২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৮

পাটভিত্তিক উৎপাদন খাতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা চীনের

বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় পতাকা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা বিনিয়োগকারীরা বলে জানিয়েছেন এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দোংনিং। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের কল্পিত উৎপাদন খাত রূপান্তর উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। স্টেট গেস্ট হাউস যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

ইয়াং দোংনিং বলেন, এতদিন চীন বাংলাদেশে বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও এখন তারা উৎপাদনমুখী শিল্পে অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাদে স্থাপনযোগ্য সোলার প্যানেল এবং পাটভিত্তিক বৃহৎ শিল্প, বিশেষ করে জ্বালানি, জৈবসার ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদন। তিনি জানান, অতীতে অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নকারী এক্সিম ব্যাংকও এখন এসব উৎপাদন খাতে সরাসরি বিনিয়োগে আগ্রহী।

ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। তারা যৌথভাবে পাটভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহী। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করে সবুজ জ্বালানি, সার এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদন করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। তার মতে, পাটশিল্পে যৌথ বিনিয়োগের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সব ফি মওকুফ করল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুস চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন হাবে রূপান্তর করা সম্ভব। তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবাকেও চীনা বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করেন। ইউনুস বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনা শিল্পকারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় তরুণ শ্রমশক্তি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষ সুবিধা তৈরি করবে। বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যৌথ বিনিয়োগে পুনরায় চালু করা যেতে পারে বলেও প্রস্তাব করেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, আমরা এ আগ্রহকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি এবং দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

ইয়াং দোংনিং জানান, চীনা কোম্পানিগুলো এআই ও ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগের সুযোগও খতিয়ে দেখছে, যেখানে চীন ইতোমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, এ অঞ্চল সমুদ্রবন্দরসমৃদ্ধ এবং মিয়ানমার-থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের নিকটবর্তী হওয়ায় রপ্তানির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ চীন পর্যন্ত রেল সংযোগ নির্মাণে চীনা অবকাঠামো কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি আঞ্চলিক সংযোগের পাশাপাশি পুনর্বাসিত শিল্পকারখানার পণ্য রপ্তানিকে সহজ করবে।

বৈঠকের শুরুতে হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।