যেসব কারণে ব্যতিক্রম উদ্ভাস
বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজের ভর্তিযুদ্ধে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে এখন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের আস্থার নাম উদ্ভাস-উন্মেষ। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধেই সেরাদের তালিকায় শীর্ষে ছিল এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য রয়েছে অষ্টম শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়ও।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগই এগিয়ে রেখেছে উদ্ভাস-উন্মেষকে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে মূলত একটি লার্নিং সেন্টার বা শিখন মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে।
উদ্ভাসের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ জানান, ‘কোচিং সেন্টারগুলো সাধারণত শর্ট নোট এবং সাজেশন প্রদান করে। আমাদের কাছেও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শর্ট নোট ও সাজেশন চাইতো। কিন্তু উদ্ভাসে এগুলো কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। আমাদের প্রধান চাওয়া শিক্ষার্থীরা যা পড়ছে তা যেন বুঝতে পারে। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করাকে আমরা সবসময় নিরুৎসাহিত করি। আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াই, সঠিকভাবে জানা ও বোঝার জন্য উৎসাহ দেই।’
এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, ‘আমরা নোট বা সাজেশন দেই না সত্যি, কিন্তু আমরা প্রচুর মডেল টেস্ট নেই এবং খাতা ফেরত দেবার সময় সেখানে আমাদের ফিডব্যাক লিখে দেই। কোচিং এবং লার্নিং এর মধ্যে বিশাল একটি পার্থক্য রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষই ধরতে পারেন না। লার্নিং বা শেখা মানুষের মধ্যে যোগ্যতা সৃষ্টি করে। “উদ্ভাস-উন্মেষ” একটি লার্নিং সেন্টার। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণ এক নীতি থেকে- যাই শিখো না কেন, বুঝতে হবে। মুখস্থ করার আগে বুঝতে শেখো। আমরা আমাদের সকল একাডেমিক কার্যক্রমে এই নীতিটি মেনে চলেছি।’
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে উদ্ভাসের আরেকটি বড় পার্থক্য উদ্ভাস-উন্মেষের সারাদেশের সকল শাখায় একই শিক্ষকরা পাঠদান করেন এবং একই প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয়ভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষা প্রদানে সীমাবদ্ধ থাকে না। শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষাও প্রদান করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশের উদ্দেশ্যে নিজস্ব ডিবেট ক্লাবসহ, বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে এক্সট্রা কারিকুলামে যুক্ত হতে সহায়তা করে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির ‘নিরন্তর’ নামে একটি নিজস্ব এডুকেশনাল ম্যাগাজিনও রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেলোশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন সুইজারল্যান্ডে
এসকল কার্যক্রম ছাড়াও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে উদ্ভাস-উন্মেষের রয়েছে নিজস্ব বৃত্তির ব্যবস্থাও। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আবেদন করে শিক্ষার্থীরা এই সহযোগিতা পেয়ে থাকেন এবং সহযোগিতা গ্রহণের সময় তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয় যে- তারা যখন সক্ষম হবেন কমপক্ষে সমপরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে সহযোগিতা করবেন।
উদ্ভাস-উন্মেষের লক্ষ্য এবং সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যা পড়ছে তাতে আরও ভালো করা, তাদের পাঠ ভালোভাবে বোঝা এবং তারপর যোগ্য ও উন্নত মানুষ হিসেবে গড়তে সহায়তা করা আমাদের অঙ্গীকার। উদ্ভাসের লোগোতে আগুনের চারটি শিখা রয়েছে যা আমাদের অঙ্গীকারকে প্রকাশ করে। এই শিখাগুলো শিক্ষার প্রধান চারটি উদ্দেশ্যের সমার্থক। আমরা বিশ্বাস করি- শিক্ষা এমন পরিশোধিত মানুষ তৈরীতে ভূমিকা রাখে যে সূক্ষ্ম চিন্তা করতে পারে; যার মধ্যে অধ্যবসায়ের প্রত্যয় এবং সর্বোপরি নৈতিকতা তৈরী হয়।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে উদ্ভাস-উন্মেষের ৬৮ টি শাখা এবং ২১ টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০২১ বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ১০ এ ১০ জনসহ ১ হাজার ২৭৫ আসনের মধ্যে উদ্ভাস থেকে চান্স পেয়েছে মোট ১ হাজার ২৪১ জন। একই বছর মেডিকেল জাতীয় মেধায় উম্মেষ থেকে প্রথম ১০ এ ১০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ১৯৬ জনসহ মোট মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে ৩ হাজার ৩৫৯ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ঢাবি 'ক' ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ১০ এ ১০ জনসহ ১ হাজার ৮৫১ আসনের মধ্যে উদ্ভাস থেকে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি।