ক্রিকেটের বিস্ময় গবেষক ও বিজ্ঞানী অনুরাধা!
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১১:০১ AM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১১:০১ AM
অনুরাধা দোড্ডাবাল্লাপুর। পেশায় গবেষক। আবার জার্মানির নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়কও তিনি। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভাগ বসিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা-রশিদ খানের রেকর্ডে। ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার চলা ও জীবন নিয়ে কথা বলেছেন।
অনুরাধা দোড্ডাবাল্লাপুর বলেন, ভারতে বড় হয়েছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। আমার বড় ভাই, দুই কাজিনসহ আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম। তাই পাড়ায়, পার্কে অনেক ক্রিকেট খেলতাম। আর ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে বড় হওয়া মানে হলো আপনি খেলাটি টিভিতে দেখছেন। আমার আগ্রহ তাই সবসময়ই ছিল। তবে ১২ বছর বয়সে আমি স্কুলের এক বন্ধুর মাধ্যমে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেয়াও শুরু করি। সে তখনই ব্যাঙ্গালোরে রাজ্য ক্রিকেট খেলতো। এভাবেই আমি পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত হই। এরপর থেকে প্রায় বিশ বছর পেরিয়েছে।
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি সিরিজে একটি রেকর্ড গড়েন তিনি৷ নাম লেখান লাসিথ মালিঙ্গা-রশিদ খানদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, আমাদের জন্য খুব ভালো একটা সিরিজ ছিল। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আমরা ৫-০ তে সিরিজ জিতেছি। আসলে মহামারির কারণে পাঁচ-ছয় মাস খেলা বন্ধ ছিল। তাই সবাই ক্রিকেট খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। এই সিরিজে আমরা বেশ ক'টি রেকর্ড গড়েছি। আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা তাদের সেরাটা খেলেছেন। আমি আশা করি তারা শিগগিরই এই রেকর্ডও ভাঙবেন। আমাদের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এমা একটি ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, যেটা জার্মানির প্রথম। জার্মানির প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন আনা।
অধিনায়কত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, অসাধারণ৷ আসলে এমন একটি চমৎকার দলের অধিনায়কত্ব কোনো জটিল কাজ না। আমি যদি অধিনায়ক না-ও হতাম, তারপরও এতটাই উপভোগ করতাম, যতটা এখন করছি। তবে বাড়তি দায়িত্ব তো অবশ্যই। আপনি ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়দের কেমন করে মাঠ ও মাঠের বাইরে সহযোগিতা করতে পারেন তা ভাবছেন, আপনার অভিজ্ঞতা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, তারাও খুব ভালোভাবে আপনাকে নিচ্ছে। সবমিলিয়ে ভালোই লাগছে।
নিজের গবেষণা ও পড়াশোনা নিয়ে অনুরাধা দোড্ডাবাল্লাপুর বলেন, আমি একজন বায়োমেডিকেল সায়েন্টিস্ট। ২০০৮ সালে মাস্টার্স করতে ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে আসি। ভারতে প্রায় এক দশক কর্ণাটক রাজ্যের হয়ে খেলেছি, অনূর্ধ ১৬, অনূর্ধ ১৯ ও মূল দলে। ক্রিকেট সবসময়ই আমার জীবনের অংশ ছিল। ইংল্যান্ডে কাউন্টিতে খেলেছি দুই মৌসুম। একটি স্থানীয় ক্লাবে খেলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট খেলেছি। ২০১১ সালে পিএইচডি করতে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে আসি। ২০১৫ সালে তা শেষ করি। এ সময় আমি দেখলাম যে, এখানে মেয়েদের জাতীয় দল আছে, কয়েকটি ক্লাব আছে, ২০১৩ সালের কথা বলছি। ফ্রাঙ্কফুর্টে অবশ্য মেয়েদের কোনো ক্লাব ছিল না। তাই ছেলেদের সঙ্গে খেলেছি। সে বছরই আমি এখানকার জাতীয় দলে সুযোগ পাই। সাত বছর হলো আমি দলের সঙ্গে আছি।
নিজে একজন বিজ্ঞানী। এছাড়া নানা পেশায় যুক্ত মেয়েদের নিয়ে দল গড়া কতটা কঠিন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই খেলাটা খেলি, কারণ, আমরা একে ভালবাসি। দিনশেষে ছয় থেকে আট ঘণ্টার ট্রেনিং বা ম্যাচ খেলা, পুরোটা সময় আমরা উপভোগ করতে চাই। সবারই এমন মানসিকতা। আমরা খেলোয়াড় হিসেবে আরো ভালো করতে চাই। তবে এটাও ঠিক, আমাদের অন্য পেশা বা কাজ রয়েছে। কেউ কেউ পরিবারের দেখাশুনাও করেন।
তিনি আরো বলেন, আমি একজন পোস্টডক্টরাল সায়েন্টিস্ট হিসেবে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটে নিয়োজিত আছি। এটি ফ্রাঙ্কফুর্টের উত্তরে বাড নাউহাইমে অবস্থিত। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেখানে আছি আমি। আমাদের গ্রুপটি শরীরের রক্তনালীর বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। আমাদের গ্রুপে ৯-১০ জন আছেন। আমাদের গ্রুপ লিডারের ভাস্কুলার বায়োলজিতে বেশ নাম রয়েছে। তিনি পেশায় একজন কার্ডিওলজিস্ট। তিনি থাকায় গবেষণা ও প্র্যাকটিসের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।
অনুরাধা দোড্ডাবাল্লাপুর বলেন, ক্রিকেটে যেমন অনেক বছরের সাধনার পর আপনি এর ফল দেখতে পান, গবেষণার কাজও তেমন। আপনি এক-দুই বছর ধরে কোনো বিষয় নিয়ে লেগে আছেন, সেখানেও ফলাফল আসতে পারে, না-ও আসতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি এর থেকে কী শেখেন। যা ভালো কাজ করেনি তা ভুলে যেতে চাইবেন, যা ভালো কাজ করেছে তার জন্য গর্ব করবেন। টিমওয়ার্ক। আমরা গ্রুপে কাজ করি। আর আমি নিশ্চিত নই একক কোনো খেলায় এতটা আগ্রহ থাকতো কিনা আমার।