শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসায় ৪০ বছরের সঞ্চয় দান
নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এমন পরিবারে বেড়ে উঠেছেন কাজী মোহাম্মদ আলী। চাকরি করতেন ওষুধ কোম্পানিতে। তিলে তিলে জমানো তার ৫০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য। আর এ টাকা তিনি জমিয়েছিলেন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে।
চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে একটি ওয়াক্ফ হিসাব খুলে মোহাম্মদ আলী টাকাটা জমা করে রেখেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির নামে। বছরে সেখান থেকে পাওয়া ৪ লাখ টাকা মুনাফা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করবে রোগী কল্যাণ সমিতি।
বছর বিশেক আগে মোহাম্মদ আলীর মা হোসনে আরা বেগম ক্যানসারে মারা যান। এর বছর পাঁচেক পর এই রোগেই মারা যান তাঁর ভাগনি নাহিদা সোমা। এর আগে নানাকেও ক্যানসারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখেছেন। এসব ঘটনা শিশু ক্যানসার রোগীদের জন্য অনুদান দিতে উদ্বুদ্ধ করছে ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই মোহাম্মদ আলীকে।
১৯৬৬ সালে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। প্রথম দিকে ওষুধ ও অল্প কিছু টাকা দিয়ে রোগীদের সাহায্য করতেন। পরে চিন্তা করলেন একসঙ্গে বড় কিছু করবেন। এরপর ১৯৮০ সাল থেকে তিনি কিছু কিছু টাকা জমাতে শুরু করলেন। তা–ও টিনের কৌটায়। তিনি এসব টাকা জমিয়েছেন গোপনে।
আরও পড়ুন: যে কারণে মেধা পাচার বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে
সঞ্চয়টা বাড়ানোর জন্য ২০ বছর ধরে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেন মোহাম্মদ আলী। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে যে পরিমাণ সুদ দিতে হয়, সেই মুনাফায় পরিচিত মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের টাকা ধার দিতেন। পরে সুদসহ আসল টাকাটা ওই ফাউন্ডেশনের ‘কাজী অ্যান্ড হোসনে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি হিসাব খুলে জমা করি জমা করতেন দান করার জন্য। তবে তার মনের ইচ্ছার কথাটা খুব একটা কেউ জানতেন না। পরিবারের সদস্যরা খুব একটা অবগত ছিলেন না।
পরিবারের সদস্যদের আপত্তি থাকলেও মোহাম্মদ আলীর ইচ্ছার জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ৫০ লাখ টাকাই তিনি তুলে দিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে ওয়াক্ফ হিসাবের কাগজপত্র রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। ওয়াক্ফ হিসাবের মূল টাকা ব্যাংক থেকে আলী বা তাঁর স্বজন এমনকি রোগী কল্যাণ সমিতিও তুলতে পারবেন না। কেবল বছর শেষে মুনাফাটা পাবে সমিতি।
কাজী মোহাম্মদ আলী বললেন, আমি ৫০ ভাগ খুশি হয়েছি টাকাটা তুলে দিতে পেরে। শতভাগ শান্তি পাব যখন শুনব এই সহায়তায় ক্যানসার আক্রান্ত কোনো শিশু চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে।