০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৩

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরাতে ও মনোযোগী করতে যত চ্যালেঞ্জ

পাঠদানের দৃশ্য  © ফাইল ফটো

দীর্ঘদিনের নানা ইস্যুতে পড়াশোনা থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আযহার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর থেকে প্রায় তিন মাস বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষায় ফেরাতে ও মনোযোগী করতে মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ।

এদিকে, অভিভাবকদের তীব্র প্রতিবাদে ১ সেপ্টেম্বর নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর আগে ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল নতুন শিক্ষাক্রমের। ওই বছর তিন শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর আরও নতুন চার শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন চলছে। এ শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়নে নানা অসংগতি ও অভিভাবক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

তাই এই শিক্ষাবর্ষের নয় মাসের মাথায় এসে ওই কারিকুলাম বাস্তবায়ন বন্ধ করে ডিসেম্বরে আগের নিয়মে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক কোটি শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নযোগ্য না হলেও পাঠ্যবই চলতি বছরের জন্য বহালই থাকবে। ফলে নতুন শিক্ষাক্রমের বই থেকেই কী উপায়ে পুরোনো স্টাইলে বার্ষিক পরীক্ষা হবে, তা বের করতে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং অতীতে আরও দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এর আগে সম্প্রতি সচিবালয়ে ছাত্রদের অবরোধ ও দাবির মুখে অসমাপ্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভিন্নভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়। তবে ছাত্রদের অবরোধ ও দাবির মুখে পরীক্ষা বাতিল নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় এই সরকারকে।

জানতে চাইলে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের ক্লাস আমরা শুরু করছি বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রথম কিছুদিন একটু উপস্থিতি কম ছিল কিন্তু এখন উপস্থিতি ভালো। এছাড়াও ১০ তারিখ থেকে বিভিন্ন ইয়ারের নিবার্চনী এবং ইনকোর্স পরীক্ষা শুরু হবে। আমাদের হলগুলোতেও প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী  উঠে গেছে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে। ছাত্র আন্দোলন পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা কষ্ট ছিল। আমাদের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করছে। আমরা বলতে পারি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। 

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশৃঙ্খলার কারণ যখন যে সরকার এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তারা রাজনীতিক কাজে তারা ব্যবহার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও জনসাধারণের কাছ থেকে শিক্ষানীতি নিয়ে মতামত নেয়া প্রকাশ করা জরুরি। এখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের কাছে দাবি দিতে হবে এবং নিজেরকেও সতর্ক হতে হবে। নিজেদের ভিতরেও যেহেতু সুযোগ আছে আইনকানুন অনুযায়ী সেটুকু তারা করবে।

তিনি বলেন, আমরা আহ্বান করতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকসহ সরকারকে রাজনীতিক উন্নত মানসিকতা ও উন্নত চেতনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোর দিকে যাওয়ার জন্য যে শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার সেগুলো এখন নেই। যেটুকু আছে সেটুকু কারণেই এখনও টিকে আছে। 

আরও পড়ুন: সিন্ডিকেটের অনুমোদনে শুরু হবে ঢাবির শিক্ষা কার্যক্রম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. শাহনওয়াজ খান চন্দন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেটা হচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রশাসন নেই। একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে গেলে তো প্রশাসনিক সহায়তা দরকার। বিভিন্ন ধরনের নিদের্শনা প্রদান, বিভিন্ন ধরনের মিটিংগুলো হওয়া।

 

তিনি বলেন, মিটিংগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে। এছাড়াও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু হলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু চলমান নেই। এটার কারণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের দাবি নিয়ে আসছেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক কিন্তু দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে তো একটা প্রশাসনিক কাঠামো চলমান থাকতে হবে। সেটাই দেখছি আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। আমি মনে করছি শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নিবার্চন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ। 

আন্দোলন পরবর্তী শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকোলজিক্যাল ট্রমা নিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই ধরনের শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রথমত, যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারা পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ধারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা যখন ক্লাসে ফিরছে তারা ভীষণভাবে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল আমরা দেখেছি।

আরও পড়ুন: রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে ঢাবি অধ্যাপকের নতুন প্রস্তাব 

দ্বিতীয়ত, যে-সব শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সমমনা দলগুলো সঙ্গে জড়িত ছিল বা তাদের পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত তারাও কিন্তু ক্লাসে আসছে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে। পুরোপুরিভাবে যদি শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা দেখা হয় এটা খুবই ভঙ্গুর। 

এই মানসিক অবস্থা কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল এবং কলেজেও শিক্ষক কাউন্সিল সাপোর্ট  দেয়া জরুরি বলে মনে করেন এই শিক্ষক।

ঢাবির মূল চ্যালেঞ্জ ক্লাস শুরু 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য সময় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ। গতকাল রবিবার (৮ সেপ্টেম্বরে) সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হল প্রভোস্টদের এক মিটিংয়ে এমন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আসে। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত চালু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্ট, বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং অফিস প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ক্লাস শুরুর বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এসে ক্লাস শুরু করা। আমরা আশা করছি সিন্ডিকেট সভা ডেকে শিগগির ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। ক্যাম্পাসে ফিরে তারা যেন সুস্থভাবে আগের অবস্থায় ফিরতে পারে, প্রয়োজনে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।