থাকলেও সেশনজটের পরিমান ছাড়িয়েছে বছর। এমনকি প্রথম ব্যাচের ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় পরবর্তী ব্যাচের পরীক্ষা নিতেও বিলম্ব করছে কতৃপক্ষ । আবার দ্বিতীয় ব্যাচের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ছয় মাসেও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। তৃতীয় ব্যাচেরও একই অবস্থা। দীর্ঘ সেশনজটের ফলে ২য় বর্ষে একসাথ হয়েছে ৩টি ব্যাচ।
ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে অনার্স শেষ না হওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ভুগছেন তীব্র হতাশায়। জানা যায়, বর্তমানে অনার্স কোর্সের ছয়টি ব্যাচে ২৮৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। এছাড়াও ৮টি ভাষা কোর্সের অধীনে ৯০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। সর্বমোট ১১৮৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র ১৩জন শিক্ষক। এর মধ্যে আবার দুইজন রয়েছে শিক্ষা ছুটিতে।
অন্যদিকে শিক্ষকের পাশাপাশি এখানে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও অপ্রতুল। ইনস্টিটিউটটিতে পাঠদানের জন্য মাত্র একটি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষের অভাব পূরণ করতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয় গ্যালারিতে। তবে বিদ্যুৎ না থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য গ্যালারিতে ক্লাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় অন্য বিভাগকে সুযোগ দিতে গিয়ে ক্লাসরুম ছেড়ে দিতে হয়। সেই সাথে ইনস্টিটিউটের নিজস্ব সেমিনার,লাইব্রেরি না থাকায় শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
বিভাগটির একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা এবং শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বিভাগটি আরও ভয়াবহ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউটের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে অনার্স সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। এবার মাস্টার্স সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে জানিনা।
বিভাগের সভাপতি সাবরিনা ইসলাম সুইটি জানান, আমাদের পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই। পর্যাপ্ত জনবল নেই। শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষের অভাবে মাস্টার্স, অনার্স ও বিভিন্ন ভাষা কোর্স মিলে হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এদেরকে নিয়মিত পাঠদান করতে পারছিনা। সেমিনার লাইব্রেরি ও রুম সংকট নিয়ে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন সেকান্দর চৌধুরী বলেন, অনুষদে পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কলা অনুষদের নতুন ভবন চালু হলে আশাকরি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।