টিকটকে থামছেই না পুষ্পার রেশ
সম্প্রতি ভারতের তেলুগু ইন্ডাস্ট্রির নতুন মুভি পুষ্পা দ্যা রাইজ ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে বক্স অফিসে। শুধু চিত্রনাট্য নয়, দক্ষিণী স্টাইলিশ সুপারস্টার অল্লু অর্জুনের সিগনেচার মুভ ও হুক স্টেপের জন্য এখন বিশ্বব্যপী আলোচনার বিষয় এই মুভি। সেই জ্বরে ভাসছে এখন বাংলাদেশের টিকটক প্রেমীরা। টিকটকে ঢু দিয়ে দেখা গেছে, এই ছবি ঘিরে এমন কিছু ক্লিপস আছে যার কারণে সবাই এই ছবির সংলাপগুলো নকল করছে। রাজধানী থেকে পাড়া মহল্লা সব খানে এখন টিকটকে চলছে পুষ্পা মুভির বিভিন্ন দৃশ্যে ও গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও ধারণ। এ তালিকায় আছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারাও।
এদিকে স্বল্প সময়ে কথিত টিকটক স্টার হওয়ার নেশায় ফাঁদে পড়ে নতুন প্রজন্মের অনেকেই বিপথে পা বাড়াচ্ছে। এ অ্যাপকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নানা ধরণের কিশোর গ্যাং। আবার মডেল বানানোর ফাঁদে ফেলে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। অপরাধে জড়িয়ে মাদক সেবন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার সনদ আছে কিনা, দেখবে কে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কথিত স্টার হওয়ার নেশায় উঠতি বয়সিরা টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপে উচ্ছৃঙ্খল ভিডিও আপলোড করছে। অনেকে এভাবে কথিত স্টারও বনে যাচ্ছে। তাদের এক শ্রেণির ফলোয়ার তৈরি হচ্ছে। টিকটক আসক্তদের খুব সহজেই আলাদা করা যায়। তারা উদ্ভট পোশাক পরছে, চুলে বিভিন্ন ধরনের কালার করছে। রাস্তা, ফাঁকা মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে তারা স্মার্টফোন নিয়ে উদ্ভট ধরনের নাচ-গানের তালে তালে ভিডিও করছে।
অভিভাবকরা বলছেন, এ থেকে মুক্তি পেতে পারিবারিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং কঠোর আইনের প্রয়োগ করতে হবে। সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা ও চর্চা করতে হবে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও আইনজীবী ফারাহ্ ইকবাল ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, টিকটকের ফাঁদে পড়ে নতুন প্রজন্ম শুধু বিপথে পা বাড়াচ্ছে না তারা মানসিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচিত নতুন প্রজন্মের কাছে বেশি বেশি করে আামাদের দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা। তাদেরকে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে বোঝানো যে টিকটিক আামাদের সংস্কৃতি নয়। টিকটক করে তাদের প্রতিভার বিকাশ হচ্ছে না, উল্টো টিকটক তাদের মেধা শক্তিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিলি সাহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, টিকটক কিশোর বা তরুণ প্রজন্মের জন্য সহজ ও দ্রুত জনপ্রিয়তা প্রাপ্তি এবং নতুন কিছু শেখা বা শেখানোর যে অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে এই বিশেষ কায়দায় তৈরী ত্রিশ সেকেন্ডের ভিডিও অ্যাপটি নিঃসন্দেহে বহু যুবক-তরুণকে ইতোমধ্যেই আসক্ত করে ফেলেছে, কেননা এর স্বল্প দৈর্ঘ্য কখনোই বিরক্তির সৃষ্টি করে না।
আরও পড়ুন: ঝড়ে উপড়ে গেছে বিজ্ঞানী নিউটনের সেই আপেল গাছ!
তিনি আরও বলেন, ভয়ঙ্কর সাইবার বুলিংয়ের পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপরিচিত মানুষের সাথে অবাধ যোগাযোগের সুযোগে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে বিপথে পা বাড়াচ্ছে। তাই এই প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে সবার আগে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। এসব একাউন্ট ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে মেধা প্রদর্শনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। শুধুমাত্র পরিবারের সাথে নিবিড় সম্পর্কই পারে এই ভয়াবহ আসক্তিমূলক অ্যাপটির নেতিবাচক প্রভাব থেকে তরুণদের মুক্ত রাখতে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই টিকটক নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অতিরিক্ত টিকটক ব্যবহারের ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বাস্তবতার প্রতি বিমুখতা, মনস্তাত্ত্বিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবনতির মতো ভয়ানক জটিল মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এসব আসক্তি একটা মানসিক রোগ। এটাকে বলা হয় আচরণগত আসক্তি। তাই তাদের সুস্থ করতে হলে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে হবে। মনো চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের সুস্থ করা সম্ভব। সবাই এক সাথে চেষ্টা করলে সবাইকে সুস্থ করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, টিকটক একটি চীনা অ্যাপ। এর প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়েমিং। ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে এটি চালু করা হয়েছিল। এটি একটি সংগীত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক নেটওয়ার্ক।