০১ জুলাই ২০২৫, ২০:৫১

রোগীদের দুর্ভোগ: মাত্র ১০ আইসিইউ বেডে চলছে মিটফোর্ডের চিকিৎসাসেবা

প্রতীকী ছবি   © সংগৃহীত

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) মোট আইসিইউ সংখ্যা হলো ১০ টি। বর্তমান হাসপাতালটির শয্যা  ৯০০ হলেও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন প্রায় ৩ হাজার রোগী। ফলে রোগীরা এখানে আইসিইউ সহজে পাচ্ছেন না। আইসিইউর এ অপ্রতুলতা সবাই স্বীকার করেছেন। 

গোপালগঞ্জ থেকে আসা এক আইসিইউ রোগীর স্বজন রফিক জানান, ‘আমাদের রোগী এখানে ১৫ দিন ধরে ভর্তি। আমরা আগে ওয়ার্ডে ছিলাম, সেখান থেকেই আইসিইউতে এসেছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। হাসপাতালে আইসিইউ পেতে হয়রানি নতুন কিছু নয়—এটাই যেন এখন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে। 

আইসিইউ রোগীদের আরও কয়েকজন স্বজন বলেন, এখানে আইসিইউ সেবা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়। সংকটাপন্ন রোগীদের অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তাদের অভিযোগ, মিটফোর্ড হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন শতশত রোগীর ভিড়ের তুলনায় এই সীমিত বেডসংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন তারা। 

আরও পড়ুন:২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে

হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা জোরদারে রয়েছে বিশেষায়িত বিভিন্ন ইউনিট ও বেড সুবিধা। হাসপাতালটিতে বর্তমানে মোট ১০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড রয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে ৫টি পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) বেড যেখানে ২ মাস বয়স থেকে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে ৫১টি কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বেড। নবজাতকদের (১ দিন থেকে ১ মাস বয়স পর্যন্ত) জন্য রয়েছে ১৫টি নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) বেড। এছাড়া কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে ২৭টি ডায়ালাইসিস বেড।

সূত্র আরও জানায়, যদি কোনো রোগী ইতোমধ্যে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে, তাহলে সরাসরি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা আইসিইউতে রেফার করেন। আর যদি রোগী বাইরের (ওপিডি বা রেফার্ড) হয়, তাহলে তার জন্য একটি ‘কেস স্টাডি’ প্রস্তুত করে পরিচালকের কাছে অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন মিললে এবং আইসিইউ বেড খালি থাকলে তখন ভর্তি করানো হয়। 

আরও পড়ুন: আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ঢাবির ৫৮৩ ছাত্রী পেলেন ৩ হাজার টাকা করে, চলবে অনির্দিষ্টকাল

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে আইসিইউতে সব ধরনের ক্রিটিক্যাল (জটিল) রোগীই ভর্তি হয়। কিন্তু মোট আইসিইউ বেড মাত্র ১০টি—যা এই হাসপাতালের রোগীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বাস্তবতা হলো, আমাদের এখানে কমপক্ষে ৫০টি আইসিইউ বেড থাকা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন রোগী একবার আইসিইউতে ভর্তি হলে মিনিমাম এক-দুই দিন নয়, অনেক সময় সপ্তাহ বা মাসও লেগে যায় সুস্থ হতে। ফলে যখন বেড খালি থাকে না, তখন নতুন রোগীর জন্য জায়গা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে—এটা একেবারেই স্বাভাবিক।’

হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বাস্তবতা হলো, মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড দিয়ে এত বিশাল সংখ্যক রোগীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত। হাসপাতাল প্রশাসন ইতোমধ্যে আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।