বোর্ড পরীক্ষার বিকল্প কী— জানালেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের বোর্ড পরীক্ষা দিতে চান না পরীক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে রোববার প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর এক স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিকে ‘১৪ লাখ শিক্ষার্থীর পক্ষে’ লেখা দাবি করে সেখানে বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থী ও এই মহামারীর গতিবিধির সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা না পিছিয়ে দ্রুততম সময়ে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
বোর্ড পরীক্ষার বিকল্প কী— জানতে চাইলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দুটি বিকল্প প্রস্তাবের কথা জানান। প্রথমত-জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির গ্রেড প্রদান। দ্বিতীয়ত-অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া। তবে গ্রেড প্রদান করাটাই ‘বেটার অপশন’ বলে মনে করছেন তারা।
দেখুন: বোর্ড পরীক্ষা দিতে চান না এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পারিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে করে পরীক্ষা প্রস্তুতির যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই স্বল্প সময়ের নােটিশে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না। তাছাড়া মহামারি এই ভাইরাস কতদিন থাকবে, কবে ভ্যাকসিন আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়াও শীতে বাড়বে বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সর্তক করেছেন। তাই পরীক্ষা অরা না পিছিয়ে দ্রুততম সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে তারা।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী অর্নব সাহা বলেন, আমরা ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি আছি। আর কতদিন অপেক্ষা করবো। মহামারি এই ভাইরাস কতদিন থাকবে, কবে ভ্যাকসিন আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়াও শীতে বাড়বে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন। তাই পরীক্ষা অরা না পিছিয়ে দ্রুততম সময়ে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আবেদন।
বোর্ড পরীক্ষা ছাড়া কি বিকল্প হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির গ্রেড দিয়ে দেয়া। আরেকটি হতে পারে অনলাইন পরীক্ষা। তবে গ্রেড দিয়ে দেয়াটাই বেটার অপশন বলে মন্তব্য করে বলেন, গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায়তে ইন্টারনেট দুর্বল। আবার অনেকের কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে নেই। তাই অনলাইন পরীক্ষাটি ততটা কার্যকর হবে না।
হৃদয় হক নামে আরেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, করোনায় এই পরীক্ষার আয়োজন করা হলে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এতে কেউ যদি মারা যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? তাই আমাদের মৃত্যুফাঁদে ঠেলে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে পরীক্ষার বিকল্প কিছু করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বোর্ড পরীক্ষার জিপিএর ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করতে পারে। শিক্ষাবোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের প্রস্তাব প্রাঠানো হয়েছে। তাই এটা ছাড়া আপাতত আর কোন বিকল্প পদ্ধতি দেখছি না।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিতে বলা হয়, “মহামারীর এই সময়ে বহু শিক্ষার্থী ভয়াবহ আর্থিক, পারিবারিক, ও একাডেমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বহু শিক্ষার্থীকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে, আর বহু শিক্ষার্থী অভিভাবক হারিয়েছে। তার উপর দীর্ঘকালীন বন্যায় বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, পড়াশােনার প্রস্তুতির যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই স্বল্প সময়ের নােটিশে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না। এর মধ্যে পুনরায় তাদেরকে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষায় বসানের পরিকল্পনা বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে। ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ভবিষ্যত ও তাদের মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্যকে অকল্পনীয় ঝুঁকিতে ফেলবে।”
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, “পরীক্ষার হলের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণসহ মহামারী মেকাবেলার অন্যান্য প্রকল্প এই বিশাল আয়োজনে কতটুকু বাস্তবসম্মত, স্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শমাফিক কিনা কিংবা পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার দায়ভার আদৌ কে নেবে কিনা তা কোনভাবেই দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। এই সুযােগ নিয়ে কিছু অসাধু মিডিয়া কর্মীরা ভুয়া তথ্য ও গুজব রটিয়ে দেশের মন্ত্রণালয়ের সুনাম নষ্ট ও পরীক্ষার্থীদেরকে মানসিক ভাবে অস্থিতিশীল করে তুলছে।”
“এমতাবস্থায়, সমস্ত পরীক্ষার্থী ও এই মহামারীর গতিবিধির সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা আর না পিছিয়ে দ্রুততম সময়ে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবিষ্যত রক্ষা করতে ও জাতির সন্তানদের এই মৃত্যুফাঁদে ঠেলে না দেয়ার অনুরোধ রইলাে।”—স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়।