নিজেকে মহিলা জানতেন, বিবাহের পর ক্যানসার চেনাল আসলে তিনি পুরুষ!

প্রতীকী
প্রতীকী

এত দিন নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন তিনি। তিরিশ বছর বয়সে পৌঁছে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরে জানলেন, আসলে তিনি পুরুষ। শরীরে ক্যানসার বাসা না বাঁধলে সেই সত্য হয়তো জানা সম্ভব ছিল না। তাঁর চিকিৎসকেরাও এমন ঘটনাকে বিরল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের দিক দিয়ে লক্ষ্যণীয় বলে মনে করছেন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাস নাগাদ নিউ গড়িয়ার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যানসার হাসপাতালে বীরভূমের এক রোগী আসেন। বিবাহিতা এবং যথেষ্ট সুদর্শনা। তাঁর তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। হাসপাতালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট সৌমেন দাস এবং ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনুপম দত্ত তাঁকে পরীক্ষা করেন।

বহিরঙ্গে তিনি পুরোপুরি মেয়েদের মতোই। গলার স্বর থেকে শুরু করে স্তন সবই মেয়েদের মতো। যোনির গঠনও বহিরঙ্গে নারীসুলভ। বিয়ে হয়েছে ৯ বছর আগে। তবে জন্ম থেকেই তাঁর জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না। পিরিয়ড হয়নি। সিটি স্ক্যানে তাঁর তলপেটে ১৫ সেন্টিমিটার/২০ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার পাওয়া যায়।

চিকিৎসক সৌমেন দাস জানান, ‘‘পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর যোনি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি ‘ব্লাইন্ড এন্ডেড’, অর্থাৎ শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের তখন সন্দেহ হয়। রোগীর ‘কেরিওটাইপিং’ অর্থাৎ ক্রোমোজোম পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তাঁর শরীরের কম্বিনেশন হল ‘XY’ ক্রোমোজোম, যা পুরুষদের থাকে। নারীদের শরীরে থাকে XX ক্রোমোজোম।’’

চিকিৎসকেরা আরও জানান, ওই রোগীর তলপেটের টিউমারটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি আসলে অণ্ডকোষ। যা শরীরের বাইরের বদলে তাঁর শরীরের ভিতরে রয়েছে। এবং বায়োপ্সি করে টিউমারে ক্যানসার মেলে।

চিকিৎসক অনুপম দত্ত বলেন, পুরুষদের যে ক্যানসার হয়, এটি সেই ধরনের টেস্টিকিউলার ক্যানসার। একে চিকিৎসা পরিভাষায় সেমিনোমা বলা হয়। ওই রোগীর এখন ২১ দিন অন্তর কেমোথেরাপি চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ডাক্তার সৌমেন জানান, ওই রোগীর ‘টেস্টিকিউলার ফেমিনাইজেশন সিনড্রোম’ রয়েছে। তাঁর অণ্ডকোষ যেহেতু শরীরের ভিতরে ছিল এবং সুগঠিত ছিল না, তাই পুরুষ হরমোন ‘টেস্টোস্টেরন’ ঠিকভাবে ক্ষরণ হয়নি। বরং তাঁর দেহে মহিলা হরমোন তুলনামূলক বেশি ছিল। তাই বহিরঙ্গে তিনি একেবারে মহিলার মতো। [সূত্র: আনন্দবাজার]


সর্বশেষ সংবাদ