অফিসে না গিয়েও হাজিরা, ৬ মাসে অনুপস্থিত ৬৮ দিন, ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা
চলতি বছরের ৬ মাসে অনুপস্থিত ৬৮ দিন, অফিসে না গিয়েও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানজিদা ইসলাম জেসমিন। স্বাস্থ্যসেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের গর্ভবতী নারী ও নবজাতকদের। ঘটনাটি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের চিত্র।
জানা গেছে, গর্ভবতী নারী ও নবজাতকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের নিশ্চিত করে পরিবার পরিকল্পনা অফিস। স্বল্পমেয়াদি ও স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্যও সেবাগ্রহীতাদের পছন্দের স্থান উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। নিয়ম অনুযায়ী এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়েও কার্যক্রম পরিচালনার কথা। অথচ বাউফল উপজেলায় এই অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে জানেনই না স্থানীয় জনগণ।
মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম না চলার কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাই নিয়মিত অফিসে আসেন না। রেকর্ড অনুযায়ী গত ৬ মাসের বেশিরভাগ কর্মদিবসেই অনুপস্থিত রয়েছেন ডা. সানজিদা ইসলাম জেসমিন।তবে অফিসে না এসেই ভিডিও কলে দেন বায়োমেট্রিক হাজিরা।
আরও পড়ুন: উপজেলা হাসপাতাল রেখে সামনের ফার্মাসিতে চিকিৎসা, ভুল এন্টিবায়োটিকে হাত-পা হারালেন ৮ বছরের শিশু
২০২৪ সালের জুন মাসে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। দীর্ঘসময় অনুসন্ধানের পরে গোপন ক্যামেরায় ধরা পরে অনিয়মের চিত্র। অফিসে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা দিচ্ছেন ভিডিও বার্তায়। ঘটনাটি ডিসেম্বর মাসের ১১ ও ১২ তারিখের, এ সময় তিনি বাউফল উপজেলাতেই ছিলেন না ডা. সানজিদা। যথাক্রমে, প্রথমদিন বিকেলে ৪টা ৪৫ ও পরের দিন ৪টা ৪৭ মিনিটে ফিরোজ খান হাজিরা মেশিনের সামনে এসে ভিডিও কলে যুক্ত করে একজনের হাজিরা নিশ্চিত করেন। কিছু সময় ব্যবধানে নিজেও হাজিরা দেন। ভিডিওকলে ডা. সানজিদাই ছিলেন তার প্রমাণ মিলেছে হাজিরা তালিকায়।
চলতি বছরে ৩ ফেব্রুয়ারি, সরেজমিনে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হয়। তবে, তখন কেউ কথা বলেনি ক্যামেরায়। এরপরে ভিডিও কলে হাজিরা দেয়া বন্ধ করেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা। এই সময়ের হাজিরা তালিকা সংগ্রহ করলে দেখা যায়, বড় পরিবর্তন।
ডা. সানজিদা ইসলাম জেসমিন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুপস্থিত ৮ দিন, দেরিতে অফিসে আসেন ৯ দিন। মার্চ মাসে অনুপস্থিত ৭ দিন, লেট ৫ দিন। এপ্রিল মাসে অনুপস্থিত ১৭ দিন, যথাসময়ে উপস্থিত হননি ৪ দিন, যথাসময়ে অফিস করেছেন মাত্র ১ দিন।
মে মাসে অনুপস্থিত ১৪ দিন, লেট করেন ৬ দিন, যথাসময়ে অফিস করেছেন মাত্র ১ দিন। জুন মাসে অনুপস্থিত ১৭ দিন, লেট করে আসেন ৪ দিন, যথাসময়ে অফিস করেছেন মাত্র ১ দিন। আর জুলাই মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত অনুপস্থিত ৫ দিন, লেট করে আসেন ৫ দিন, সময়মতো আসেননি একদিনও। এদিকে, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে বছরে ২০দিন প্রাপ্য ছুটি পাবেন বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে, ১৪ জুলাই দুপুর ১টায় ডা. সানজিদা ইসলাম জেসমিনের অফিস গেলে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। সংবাদ কর্মীদের আসার খবর পেয়ে ২টা ৩০ মিনিটে অফিসে পৌঁছান অভিযুক্ত সানজিদা। তবে কোনোভাবেই ক্যামেরায় কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। গর্ভবতী নারীদের সেবা, নবজাতকের সেবা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম কিংবা জনসম্পৃক্ততা কিছুই নেই। তবুও বাজেট ব্যবহৃত হচ্ছে পুরোদমে। প্রতিমাসে মাঠ ভিজিট দেখিয়েও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সানজিদা ইসলাম জেসমিন। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয় কথা বললে কিংবা বিরোধিতা করলেই স্টাফদের গালাগাল দেওয়াসহ শোকজ করে থাকেন অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, একটি তদন্ত হয়েছে। আরেকটি টিম সরেজমিনে তদন্ত করবেন। বায়োমেট্রিক হাজিরার জালিয়াতি ভয়াবহ অপরাধ।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) সাজেদুর রহমান বলেন, হাজিরা টেম্পারিং, অসদাচরণ, অনুপস্থিত থাকাসহ সব বিষয় তদন্ত হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সানজিদা ইসলাম জেসমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।