পরিবার পরিকল্পনায় আওয়ামী সমর্থকদের পদায়নে ‘কোণঠাসা’ বৈষম্যবিরোধীরা, ক্ষোভ

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা  © সংগৃহীত

রাজনৈতিক পট পরির্বতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা। শুধু বহালই নয়, তাদের কেউ কেউ পাচ্ছেন পদোন্নতি। এ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হতে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনকারী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা। এ নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের পদোন্নতির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রজ্ঞাপন জারির ৪৫ দিন পর পদোন্নতি প্রাপ্তদের পদায়ন করা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিতরা বিষয়টি নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অসদাচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পদোন্নতি বঞ্চিতরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। শত শত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ম্লান করতে এ কর্মকর্তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। তেমনই একজন পরিবার পরিকল্পনার ডিজি সাইফুল্লাহিল আজম। বৈষম্যবিরোধী সমর্থক কেউ কেউ সহ্য হয় না তার।’

তিনি বলেন, ‘পদোন্নতি-পদায়নের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে কথা শুনতেই নারাজ তিনি। কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে উচ্চস্বরে তিনি বলেন ‘আমি আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত, এই অধিদপ্তরের ডিজি হয়েছি, পারলে কিছু করেন।’ এছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘কে থাকবে কে থাকবে না সেটা আমি সাইফুল্লাহ নির্ধারণ করবো, আমি এভাবেই চাকরি করেছি, পারলে কিছু করেন। আমার নামে অভিযোগ করে লাভ নাই, কাকে কি দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় আমি জানি, এখান থেকে আরো ভালো পোস্টিং নিতে পারি।’

বঞ্চিত আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘মহাপরিচালকের এ ধরনের বক্তব্য আমাদেরকে হতাশ করেছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অধিদপ্তরে পদায়নের ফলে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে; বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোন দায়িত্ব নেবে না।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল্লাহ হিল আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। নতুন করে বক্তব্য নিতে হলে সকাল ৯টার দিকে আমার অফিসে আসতে হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে মো: শহীদুল ইসলামকে। উপপরিচালক পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তার ‘ইশারা’ ছাড়া অধিদপ্তরের কোনো বদলি-পদায়ন হতো না। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামীপন্থী আরো তিনজন কর্মকর্তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার একান্ত ঘনিষ্ঠভাজন হিসেবে পরিচিত সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠকও করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে মো: শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই কর্মকর্তা আওয়ামী সরকারে সকল কার্যক্রম নিয়মিত ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রচার করতেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। অধিদপ্তরে পদায়ন করার বিষয়ে প্রতিবাদ করা হলে তাকে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে উপপরিচালক হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। 

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহীদুল ইসলাম। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘আমি বৈষম্যের শিকার। গত ১৬ বছর ধরে অধিদপ্তরে প্রবেশ করতে পারিনি। যারা এতদিন সুবিধা নিয়েছে তারাই আমার পেছনে লেগেছে।’ কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মচারী। নির্বাচনের আগে বিসিএসের সকল সংগঠনকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে আমরাও গিয়েছিলাম। এরপর তার সঙ্গে ছবি তুলেছি। আমরা নিজে থেকে কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে দেখা করতে যায়নি।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল প্ল্যান এফপি-এফএসডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনকে। তাকে এই পদে পদায়ন করার জন্য আরেকটি পদে দায়িত্বমুক্ত রেখে অপারেশনাল প্ল্যানে সংযুক্ত করা হয়। বিগত সরকারের সময় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আওয়ামীপন্থী যে কয়জন দাপুটে কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন। তিনি ২০১৪ সালে জনমতকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে জাকিয়া-রোকন-মেহবুব মোর্শেদ সমন্বয়ে বিনা ভোটের প্যানেল ঘোষণা করে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘ ৬ বছর পদোন্নতি না পেয়েও সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) এর দায়িত্ব পালনের সময় নিয়োগ-বদলি ও তদবির বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

নিয়োগ-বদলি ও তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাকে পদায়ন করা হয়েছে। পদোন্নতি-নিয়োগ-পদায়ন দেখে প্রশাসন শাখা। আমি ডিজির দপ্তরের সামান্য একজন সহকারী পরিচালক ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।'

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পার্সোনেল) পদে পদায়ন করা হয়েছে মেহবুব মোর্শেদকে। বর্তমান কারাবন্দি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের প্রভাব খাটিয়ে ২০০৮ সাল থেকে তিনি অধিদপ্তরের এমআইএস ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন। এ পদে থেকে টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে মেহবুব মোর্শেদের বিরুদ্ধে। চাকরিতে অসাধু কার্যক্রমের কারণে তাকে কুমিল্লায় উপপরিচালক পদে বদলি করা হয়। 

নরসিংদীর উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে শেখ শাহীদুজ্জামানকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি লিয়াকত শিকদার এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। আওয়ামী পরিচয়ে অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটে দীর্ঘ ৮ বছর কর্মরত ছিলেন। টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দায়ের হয়। তবে প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২০২২ সালে তৎকালীন উপপরিচালক (বৈদেশিক সংগ্রহ) জাকিয়া আখতার এর সাথে ট্যাব ক্রয়ের দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার কারণে তাকে অধিদপ্তর থেকে লালমনিরহাটে করা হয়। কিন্তু তাকে বর্তমান আদেশে ঢাকার পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের কোনো পদ পদবি ছিলেন না দাবি করে শহীদুজ্জামান দ্যা বলেন, ‘ঢাবিতে থাকাকালীন রাজনীতি না করার কারণে আমাকে মসজিদে ঘুমাতে হয়েছে। আমি কখনো কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাকে সব সময় দূরে বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি নরসিংদীতে বদলি করায় একটি মহল আমার পেছনে লেগেছে।’ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিয়াকত সিকদার আমাকে চিনত না। আমি কখনো তার লোক হিসেবে পরিচয় দেইনি। আর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের বাড়ি সাতক্ষীরা। আমার বাড়িও সাতক্ষীরা। তাই বলে আমি তার প্রভাব খাটাইনি।’

সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর জাকিয়া আক্তার ও গোলাম মোহাম্মদ আজমকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এই দুই কর্মকর্তা পদোন্নতি ব্যতিরেকে বিগত সরকারের সময় ধরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পরিচালকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘসময় চাকরি করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই দুই কর্মকর্তাকে পুনরায় অধিদপ্তরে সংযুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মাঠ পর্যায়ে উপপরিচালক-এর অনেক পদ শূন্য রয়েছে। এরপরও আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় বর্তমান মহাপরিচালক তাদের পদায়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

টেন্ডার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা অর্জনের দায়ে জাকিয়া আক্তারের দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে খাবার বড়ি সংকটের মূল 'হোতা'কে অধিদপ্তর থেকে দ্রুত অপসারণের দাবি উঠলেও মহাপরিচালক সেই দাবি কানে তুলছেন না বলে জানা গেছে। বিগত  সরকারে মন্ত্রী র.আ.ম. উবাইদুল মোক্তাদির চৌধুরীর ভাগনী পরিচয়ে গত ১৬ বছর অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিট, প্রশাসন ইউনিট, উপকরণ সরবরাহ ইউনিটে চাকরি করেছেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে জাকিয়া আক্তারকে ফোন দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরিবার পরিকল্পনার আরেক কর্মকর্তা খুরশিদ জাহান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন মর্মে খবর প্রকাশিত হলে তাকে মানিকগঞ্জে বদলি করা হয়। প্রাক্তন পরিচালক (প্রশাসন) খান মো: রেজাউল করিমের একনিষ্ঠ লোক হিসেবে অধিদপ্তরে দাপটের সাথে কাজ করেছেন এই কর্মকর্তা। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাসহ ২৬ ক্যাটাগরির কর্মচারী নিয়োগের ভাইবা বোর্ডে থেকে তৎকালীন পরিচালক প্রশাসনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই কর্মকর্তাকে পুনরায় অধিদপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে।

যদিও ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন খুরশীদ জাহান। তিনি জনান, 'আমি ইউকে থেকে মাস্টার্স করেছি। চাকরিজীবনে কখনো কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। যারা আমার নামে অভিযোগ করেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করুন। অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।'

কে এই মহাপরিচালক সাইফুল্লাহহিল আজম?
আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক কে. এম. মানোয়ারুল ইসলাম বিপুলের চাচাতো ভাই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল্লাহিল আজম। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার বাসিন্দা এই কর্মকর্তা নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সচিব কবির বিন আনোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার এবং সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার দাপট দেখিয়ে বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

মো: সাইফুল্লাহহিল আজম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের উইং প্রধান ছিলেন। এছাড়াও সেবা বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ‘ফিজিক্যাল ফেসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি)’ ওপির প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। একই সময় সেবা বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের উইং প্রধান, পিএফডি ওপির প্রকল্প পরিচালক  থাকা  অবস্থায় তিনি ‘এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড সম্প্রাসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের’ও প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। আওয়ামী সরকারের সময় সেবা বিভাগের উইং প্রধানসহ এই বিভাগের দুটি (২) উন্নয়ন প্রকল্পে মো: সাইফুল্লাহহিল আজমকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কর্মকর্তা সেবা বিভাগের অধীন সকল অপারেশনাল প্ল্যান হতে নিয়মিত গাড়ি ও আর্থিক সুবিধা নিতেন বলে জানা গেছে।

উন্নয়ন অনুবিভাগের উইং প্রধান থাকায় সেবা বিভাগের সকল অপারেশনাল প্ল্যান ও প্রকল্পের কেনাকাটায় তার একছত্র প্রভাব ছিলো। তার চাচাতো ভাই কে. এম. মানোয়ারুল ইসলাম বিপুল এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহেদ মালেকের ছেলের টেন্ডার বাণিজ্যে সহায়তা করতেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রকল্পে নিজের পছন্দমতো লোক বসানো, বদলি-পদায়ন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ র‍য়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাইফুল্লাহহিল আজমকে যাতে সেবা বিভাগ থেকে অন্যত্র বদলি করা না হয় সেজন্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দেন। সেবা বিভাগে দুর্নীতি ও মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে মো: সাইফুল্লাহহিল আজম প্রভাব খাটিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন নেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক ও উপপরিচালক পদে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পদায়ন করছেন। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে অধিদপ্তরের সকলের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'আমি মাত্র একমাস হলো যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।' 


সর্বশেষ সংবাদ