ফেরত নেওয়ার যোগ্য ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সনাক্ত করল মিয়ানমার
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৮ PM , আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৪ PM

অবশেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। ফেরত নেওয়ার যোগ্য ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সনাক্ত করেছে মিয়ানমার জান্তা সরকার।
আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শ্য এই সম্মতির কথা জানান। বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয়টি ধাপে যে তালিকা মিয়ানমারকে সরবরাহ করেছিল, সেই তালিকা থেকে ফেরত নেওয়ার যোগ্য ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সনাক্ত করেছে। এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার ছবি ও নামের অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই শেষে তাদের চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মূল তালিকায় থাকা বাকি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই কার্যক্রমও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
সভায় বাংলাদেশের উচ্চ প্রতিনিধি মিয়ানমারে সম্প্রতি সংঘটিত ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বলেন, দুর্যোগকবলিত জনগণের জন্য বাংলাদেশ অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত।
প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে ২০১৭ সালে মানবিক দিক বিবেচনা করে মিয়ানমার থেকে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ধারণা ছিল, পরিস্থিতি শান্ত হলে এক পর্যায়ে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই মানবিকতা বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরবর্তী সময়ে। গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে নানা সময়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা এখন ১২ লাখের বেশি। এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আগামী দিনে এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুরু থেকেই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তিও করেছিল। তবে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এতে বাংলাদেশের ওপর সেই বোঝা শুধু বেড়েছেই।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন করে আশার আলো জ্বালান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি ছুটে যান কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। দিনভর সেখানে কাটান। সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ছিলেন। তারা এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে ইফতারও করেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নতুন প্রত্যাশার কথা জানান। রোহিঙ্গাদের পক্ষে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন।
একই অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নতুন আশার কথা শোনান। তিনি জানান, বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আশা করছেন, আগামী রোজার ঈদ রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে করতে পারবেন। তাদের এই বক্তব্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। সেই আশা আরও জোরালো করল মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নতুন আশ্বাস।
এদিকে একই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রিত ৮ লাখ রোহিঙ্গাদের তালিকা থেকে দেশটিতে ফেরত যোগ্য ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্তের বিষয়টি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে চূড়ান্ত যাচাইয়ের জন্য তাদের ছবি ও নামের অতিরিক্ত তদন্ত চলমান রয়েছে। ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সামিট ছাড়াও মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শেউ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানকে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার পেজে দেয়া পোস্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘদিনের সমাধানে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। মূল তালিকার বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে যাচাইবাছাই করে দ্রুত ফেরত নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার।