অসহনীয় লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ইবি শিক্ষার্থীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকদিন যাবত তীব্র গরম ও অসহনীয় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। প্রচন্ড গরমের সাথে অতিরিক্ত লোডশেডিং নাজেহাল করে তুলেছে শিক্ষার্থীদের। আবাসিক হলগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা তুলনামূলক কম হলেও অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে আশপাশের এলাকার লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা লোডশেডিং হলেও পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে সেটি ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি হলেও বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। তবে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। দেশব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই ঘাটতির কারণে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায়।
আরও পড়ুন: খুবির প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বে রেজাউল করিম
এছাড়াও সাড়ে ৩ মাস ধরে সামিট গ্রুপের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দৈনিক ১২০০ মেগাওয়াটের মতো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। আবার মাতারবাড়ী এবং এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন কমে গেছে কয়লা সংকটের কারণে। সবমিলিয়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে নাজেহাল অবস্থা।
লোডশেডিং নিয়ন্ত্রনে আনতে, বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৩২ মিনিটে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। ওই ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও, সেটি থেকে রাতে প্রাথমিকভাবে ৭০-৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী ইকবাল বলেন, হুট করে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মাত্রা বেড়ে গেছে। দেশে যখন হিট অ্যালার্ট চলছিল তখনো লোডশেডিং এতটা তীব্র হয়নি যতটা এখন হয়েছে। যদিও একেবারে যেয়ে আধাঘন্টার বেশি থাকে না কিন্তু ঘনঘন যাওয়া-আসা করে। এতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়। রাতে দিলেও দিনের বেলায় হলে জেনারেটর দেয় না। অনেক সময় দেখা যায় টিউশন করিয়ে রুমে এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। তখনকার অনুভূতি আসলে বলে বোঝাতে পারবো না।
আরও পড়ুন: ৮ লাখ টাকা বাকি খেয়ে লাপাত্তা ইবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
পার্শ্বস্থ শেখ-পাড়া ছাত্রীনিবাসের সাদিয়া শিপ্রা বলেন, এখানে লোডশেডিংয়ের খুবই বাজে অবস্থা। লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের থাকা খাওয়া ঘুম সবকিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। সারাদিনে ৬/৭ বার কারেন্ট যায়। দেখা যায় সকালে রাইসকুকারে ভাত বসানোর পর কারেন্ট চলে গেছে। ইন্ডাকশনে রান্না বসানোর পর মাঝপথে কারেন্ট চলে গেছে। এতে খাওয়া-দাওয়ার প্রচুর সমস্যা হয়। রাতে গভীর ঘুমে আছো না থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়, এতে প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ কাজ করে, ঠিকমতো ঘুম হয় না। আবার অনলাইন ক্লাসেও ঠিকমতো উপস্থিত হতে পারিনা। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
পার্শ্ববর্তী শান্তিডাঙ্গার বিএমএস ছাত্রাবাসের সৈকত বলেন, দিনরাত্রি মিলিয়ে মেসে ৭-৮ বার বিদ্যুৎ যায়। আর একবার গেলেই কমপক্ষে ১ ঘণ্টা থাকে। হুট করে একয়দিন যে গরম পড়ছে, এই অবস্থায় বিদ্যুৎহীন থাকা খুবই কষ্টকর। গতকাল ত ভোর ৬ টায় গিয়ে সকাল ১০ টার দিকে আসছে। রাতেও লোডশেডিং চলে সমানতালে। এতে একে তো রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঠিকমতো পড়াশোনাও করতে পারছি না। পানি তুলতে না পেরে মাঝেমধ্যেই মেসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। খালার রান্না করতে দেরি হয়, এতে খাওয়ার সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ-তে ভর্তি, আবেদনে বাকি ১ সপ্তাহ
এবিষয়ে ইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, লোডশেডিংয়ের জন্য আসলে আমরা দায়ী না, এটি জাতীয় সমস্যা। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় সারাদেশেই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তার ফলশ্রুতিতে আমাদের ক্যাম্পাসেও লোডশেডিংয়ের প্রভাব উপলব্ধি করা যাচ্ছে। চাহিদামতো জ্বালানি পাচ্ছি না বিধায় দীর্ঘসময় জেনারেটর সুবিধাও দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি না মিটলে ক্যাম্পাসে লোডশেডিংয়ের অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা নেই।