বিশ্বের সেরা ভবনের খেতাব জিতলো বাংলাদেশের হাসপাতাল

ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল
ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল  © সংগৃহীত

রিবা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে 'বিশ্বের সেরা ভবনের' খেতাব জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ৮০ শয্যার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশা করেছেন৷ এর আগে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর নকশার কাজ করা হয়।

আরও পড়ুন: ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন কম মারাত্মক: গবেষণা

নূন্যতম সম্পদের সাহায্যে নির্মিত পরিবেশবান্ধব এই ভবনটি স্থপতি ডেভিড চিপারফিল্ড নির্মিত বার্লিনের একটি গ্যালারি এবং ডেনমার্কে উইলকিনসন আইরি নির্মিত ফুটব্রিজকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে এ পুরস্কার জিতেছে। রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস-রিবা এই স্বীকৃতি দিয়েছে।

গত ১৬ নভেম্বর রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে ছিল জার্মানির বার্লিনের জেমস-সায়মন-গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতু।

আরও পড়ুন: ২৩৯ জনকে নিয়োগ দেবে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

সীমানাপ্রাচীর নেই। সেই জায়গায় আছে ১০ ফুট প্রশস্ত জলাশয়। এরপর খানিকটা জায়গা ফাঁকা রেখে একতলা আর দুইতলা কিছু ভবন। ভবনগুলোতে নেই পলেস্তারা। ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদ। এটি একটি হাসপাতাল, নাম ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অন্য রকম স্থাপত্যশৈলীর এ স্থাপনার অবস্থান। ভবনটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে প্রতিটি ঘরে পর্যপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। সেইসঙ্গে নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা ও সহজে যাতায়াত ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এ স্থাপনা ২০টি ভবনের সমন্বয়ে ৪৭ হাজার ৭৭২ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত হাসপাতালে আউটডোর ও ইনডোর চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি আছে অডিটরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যানটিন ও প্রার্থনাকক্ষ। চিকিৎসক-নার্সসহ ৫৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসিক সুবিধা আছে। আছে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাও।

আরও পড়ুন: রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিচার শুরু

হাসপাতালের স্থপতি ও ঢাকা-ভিত্তিক স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানার পরিচালক কাশেফ চৌধুরী বলেন, এখানে পুরো জায়গাটি পানিতে পরিপূর্ণ। তবে এই জলাভূমি সবসময় উপকারী নয়। জলবায়ু সংকটের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এই জলাভূমিগুলো তৈরি হয়েছে। এ কারণে আশেপাশের শস্যক্ষেতগুলো চিংড়ি চাষের জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলস্বরূপ, প্রতিদিনের কাজে ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ পানি হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড লবণাক্ত।

বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট রয়েছে এই অঞ্চলে। তাই বর্ষাকালে স্থানীয়রা বিশুদ্ধ পানির সংরক্ষণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। আর এ কারণেই কাশেফ চৌধুরী ভবনটির নকশা এমনভাবে করেছেন, যেন এর প্রতিটি ছাদে, উঠানে এবং খালগুলোতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা যায়। জমে থাকা এই পানি সংরক্ষণের জন্য ভবনের উভয় পাশে দুটি স্টোরেজ ট্যাঙ্কও রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ