টাক মাথার পুরুষদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি

  © প্রতীকী ছবি

মাথায় টাক আছে এমন পুরুষদের নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে বেশি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস ওয়াম্বিয়ার। টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমরা সত্যিই ধারণা করছি যে, টাক হয়ে যাওয়া মারাত্মক রোগের নিখুঁত লক্ষণ।

টাক মাথার সঙ্গে করোনা শনাক্তের সংযোগটি এতই স্পষ্ট যে, গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যাতে একে করোনাভাইরাসের একটি ঝুঁকির কারণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর নাম তারা সুপারিশ করছেন 'গ্যাব্রিন সাইন'। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক চিকিৎসক ডাঃ ফ্রাঙ্ক গ্যাব্রিন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং তার মাথায় ছিল টাক। ডাঃ ফ্রাঙ্ক গ্যাব্রিনের নামানুসারেই টাক মাথার এই ঝুঁকি চিহ্নটির নাম 'গ্যাব্রিন সাইন' রাখার সুপারিশ করছেন গবেষকরা।   

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু হয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত নমুনা ও তথ্যে দেখা গেছে যে, করোনাভাইরাসে পুরুষদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

কয়েকদিন আগে যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, করোনা শনাক্ত  কর্মক্ষম বয়সী পুরুষদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ।

কিন্তু টাক মাথার সঙ্গে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকির বিষয়টা বিজ্ঞানীরা এতদিন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তারা মানুষের জীবনযাত্রা, ধূমপান এবং বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পার্থক্যের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এতদিন। 

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মতো অ্যান্ড্রোজেন বা লিঙ্গ নির্ধারক হরমোন থাকে। এই হরমোনগুলো শুধু চুল পড়ার ক্ষেত্রেই নয়, বরং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো বিষয়গুলোতেও প্রভাব রাখতে পারে।

এই ফলাফল থেকে তারা ধারণা করছেন, মাথায় টাক পড়া ঠেকাতে বা প্রস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় হরমোন নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো করোনা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে।  

অধ্যাপক ওয়াম্বিয়ার বলেন, আমরা ধারণা করছি অ্যান্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনগুলোর মাধ্যমে আমাদের কোষে ভাইরাস প্রবেশ করে।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক দলই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের এক অনকোলজিস্ট ম্যাথিউ রেটিগও একটি গবেষণা করছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস, সিয়াটেল এবং নিউইয়র্কের ২০০ জন প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে টাক ও প্রস্টেস্ট ক্যান্সার সারানোর ওষুধের প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন তিনি।    

এর পরপরই অধ্যাপক ওয়াম্বিয়ারের নেতৃত্বে স্পেনে দুইটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা গেছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে টাকমাথার পুরুষদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে করোনার সঙ্গে টাক মাথার সংযোগ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এনিয়ে আরও অনেক গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা।


সর্বশেষ সংবাদ