জেএসসি প্রাথমিক সমাপনীও পেছাচ্ছে?

দেশে করোনাভাইরাসে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দুই স্তরের পাবলিক পরীক্ষাগুলো সাধারণত নভেম্বরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবার করোনার কারণে পরীক্ষা দুটি পেছাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে সাধারণ ছুটি যদি আর না বাড়ে অর্থাৎ জুনে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে তাহলে সিলেবাস কমিয়ে নভেম্বরেই পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই দুটি পরীক্ষা একবছরের সেশনের। তাই পরীক্ষা পেছানোর পরিবর্তে পড়ানো অংশ সিলেবাস ধরে পরীক্ষা নিয়ে ফেলা সুবিধাজনক হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এখন এই ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এর আগে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি উন্নত না হলে আগামী সেপ্টম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা এখনো স্থগিত রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে প্রথমে এই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমপানী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেয়া যাবে।

এদিকে গত ৮ মার্চে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ফলে সব ধরণের জনসমাগম নিষিদ্ধ রয়েছে। এছাড়া যথাসম্ভব অপরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর দফায় দফায় সাধারণ ছুটিও বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বন্ধ চলছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছেন এমন কয়েকজন জানান, সামনে অল্প দিনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ থামার লক্ষণ দেখছেন না তারা। ফলে সাধারণ ছুটি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে জুনের মধ্যে নেয়া হবে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু পিছিয়ে যেতে পারে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুই সমাপনী বা পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা সময়মতো নেয়া হলেও কাটছাঁট করতে হবে সিলেবাস।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকছে। এতে আড়াই মাস শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে আছে। কিন্তু এরপরও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হতে পারে। যদিও আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যে তিনটি বিকল্প নির্ধারণ করে রেখেছি। সেগুলো হচ্ছে : যদি জুনে কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে। আর যদি জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কোন পথে পোষানো হবে, সেটা ধরে আরও দুটি বিকল্প করা হয়েছে। যদি জুনেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে সংকট আমরা সহজেই উৎরাতে পারব। কিন্তু জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হলে বা সেটি যদি সেপ্টেম্বরে গড়ায় তাহলে সংকট গভীর হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, জুনে যদি আমরা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারি, তাহলে ক্ষতি পোষাতে বেশি বেগ পেতে হবে না। কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে এবং কিছু ঐচ্ছিক ছুটি হ্রাস করে তা পোষানো যাবে। বিশেষ করে জেএসসি পরীক্ষা গ্রহণ এবং ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যে তাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলে গেছে। বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করে যথাসময়ে এখন টেস্ট পরীক্ষা নেয়া যাবে। কিন্তু ছুটি যদি জুলাই আর আগস্ট বা আরও বেশি গড়ায় তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।

তিনি জানান, শিক্ষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। ছুটি বেড়ে গেলে বড় সমস্যা হবে জেএসসি পরীক্ষার। এ ক্ষেত্রে আমরা ১৫ মার্চ পর্যন্ত যতটুকু পড়িয়েছি এবং পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যা পড়াতে পারব তার মধ্যে নভেম্বরেই পরীক্ষা নেব। কেননা, এক বছর মেয়াদি সেশনের পরীক্ষা পেছানো যাবে না। আর এসএসসি-এইচএসসির সিলেবাস ছোট করা যায় না। গোটা বই থেকেই পরীক্ষা নেয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে পরীক্ষা পেছাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি আর এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। হয়তো পেছাবে।

তথ্যমতে, গতবছর দেশে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয় ২ নভেম্বর। দুই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ জন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ নভেম্বর। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে অংশ নিয়েছে ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ পরীক্ষার্থী। আর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন।

এদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানো হলে মধ্যজুনে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে। ১৬ মে’র পর বোর্ডগুলো পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করবে। আর ছুটি বাড়ানো হলে ঈদের ছুটির পর সময়সূচি তৈরি করা হবে। সে ক্ষেত্রে জুনের শেষের দিকে শুরু হতে পারে এই পরীক্ষা।

 


সর্বশেষ সংবাদ