২০ জুন ২০২৫, ১৫:৩৭

প্রকৃতির কল্পনায় কমে মানসিক চাপ

প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রা, করপোরেট দৌড়, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে মানসিক চাপ যেন আমাদের প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই চাপ থেকে মুক্তির জন্য যে বিশাল কিছু করতে হবে তা নয়। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা বলছে, প্রকৃতির কল্পনা করা, প্রকৃতি নিয়ে ভাবা বা প্রকৃতির সংস্পর্শে যাওয়া মানসিক চাপ কমাতে পারে আশাতীতভাবে।

মনের মধ্যেই গড়ে তুলুন প্রকৃতির কোণ
ফিনল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অব টার্কু’র একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি চোখ বন্ধ করে নদী, পাহাড়, ফুলের বাগান বা বনজঙ্গল কল্পনা করে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার হৃদস্পন্দনের গতি কমে, স্নায়ু শান্ত হয়, এবং মন শান্তির অনুভবে ভরে ওঠে। এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল Environmental Psychology-এ।

গবেষকেরা ‘স্ট্রেস রিডাকশন থিওরি’ এবং ‘অ্যাটেনশন রিস্টোরেশন থিওরি’র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, মানব মস্তিষ্ক প্রকৃতির প্রতি একটি জৈবিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। শহরের কৃত্রিমতা মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে দেয়, কিন্তু প্রকৃতির স্পর্শ—তা বাস্তব হোক বা কল্পনাজাত—মনের ক্লান্তি সরিয়ে আনে প্রশান্তি।

শুধু কল্পনাই নয়, প্রকৃতিতে হাঁটলেও মিলবে উপকার
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, কয়েকজন মিলে প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটাচলা করলে তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক চাপ কমে যায়। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সাময়িকী Ecopsychology-এ। এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ১৯৯১ জন মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এমনকি শোক থেকে বের হয়ে আসার সম্ভাবনাও বাড়ে।

গবেষক সারা ওয়ারবার বলেন, ‘একসঙ্গে ঘোরাফেরা, প্রকৃতির সংস্পর্শ, শারীরিক ব্যায়াম এবং মুখোমুখি আলাপচারি—এই চারটি উপাদান একত্রে কাজ করে মানসিক চাপ হ্রাসে।’

আরও পড়ুন: খালি পেটে প্রতিদিন খেজুর খেলে পাবেন যেসব উপকার

কল্পনার জগতে কীভাবে গড়বেন প্রকৃতির ছোঁয়া
গবেষণা বলছে, মাত্র ৩০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির কোনো দৃশ্য কল্পনা করলেও শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি কল্পনা করতে পারেন— একটি নদীর পাড়ে বসে থাকার অনুভূতি, পাখির ডাক, ঝরনার শব্দ, বনের মাঝে বাতাসের শোঁ শোঁ ধ্বনি, পাহাড়ি পথে সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য। এছাড়াও ফোনের ওয়ালপেপারে প্রকৃতির ছবি রাখা, ডেস্কটপ স্ক্রিনে সবুজ দৃশ্য ব্যবহার, অথবা প্রকৃতি সম্পর্কিত শব্দ (যেমন—‘ফুল’, ‘বন’, ‘নদী’, ‘বৃষ্টি’, ‘সমুদ্র’) দিয়ে নিজের জন্য একটি “শান্তির শব্দতালিকা” তৈরি করাও কার্যকর হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাকৃতিক থেরাপি
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও বিভিন্ন ছোট-বড় পার্ক, উদ্যান বা নদীর পাড় রয়েছে—যেমন ঢাকার হাতিরঝিল, রমনা উদ্যান, চট্টগ্রামের ফয়’স লেক, খুলনার শহীদ হাদিস পার্ক। এগুলোর কাছাকাছি গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটালেও মানসিক অবসাদ দূর হতে পারে। যারা গ্রামে বাস করেন, তারা প্রকৃতির ছোঁয়ায় আরও সহজেই নিজেদের জড়িয়ে নিতে পারেন—নিঃসন্দেহে এটি মানসিক সুস্থতার জন্য বড় এক উপহার।

শান্তি চাইলে প্রকৃতির পাশে থাকুন
প্রকৃতিকে শুধুই ঘুরতে যাওয়ার বিষয় হিসেবে না দেখে এটিকে মনে করুন আপনার মানসিক সুস্থতার এক শক্তিশালী ও প্রাকৃতিক হাতিয়ার। সময় বের করে প্রকৃতির কোলে একটু হাঁটুন, অথবা ব্যস্ত দিন শেষে চোখ বন্ধ করে কল্পনায় ডুবে যান সবুজের মাঝে।