করোনায় নকল ওষুধের দাপট, সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

  © ইন্টারনেট

করোনাভাইরাস চিকিৎসায় এখনো নিশ্চি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তকে কিছু ওষুধ কার্যকর হতে পারে বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কার্যকর দাবি করে কিছু নকল ওষুধের রমরমা ব্যবসা চলছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

আফ্রিকায় এমন ভুয়া ওষুধ বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এগুলো সেবনে ‘গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া’ দেখা দিতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মানুষ কিছু মৌলিক ওষুধ মজুদ করছে। এছাড়া ওষুধের সবচেয়ে বড় দুই রপ্তানিকারক চীন ও ভারত লকডাউনে থাকায় ওষুধের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে নকল ওষুধের রমরমা বাণিজ্য বাড়ছে।

 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই রোগের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতার বিষয়ে কথা বলেন। ফলে বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকারিতার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। এরপরেও ট্রাম্প ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধগুলো নিয়ে কথা বলেন।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা অব্যাহত থাকায় নকল ওষুধ ভয়ানক পরিণতি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নকল ওষুধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পল নিউটনও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পরের মাত্র সাত দিনে ৯০টি দেশে এর প্রমাণ মিলেছে। এক কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের ভেজাল ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য জব্দ করা হয়েছে। ১২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্টারপোলের বৈশ্বিক ফার্মাসিউটিক্যাল অপরাধ দমন ইউনিট।

ইন্টারপোলের মহাসচিব ইয়োরগেন স্টক বলেছেন, ‘সংকটের সময়ে এমন ভেজাল ওষুধের অবৈধ ব্যবসা জীবনের প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞার প্রমাণ।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধের ৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে।

সংস্থার ভেজাল পণ্য নিয়ে কাজ করা দলের সদস্য পেরনেট বোরদিলিয়ন স্টেভ বলেন, ‘এক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটে তা হল, যে রোগের জন্য ওষুধটি সেবন করা হচ্ছে, তা কোনো কাজে দিচ্ছে না। তবে সেগুলো দেহের ক্ষতি করবে। কারণ বিষাক্ত কিছু তাতে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’

বিশ্বে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের এক লাখ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। চীন ও ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ওষুধ রপ্তানি হয়। সে দৃষ্টিকোন থেকে ওষুধের চেয়ে অন্য কিছুর এত বিশ্বায়ন হয়নি বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা স্টেভ’র।

ভারতের কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বলেছে, তারা তাদের সক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উৎপাদন করছে। দেশটির কোম্পানিগুলো আফ্রিকায় মৌলিক ওষুধের ২০ শতাংশ যোগান দেয়। ফলে সেখানে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

জাম্বিয়ার ফার্মাসিস্ট ইফরাইম ফিরি বলেন, ওষুধের সরবরাহে টান পড়ার বিষয়টি অনুভব করতে পারছেন। ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং আমরা নতুন ওষুধ দিতে পারছি না। যোগান পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে গেছে। বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক ও ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধগুলো।’

ওষুধের কাঁচামালের দামও বেড়ে যাওয়ায় অনেক কোম্পানির জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।পাকিস্তানের এক উৎপাদক জানিয়েছেন, ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্লোরোকুইনের কাঁচামাল ১০০ থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৫০ ডলার।

এ অবস্থায় ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্টেভ বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ হওয়ায় মানহীন ও ভেজাল ওষুধ বাজারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে।


সর্বশেষ সংবাদ