গণিতে ফেল করা সেই ছাত্রই এখন অস্ট্রেলিয়ায় সেরা শিক্ষক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৭ AM , আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২০, ১১:৪৬ AM
বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। অথচ নবম শ্রেণির গণিত পরীক্ষায় কিনা অকৃতকার্য হয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। স্বাভাবিকভাবেই কড়া বকুনি জুটল কপালে। সেদিনই জেদ চেপে গেল তাঁর, শুরু করলেন দ্বিগুণ উৎসাহে পড়াশোনা। পরে গণিতে শুধু যে ভালো নম্বরই পাননি, ঢাকা বাের্ডে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের তালিকায় শুরুর দিকেই ছিলেন মোয়াজ্জেম।
গণিতে ফেল করার পর বাবার সেই বকুনিই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাঁর। মোয়াজ্জেম হোসেন এখন অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষক। সেরা শিক্ষকের খেতাব অর্জন করেছেন একাধিকবার। অস্ট্রেলিয়ার মারডক ইউনিভার্সিটির সাসটেইনেবল অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের সহযোগী অধ্যাপক তিনি।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেখান এতটা পথ পাড়ি দেওয়া সহজ হিল না মোয়াজ্জেম হোসেনের। এসএসসিতে ভালো ফল করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এইচএসসি পরীক্ষায় ছিলেন মেধাতালিকায় ১৬তম। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগে প্রথম শ্রেণি পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে পিএইচডি করেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়োর (বুয়েট) হিসাবরক্ষণ ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন তিনি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি মোয়াজ্জেম পেশাদার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ), সার্টিফায়েড প্র্যাকটিসিং অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিপিএ) এবং সার্টিফায়েড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট। গবেষণায় অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে পান রিসার্চ এক্সিলে্স অ্যাওয়ার্ড। আর এবার পেয়েছেন পিভিসি অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং-২০২০।
এখন শুরুর সেই গণিতভীতি এখনো আছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখন আর নেই। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। আমি এ কথাই ছাত্র-হাত্রীদের বলি।’
শিক্ষকতার ধরন ও কর্মস্থলের উপযোগী পাঠদানের জন্য ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মারভক বিজনেস স্কুলের সেরা শিক্ষক হন তিনি। এই সাফল্যের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে মোয়াজ্জেমের ভাষ্য, ‘প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্র্যাকটিস।’ পাঠ্যবইয়ের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তত করার চেষ্টা চালান তিনি, যেন তাঁরা শিক্ষাটা জীবনে কাজে লাগাতে পারেন।
ছাত্র-হাত্রীদের প্রিয় হয়ে উঠার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘হাত্র-ছাত্রীরা সম্ভবত কৌশলের কারণে, প্যাডলেটের বা পড়ানোর সফটওয়্যার ব্যবহার কিংবা কর্মজীবনের জন্য শিক্ষার ধারণার জন্য হয়তো আলাদা করেছে আমাকে।’ তবে শিক্ষক সত্তাকেই সবচেয়ে বড় অর্জন মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক মানুষের জীবন বদলে দিতে পারেন। আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে পারছি, এটাই বড় প্রাপ্তি। আমার ক্লাসে অন্তত ৫৭ জাতিসত্তর শিক্ষার্থী আছে। তাদের নানান দক্ষতার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করি। আমি ওদের জন্য কিছু করতে পারছি, এটাই অর্জন।’
মােয়াজ্জেম হােসেন বলেন, ‘আমার কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীরা শেষ ক্লাস উদযাপন করে। অনেকে ফুল নিয়ে আসে, কেউবা পিৎজা।’ অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার কথাও শোনালেন তিনি। ‘একবার এক ছাত্র ই-মেইল করে বলল, আমি তার জীবন বদলে দিয়েছি। এমন অনেক ঘটনা শিক্ষক জীবনকে বর্ণিল করেছে।’
মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সম্প্রতি পাওয়া পিডিসি অ্যাওয়ার্ড পরবর্তী অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর ইউনিভার্সিটি টিচিং (এএইউটি) প্রতিযােগিতায় তাঁকে এগিয়ে রাখবে। এএইউটি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার।