শাশুড়ির প্রেরণায় ৩২ বছর বয়সে মাধ্যমিক পাস করলেন অমৃতা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২০, ০৮:৫২ AM , আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০, ০৮:৫২ AM
ঘরে টিমটিম করে জ্বলছে একটি বাল্ব। রাত জেগে পড়ছেন বৌমা। পাশে বসে শাশুড়ি। রোজ রাতে এটাই ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পান্ডুয়ার তালবোনা কলোনির অমৃতা সানার ঘরের ছবি। ৩২ বছরে পৌঁছে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন বৌমা অমৃতা। পেয়েছেন ৩৭৬ নম্বর।
এতে চওড়া হাসি শাশুড়ি দুর্গারানি সানার মুখে। বললেন, ‘বৌমা পড়তে চাইলে আরও পড়াব।’ আর বৌমা বলছেন, ‘শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় সফল হলাম। আরও বেশি নম্বর পাব উচ্চ মাধ্যমিকে।’
পারিবারিক অনটনে পূর্ণচ্ছেদ পড়েছিল অমৃতার পড়াশোনায়। কিন্তু মন থেকে তা মেনে নিতে পারেননি তিনি। বিয়ের পরে ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়েছিল। ঘরের কাজ সামলে রাত জেগে পড়েছেন। পান্ডুয়া ব্লকের তালবোনা কলোনিতে অমৃতার শ্বশুরবাড়ি। টিন ও বাঁশের বেড়ার দেওয়াল। মাথায় টিনের ছাউনি। অভাবের সংসার।
অমৃতা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হয়নি।’ পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের গোয়ারা গ্রামে জন্ম তাঁর। সংসারে অভাব থাকায় বাবা-মা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির মামাবাড়িতে। তিনি বলেন, ‘মামাবাড়িতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। তার পর পান্ডুয়া ফিরে আসি। অভাবের কারণে আর পড়া হয়নি।’
২১ বছর বসয়সেই অমৃতার বিয়ে হয়ে যায় তালবোনা কলোনির প্রবীর সানার সঙ্গে। স্বামী গাড়িচালক। শ্বশুর রমেন্দ্র সানার কিছু চাষের জমি রয়েছে। অমৃতা বলেন, ‘বিয়ের পরে ফের পড়ার ইচ্ছা জাগে। ভর্তি হই ভিটাসিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। রাতে আমি যখন পড়তাম, তখন জেগে থাকতেন শাশুড়ি। পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহ দিতেন। পড়াশোনার সব খরচই জুগিয়েছে শ্বশুরবাড়ি।’
উচ্চ মাধ্যমিকে আরও বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করতে চান অমৃতা। তাঁর শাশুড়ি বলেন, ‘আমাদের একটাই ছেলে। মেয়ে নেই। বৌমাই আমাদের মেয়ে। ছেলে তো সংসারের চাপে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি। বৌমা নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক পাশ করেছে। এটাই আমাদের কাছে আনন্দের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘ভোরে উঠে পড়তে বসত বৌমা। সকাল ৯টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঘরের কাজে হাত দিত। তারপর স্কুল। ফিরে ফের ঘরের কাজ। রাত সাড়ে ১০টায় ফের পড়তে বসত। অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করত। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে ফের পড়তে বসত।’
অমৃতার স্কুলের শিক্ষিকা স্বপ্না রায়চৌধুরী সান্যাল বলেন, ‘ও সংসার সামলে স্কুলে আসত। তাই ওর পড়াশোনায় আমরা বাড়তি নজর দিতাম। ওর সাফল্য আমাদের কাছে খুব গর্বের বিষয়।’ খবর: আন্দবাজার।