করোনায় দেবদূত ডা. কাজল, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল ২৬
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ১২:৪৪ PM , আপডেট: ১০ মে ২০২০, ১২:৪৪ PM
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল করোনা আইসোলেশন ইউনিটের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল। শুধু যে চিকিৎসা কাজেই তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা নয়, বরং তিনি এ ইউনিটে করোনা উপসর্গে ভর্তির পর কেউ মারা গেলে এলাকায় যেন জানাজা নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয় এ কারণে হাসপাতাল চত্বরেই করেছেন সেই জানাজার ব্যবস্থা। আর রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে আসা স্বজনরা যেন অনাহারি না থাকে সেই উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি।
নানা প্রতিবন্ধকতার পরও শুধু আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে করোনা আক্রান্ত ৭ রোগীসহ এ রোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি মোট ২৬ জনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন।
নিজে ডায়াবেটিক রোগী হয়েও করোনা ঝুঁকিতে থেকেও হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে ছুটিতে যাননি, বরং দেশের এই ক্রান্তিকালে যেন তার ইউনিটের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মনোবল না হারায়, এ কারণে তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে সঙ্গে নিয়ে তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তাদের কোয়ারেন্টাইনের সময় যেন সুবিধাজনক হয় এজন্য একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বেসরকারি আবাসিক হোটেলেরও বন্দোবস্ত করেছেন। আর তার কর্ম এলাকার বাইরেও করোনা সন্দিগ্ধ রোগী বা রোগীর স্বজনদের এখন ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন ডা. কাজল।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন ইউনিট ঘোষণার পর করোনায় আক্রান্ত বা সন্দিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানের জন্য তার উদ্যোগেই জেলায় প্রথম চালু হয় হটলাইন। সেই লাইনে ফোন দিয়েই বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাঁড়িদহে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে প্রতিবেশীদের কেউ এগিয়ে না গেলেও ডা. কাজলের প্রচেষ্টায় শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসক যান সেখানে। পরে সেই মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।
এরপর বগুড়ার মহাস্থানে করোনা উপসর্গ নিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা এক ব্যক্তিকে যখন কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন বিষয়টি জেনে তিনিই উদ্যোগী হয়ে সেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে শাহ আলম নামের ওই রোগী করোনা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে তারই অধীনে চিকিৎসা নেয়। পরে সুস্থ হয়ে রংপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে যান শাহ আলম।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূরুজ্জামান সঞ্চয় তার হাসপাতালের আরএমও ডা. কাজলকে একজন মানবিক গুণের চিকিৎসক উল্লেখ করে বলেন, নিজে উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিক রোগী হওয়ার পরও এই সময়ে ছুটির আবেদন করেননি। বরং তাকে ছুটিতে যেতে বলায় তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এ মুহূর্তে তিনি ছুটিতে গেলে অন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভেঙো যাবে। ফলে তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থেকেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আরএমও ডা. কাজল বলেন, দেশে এমন এক সময় চলছে যখন সকলে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবেলা করা প্রয়োজন। এ কারণে আমি আমার দায়িত্বটুকুই পালন করছি। অন্যরা এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বলেই চিকিৎসা কাজ সহজ হয়ে গেছে। হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি পরিবারের মতো হয়ে এ সংকট মোকাবেলায় কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।