তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, ফেনীতে হাসপাতালে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি
- এমএ আরাফাত ভূঞা, ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০২ PM , আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৪ PM

সারা দেশের ন্যায় ফেনীতেও চলমান তীব্র তাপদাহে জনজীবন নাকাল হয়ে পড়েছে। ক্রমাগত বাড়তে থাকা গরমে শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও পানিবাহিত রোগে। এর ফলে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক রোগীকে শয্যার অভাবে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা দেখা যায়, হাসপাতালের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ২৬ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৬৭ জন শিশু রোগী। বেশিরভাগই আক্রান্ত হয়েছে জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায়। সেখানে কর্তব্যরত নার্স শ্যামলী রানী বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে রোগীর চাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
একই অবস্থা ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও। ১৭টি শয্যার বিপরীতে সেখানে ভর্তি ৪৫ জন, যাদের অধিকাংশই শিশু। সেখানের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রতিদিনই গড়ে ২০-৩০ জন নারী ও শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মূলত ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে আসছেন।
নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডেও একই চিত্র। মহিলা ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার স্থানে ভর্তি ৬১ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে, বহির্বিভাগেও প্রতিদিন রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
রহিমা বেগম নামের এক রোগীর স্বজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার খালা তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে এখানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু রোগীর চাপ এত বেশি যে জায়গার সংকটে মেঝেতেই রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
শহরের পাঠান বাড়ি রোডের বাসিন্দা আব্দুল করিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার মেয়ে গত কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু হাসপাতালে রোগীর প্রচণ্ড চাপ থাকায় প্রথমদিকে কোনো সিট পাইনি। দুইদিন ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে একটি সিট মিলেছে।
ফাজিলপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা হোসনে আরা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি হাসপাতাল আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যেবিত্তের হাসপাতাল। অসুস্থ হলে এটাই হয় আমাদের ঠিকানা। কিন্তু এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি যার কারণে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
রিপন নামের আরেকজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বাচ্চার গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া সমস্যা ভুগতেছে। চিকিৎসা জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু রোগীর চাপ অনেক বেশি হওয়ার কারণে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. রিদোয়ান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি। আমরা রোগীদের আগেই বেড সংকটের বিষয়টি জানিয়ে দিচ্ছি। তবুও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এদিকে ফেনীতে তাপদাহ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফেনী আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মুজিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল বুধবার ফেনীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ৭ এপ্রিল রেকর্ড হয় ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ।