নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’-এর বিরুদ্ধে টিকা কাজ করবে?

নতুন এ ধরন বারবার জিনগত রূপ বদলাতে সক্ষম। ধরনটির কারণে বিশ্বে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে
নতুন এ ধরন বারবার জিনগত রূপ বদলাতে সক্ষম। ধরনটির কারণে বিশ্বে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে  © ফাইল ছবি

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। নতুন এ ধরন বারবার জিনগত রূপ বদলাতে সক্ষম। ধরনটির কারণে বিশ্বে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে করোনার নতুন এ ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। তবে গতকাল শুক্রবার এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওমিক্রন’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কারখোভে বলেন, ‘এই রূপ সম্পর্কে এখনো বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে যতটুকু জেনেছি, তা থেকে বলতে পারি, এত বার মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মানেই ভাইরাসের কার্যক্ষমতায় এর প্রভাব পড়তে পারে।’

এদিকে, নতুন ধরনের জিনগত রূপ বদল নিয়ে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাঁদের উদ্বেগের কারণ নতুন ধরনের কিছু কিছু মিউটেশন যে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম তা ইতিমধ্যে জানা গেছে। যদিও এগুলো তাত্ত্বিক জায়গা থেকে বিজ্ঞানীদের পূর্বানুমান।

এছাড়া অ্যান্টিবডিগুলো কীভাবে কার্যকরভাবে নতুন এ ধরনের সংক্রমণ রুখে দিতে পারে, তা পরীক্ষার জন্য জোর গতিতে গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে এ ধরনটির কারণে সত্যিকার অর্থে বিশ্বজুড়ে পুনরায় করোনায় সংক্রমিত হওয়ার হারের তথ্য-উপাত্ত আসতে শুরু করলে হয়তো মানুষের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটবে কি না, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।

বিদ্যমান অ্যান্টবডিগুলো নতুন ধরনটিকে একেবারেই শনাক্ত করতে পারবে না, এমনটা অবশ্য মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। যেটা হতে পারে যে এখন করোনার যেসব টিকা আছে সেগুলো নতুন ধরনে কম সুরক্ষা দেবে। এ জন্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে তৃতীয় ডোজসহ টিকাদানের হার বৃদ্ধি করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী যেসব টিকা আছে নতুন ভ্যারিয়েন্টটির ক্ষেত্রে সেগুলো ‘অকার্যকর’ হয়ে পড়তে পারে।

করোনার নতুন এ ধরনে আক্রান্ত হলে কোভিডের উপসর্গ বদলে যাবে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির অসুস্থতা আরও গুরুতর হবে কি না, তা নিয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। নিশ্চিত কোনো তথ্য পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

তবে এ মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এখন পর্যন্ত এমন কোনো শক্তিশালী কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার কারণে সন্দেহ করা যায় নতুন এ ধরনটি ভয়াবহ হবে, নাকি মাঝারি পর্যায়ের হবে।

এখন পর্যন্ত করোনার যে ভ্যাকসিনগুলো চালু রয়েছে, তার মধ্যে কার্যকারিতার দিক থেকে অন্যতম সেরা মার্কিন সংস্থা ফাইজার এবং তাদের জার্মান পার্টনার বায়োটেকের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। তাদের তৈরি করোনা টিকা নতুন রূপভেদ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হবে?

দুই সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের বর্তমান টিকা, করোনার নতুন রূপের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে, ফাইজার এবং বায়োএনটেক, মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে, ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে একটি নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাইজার এবং বায়োটেক আনুমানিক ১০০ দিনের মধ্যে নতুন রূপভেদের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অনুমোদন পেলে তারা তার মধ্যে নতুন ভ্যাকসিনটির উৎপাদনও শুরু করে ফেলতে পারবে, এমনই দাবি করেছে তারা।

এতে আরও বলা হয়েছে, ফাইজার এবং বায়োটেক আগামী দুই সপ্তাহে ‘ওমিক্রন’ ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে আরও তথ্য হাতে পাওয়ার আশা করছে। তারপরই, নতুন টিকা তৈরি করার কাজ শুরু করে দেবে।

কয়েক মাস আগেই তাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে, নতুন সম্ভাব্য ভেরিয়েন্টগুলোরর বিরুদ্ধে কার্যকর করে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছিল মার্কিন ও জার্মান টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাদুটি। তবে তারা জানিয়েছে, ‘ওমিক্রন’ ভেরিয়েন্টটি করোনার আগের ভেরিয়েন্টগুলোর তুলনায় অনেকটাই আলাদা।


সর্বশেষ সংবাদ