সংশোধিত শ্রম আইন অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন
বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে সরকার শ্রম আইনকে আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং শ্রমিক ও উদ্যোক্তাউভয় পক্ষের জন্য আরও ভারসাম্যপূর্ণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, সংশোধিত শ্রম আইন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কনভেনশনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। আইএলওর কমিটি অব এক্সপার্টসের সুপারিশ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রের মতামত এবং ত্রিপক্ষীয় কমিটির (শ্রমিক–মালিক–সরকার) আলোচনার ভিত্তিতেই এসব সংশোধন আনা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ‘টেডএক্স ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’ ২৫ অক্টোবর
নতুন আইনে গৃহকর্মী ও নাবিকদের শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, ফলে তারাও শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন। নন-প্রফিট সংস্থাগুলোকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। শ্রমিকদের ব্ল্যাকলিস্টিং প্রথা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা বৃদ্ধির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া একই কাজের জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বেতনে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার আরও সুসংহত করা হয়েছে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানায় বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াও আরও কার্যকর করা হয়েছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি শ্রমনীতি প্রণয়ন, যা শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখবে এবং একই সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশও বজায় রাখবে। এই সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক আস্থা ও ন্যায়ভিত্তিক শ্রম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা।’
সভায় আরও তিনটি অধ্যাদেশের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়- সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ ২০২৫।
আইন উপদেষ্টা জানান, ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন নিয়ে প্রায় ২৫–৩০ বছর ধরে আলোচনা চলছে। এবার সেটি বাস্তবায়নের পথে।’
প্রস্তাবিত আইনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ও শৃঙ্খলাবিষয়ক সব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব বাজেট ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হবে, যাতে তারা নিজস্ব উন্নয়ন ও সম্পদ ব্যবহারে স্বনির্ভর হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এতে কিছু আর্থিক দিক জড়িত থাকায় অর্থ উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন উপদেষ্টার মতামত নেওয়া হবে। পরবর্তী আলোচনার পর আইনটি আবার উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।’
একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইনও নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।