দেশে ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে
বিশ্বমানের শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানের মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্য, পড়াশোনা করতে বার্ষিক ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ এ স্কুলগুলোতে
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫ PM , আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২০ PM
দেশে ইংরেজি মাধ্যমে ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা এবং সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তিতে আগ্রহ বাড়ছে অভিভাবকদেরও। বর্তমানে দেশে সরকার নিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪০টি। আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান চলতি বছর তাদের কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে।
উদ্যোক্তাদের কয়েকজন বলছেন, দেশে কোটিপতি, ধনী এবং অতিধনীদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি উচ্চবেতনের অনেক চাকরিজীবীও রয়েছেন। এছাড়া দেশে বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানে কাজের সূত্রে আসা বিদেশিদের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। এ শ্রেণীর অভিভাবকদের বড় অংশ সন্তানদের জন্য দেশেই বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ খুঁজছেন।
তারা বলছেন, বিশ্বমানের শিক্ষার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে মান অনুযায়ী ব্যয়ের পরিমাণ ঠিক থাকলে তাদের আপত্তি নেই। এই শ্রেণির শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের লক্ষ্য করে ‘পাঁচতারকা বা প্রিমিয়াম’ মানের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছে, হচ্ছে। এগুলোতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলন ঘটিয়ে বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
তবে দেশে আধুনিক, সময়োপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ এবং তার বিপরীতে প্রাপ্ত সেবা নিয়ে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না তারা।
দেশের নামী এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ এক বছর পড়াশোনা করতে খরচ করতে হয় সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা করাতে আরও নানা-খাতে অর্থ খরচ করতে হয় অভিভাবকদের। বড় অঙ্কের অর্থ খরচ এবং এর বিপরীতে প্রাপ্ত সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন প্রশ্ন থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করছে, খরচের সঙ্গে মানের সমন্বয় করে সেবা দিতে। তবে দেশে সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা না থাকায় কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা বা কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি সরকার।
দেশে বর্তমানে ব্রিটিশ কারিকুলামভিত্তিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অর্ডিনারি লেভেল, যা সংক্ষেপে ও-লেভেল এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অ্যাডভান্স লেভেল, যা সংক্ষেপে এ-লেভেল হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী স্তর এ-১ ও এ-২ শ্রেণিভুক্ত। এর পরীক্ষাগুলো হয় যুক্তরাজ্যের স্কুল-কলেজের আদলে। দেশে ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি ইংলিশ ভার্সন নামে শিক্ষাদান করা হয়। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কলম্বিয়া অঞ্চলের কারিকুলাম এবং আইবি (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালোরেট) কারিকুলামে তাদের পাঠ্যসূচি পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: অনুমোদন নেই অর্ধেকের বেশি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের
প্রিমিয়াম মান বজায় রাখতে চাওয়া কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের ফি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে বছরে খরচ করতে হয় সর্বনিম্ন ৪ হাজার ডলার (৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ৩০০ ডলারের (৪০ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ টাকা) সমান বাংলাদেশি মুদ্রা। প্লে গ্রুপ কিংবা কেজি ওয়ান অথবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনায় শ্রেণিভেদে এ খরচ হয়।
রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল; স্কলাসটিকা; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা; কানাডিয়ান ট্রিলিয়াম স্কুল, ঢাকা; আঁগা খান স্কুল; ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা; ডিপিএস এসটিএস স্কুল, ঢাকা; ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল; মাস্টারমাইন্ড এবং গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনালসহ শীর্ষ কয়েকটি বিদেশি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের জন্য আইনের খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা নেই। এ সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সই যথেষ্ট। তিনি বলেন, বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে প্রবেশ সহজ হয়েছে। আগে একটি ধারণা ছিল- ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল উচ্চবিত্তদের জন্য। এখন সে ধারণা পাল্টেছে—শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি, টিউশন ফিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে এ অর্থ নেন। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করতে বছরে গুণতে হয় সর্বনিম্ন ১৪ লাখ টাকা। এখানে পড়াশোনা করতে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দিতে হয় ৪০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি মুদ্রা।
কাছাকাছি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয় ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ বোর্ডিং স্কুল হেইলিবারি ভালুকাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া বছরে ৩০ লাখ টাকার কম খরচ করতে হয় নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানে। কিছু প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপসহ নানা সুবিধা নিয়ে সাধ্যের মধ্যে পড়াশোনার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। সদ্য প্রতিষ্ঠিত গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করতে খরচ হয় সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: অনিবন্ধিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বন্ধের হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত তিনটিসহ ১৪০টি। এর মধ্যে ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ৯০টি। আর জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৭টি। সর্বশেষ গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল, হেইলিবারি ভালুকা ও নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে আরও তিনটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে। তাদের চলতি বছরে বা আগামী বছরে পাঠদান শুরুর কথা রয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান।
ব্যানবেইসের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় ৯ হাজার ৩৭৫ জন কমে দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৮ হাজার ৮২৫ জন। তাদের পাঠদানের দায়িত্বে আছেন ছয় হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষক।
দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত তিনটিসহ ১৪০টি। এর মধ্যে ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ৯০টি। আর জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৭টি—ব্যানবেইস।
দেশের ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো নীতিমালা ও নজরদারি না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ভর্তি ও টিউশন ফি হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন। প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ভর্তি ফির নামে কয়েক লাখ টাকা নেওয়ার পাশাপাশি টিউশন ফি হিসেবে মাস বা বছরান্তে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এ ছাড়া কোচিং সেন্টার, বই ও স্টেশনারিসহ কয়েক ধরনের খরচ রয়েছে, যা সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের বেশি আপত্তি রয়েছে, বছরান্তে নতুন করে ভর্তি ফি নিয়ে। তাদের মতে, একজন শিক্ষার্থী একটি প্রতিষ্ঠানে একবার ভর্তি হওয়ার পর বছর শেষে বা নতুন শ্রেণিতে ফের ভর্তি হওয়া এবং অতিরিক্ত ফি নেওয়া অযৌক্তিক।
আরও পড়ুন: আইন ও নীতিমালা ছাড়াই চলছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা
এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিচ্ছে। সে সেবার বিপরীতে বেশি অর্থ নিতে হয়। তাদের মতে, এখানে শিক্ষা ও সহশিক্ষাসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় জড়িত থাকে। এছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তি, নৈতিকতা এবং সফটস্কিলসহ অন্যান্য বিষয়ে জোর দিতে হয়। যুগোপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বাস্তব ও জীবনমুখী করতে শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষায় জোর দিতে হচ্ছে।
তারা আরও বলছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য। যেসব অভিভাবকরা নিজেদের সন্তানকে দেশের বাইরে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন তাদের কাছে এই ফি কাঠামো সাশ্রয়ী মনে হবে।
দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষালয়গুলোর অনিয়ন্ত্রিত ফি কাঠামো নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, আমাদের দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে টিউশন ফি ধার্য করা হয় অযৌক্তিকভাবে। ফি নির্ধারণে অভিভাবকদের মতামত কিংবা সরকারি নিয়ন্ত্রকসংস্থার কোনো কার্যকর ভূমিকা থাকে না। বড় স্কুলগুলোর নিজেদের মধ্যে রীতিমতো ফি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
আমরা অনেক আগেই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার জন্য নীতিমালা করার কথা বলেছি। কিন্তু কেন তা হয়নি তা সরকার বলতে পারবে। আবার নীতিমালা হলেও তার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রশ্ন আসবে। এজন্য আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনের প্রয়োগও বাড়াতে হবে—ড. কাজী খলীকুজ্জমান।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে জানিয়ে এ কে এম আশরাফুল হক বলছেন, ক্যামব্রিজ কারিকুলাম কিংবা এডেক্সসেল কারিকুলামে টিউশন ফি ৮ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা। আর যে-সব স্কুলে খেলার মাঠ বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভালো সেইসব স্কুলে মাসিক ফি ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর আইবি কারিকুলামে মাসিক ফি মাসিক ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে মাসিক ফি দুই তিন গুন বেশি। এ নিয়ে আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার মান ঠিক রাখতে দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
হেইলিবারি ভালুকা
দেশে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক বোর্ডিং স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান হেইলিবারি। তারা চলতি বছর ময়মনসিংহের ভালুকায় হেইলিবারি ভালুকা নামে যাত্রা শুরু করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার শিক্ষাবৃত্তি ঘোষণা করেছে।
হেইলিবারি ভালুকা কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীরা সাধারণ একটি মূল্যায়ন দিয়ে এখানে ভর্তি হতে পারবে এবং এর মাধ্যমে স্কলারশিপও পাবে। স্কলারশিপ ফান্ডের পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ডলার, যা একক ফান্ড হিসেবে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। ফলে এখানে পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ফি প্রদান করতে হবে না। তারা স্কলারশিপ নিয়ে কম খরচে নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় হেইলিবারি ভালুকার বাংলাদেশ ক্যাম্পাস
বাংলাদেশে কোনো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শাখা নেই জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিখ্যাত সানডে টাইম হেইলিবারিকে বিশ্বের সেরা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রেখেছে। ফলে এখানে শিক্ষার্থীরা এমন সেবা পাবে, যা তাদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে যোগ্য করে তুলবে। এখান থেকে পাস করার পর তারা বেশিরভাগ অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠানে যায়। এছাড়া হেইলিবারি বাংলাদেশে প্রথম স্কুল, যারা অক্সফোর্ডের হাই পারফরম্যান্স লার্নিং (এইচপিএল) প্রক্রিয়া নিয়ে পাঠদান শুরু করবে।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, হেইলিবারি ভালুকায় প্রধান শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি মেম্বারসহ সবাই বিদেশি এক্সপার্ট। এখানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তিনি রেজিস্ট্রেশন করার পর তার বয়স সফটওয়্যারে দেওয়া হবে। তার বয়সের বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী প্রশ্ন আসবে। এটিও বাংলাদেশে এবং এ অঞ্চলে প্রথম। একে কমিউনিটি অ্যাবিলিটি টেস্টিং (সিএটি বা ক্যাট) বলা হয়। এটি সাধারণত যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন হেইলিবারি ভালুকার কর্মকর্তারা।
গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
দেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও সহশিক্ষা নিশ্চিত করতে নানা প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের জুনিয়র বিভাগের প্রধান কুমকুম হাবিবা জাহান বলেন, বাংলাদেশে সহশিক্ষাসহ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এজন্য আমরা স্কুল অব লাইফ ধারণাটি নিয়ে এসেছি। আমরা একজন শিক্ষার্থীকে আগামীর বিশ্বের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
কুমকুম হাবিবা জাহানের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের স্কুলের গৎবাঁধা পড়াশোনা ও পাঠ্যক্রমের বাইরে নানান বিষয়ে জানতে হয় এবং দক্ষতা অর্জন করতে হয়। গ্লেনরিচের স্কুল অব লাইফ ধারণার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী কেবল পড়াশোনাই করবে না, নানান এক্সট্রা-কারিকুলার (পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত) কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে রোবোটিক্স, ম্যাথমেটিক্স ও মিউজিকের মতো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে। নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটাবে। এসব দক্ষতা শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য বিস্তৃত পরিসরে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের এখানে কেমব্রিজ কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন ও দক্ষতার যথাযথ বিকাশ ও তাদের বৈশ্বিকভাবে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে রয়েছে নানান পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত (এক্সট্রা-কারিকুলার) কার্যক্রমের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো এ স্কুলটি বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে।
রাজধানীতে গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্যাম্পাস
আমরা স্টেমরোবোর সহযোগিতায় রোবোটিক্স অনুমোদিত পাঠ্যক্রম, ম্যাথবাডির সহযোগিতায় ম্যাথ ল্যাব, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল স্কুল অব মিউজিকের অ্যাসোসিয়েটেড বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত মিউজিক, বিউমন্ট কর্তৃক স্বীকৃত অত্যাধুনিক সুবিধা এবং আলিয়ঁস ফসেজ ডো ঢাকা কর্তৃক ফরাসি ভাষার ওপর সার্টিফিকেশন করাচ্ছি- যোগ করেন হাবিবা জাহান।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানের সবগুলো শ্রেণিকক্ষে ওয়াইফাই সুবিধা, ভয়েস রেকর্ডিংসহ সিসিটিভি কাভারেজ, শিশুদের বাবা-মায়ের জন্য লাউঞ্জ, খেলার জন্য বিশেষ স্থান (অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানসম্পন্ন), সংযুক্ত কোলাবোরেটিভ রুম, বিনোদনের জন্য বিশেষ এলাকা এবং শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী ডিজাইনের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ক্যাম্পাসের চমৎকার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করবেন তারা।
নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক চেইন স্কুল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান টি. কে. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে রাজধানীর হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও প্রশাসনের অধীনে গ্লোবাল অফশোর স্কুল প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে পরিচালিত এ শিক্ষালয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পাঠ্যক্রম, পাঠ্য উপকরণ, শ্রেণিকক্ষের মান এবং ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালোরেট (আইবি) পাঠ্যক্রম সব বিকল্পসহ ব্যবস্থা রাখা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য।
শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা-সুবিধা থাকবে জানিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান যারা অটিজম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা (হেলথ কাভারেজ) পাবে। তাদের যাতায়াত, ডে কেয়ার, কালচারাল বা সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ সব-ধরনের ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। এছাড়াও এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিবিদদের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে খাবারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এখানে অটিজম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত কানাডিয়ান টিচার কর্তৃক পাঠদানসহ বিশেষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা (হেলথ কাভারেজ) পাবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, শিক্ষাসামগ্রী, কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ, ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং ও ডে-কেয়ারসহ সব-ধরনের ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে—আনজাম আনসার, সিইও, নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দেশীয় টি. কে. গ্রুপের সমন্বয়ে নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২টি ক্যাম্পাস দিয়ে শিগগিরই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম শুরু করবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর দিলু রোডে অবস্থিত প্রি-স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে তাদের প্রথম ক্যাম্পাস এবং আগামী বছর থেকে দক্ষিণ কুনিপাড়ায় অবস্থিত স্কুল ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম শেষে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করবে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া অফশোর স্কুল বিগত ৩৫ বছর ধরে বিশ্বের ৮টি দেশে পরিচালিত হচ্ছে; নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই স্কুল পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে টি. কে. গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি। স্কুলটি সরাসরি ব্রিটিশ কলাম্বিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পাঠ্যক্রম, প্রত্যয়িত অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যারা কানাডিয়ান নাগরিক। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ইত্যাদির মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নথিভুক্ত হতে পারবে।
উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, যেহেতু স্কুলটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত এবং বিশ্বের সেরা র্যাংক্ড স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম সেহেতু এটি শিক্ষার জগতে বাংলাদেশকে একটি বিশিষ্ট স্থানে পরিচিত করে তুলবে। একই সাথে শিক্ষাখাতে আরেকটি মহৎ উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশ এবং বহির্বিশ্বে একটি দুর্দান্ত ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হবেন তারা।
রাজধানীতে নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নির্মাণাধীন ক্যাম্পাস
নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সিইও আনজাম আনসার জানান, আমাদের স্কুলে অটিজম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত কানাডিয়ান টিচার কর্তৃক পাঠদানসহ বিশেষ ব্যবস্থাপনা রেখেছি। এখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা (হেলথ কাভারেজ) পাবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, শিক্ষাসামগ্রী, কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ, ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং ও ডে-কেয়ারসহ সব-ধরনের ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে এই স্কুলে। স্কুলের অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষকরা ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সার্টিফাইড ও কানাডিয়ান নাগরিক।
এখানে শিক্ষা এবং সহশিক্ষার সব আয়োজন থাকবে জানিয়ে নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এই কর্মকর্তা বলছেন, আমরা প্লে, নার্সারি, কেজি এবং গ্রেড ওয়ানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঠ্য-কার্যক্রম শুরু করবো। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ পাবেন।
দেশছাড়ার প্রবণতা রোধ ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়
গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দুই কর্মকর্তা কুমকুম হাবিবা জাহান ও আনজাম আনসার মনে করেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা রুখতে পারবে। তাদের মতে, এখানে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের শিক্ষা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা পাবে। তারা এখন দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
দেশের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদেশে শিক্ষাগ্রহণ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পারিবারিক ও নিজস্ব প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। সেক্ষেত্রে দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, পরিবেশসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু সন্তোষজনক হলে অভিভাবকরাও চাইবেন সন্তানরা দেশের বাইরে না গিয়ে দেশে উচ্চ মানের শিক্ষা গ্রহণ করুক। ফলে শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে আমাদের ধারণা দেন তারা।
তবে, ইংরেজি মাধ্যমের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না দেশীর শিক্ষাবিদরা। অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান মনে করেন, প্রথমেই দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন এবং নীতিমালা থাকা দরকার এবং এ সংক্রান্ত আইন এবং নীতিমালা না থাকা হতাশাজনক বলেও মনে করেন তারা।
আপনাকে দেখতে হবে এসব প্রতিষ্ঠান কেন হচ্ছে বা বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এখানে আসছে। তারা তাদের স্বার্থে আসছে, না আমাদের প্রয়োজনে। দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করতে হবে। আর এসব প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি রুখতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে না—অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই শিক্ষাবিদ মনে করেন, “এ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান দেশে শিক্ষা বৈষম্য তৈরি করেছে। তাদের মতে, কারও অর্থ থাকলেই তিনি ভালো মানের শিক্ষা নিতে পারবেন; আর কারো অর্থ নেই বলে পড়ার সুযোগই পাবে না, তা হওয়া উচিত না।”
এছাড়াও এ ধরনের শিক্ষা বৈষম্যকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষণাপত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের পরিপন্থি বলে মনে করেন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, আমি আধুনিক, মানসম্মত শিক্ষার পক্ষে; কিন্তু কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সেজন্য দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাধ্যম হতে হবে পরিকল্পিত এবং বাস্তবমুখী। না হলে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যক্তির উন্নতি হলে চূড়ান্ত বিচারে জাতীয় স্বার্থে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। কেননা শিক্ষা এখন একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। এর মধ্যে আমাদের জাতীয় প্রত্যাশা-প্রাপ্তি থাকবে। শিক্ষা মানবাধিকারের বিষয়। সেজন্য দেশে শীর্ষ মানের বা খরচের প্রতিষ্ঠান করতে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিচার এবং তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলছেন, আমরা অনেক আগেই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার জন্য নীতিমালা করার কথা বলেছি। কিন্তু কেন তা হয়নি তা সরকার বলতে পারবে। আবার নীতিমালা হলেও তার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রশ্ন আসবে। এজন্য আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনের প্রয়োগও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এটি এখন একটি ব্যবসা হয়ে গেছে এবং একটি শ্রেণি তার শিকার হচ্ছে। অবশ্য শিকার হচ্ছে বলা যাবে না তারা তো সেখানে স্বেচ্ছায়ই যাচ্ছে।
ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান দেশে শিক্ষা বৈষম্য তৈরি করেছে। কারও অর্থ থাকলেই তিনি ভালো মানের শিক্ষা নিতে পারবেন; আর কারো অর্থ নেই বলে পড়ার সুযোগই পাবে না, তা হওয়া উচিত না। এ ধরনের শিক্ষা বৈষম্যকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষণাপত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের পরিপন্থি—অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।
অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, “আপনাকে দেখতে হবে এসব প্রতিষ্ঠান কেন হচ্ছে বা বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এখানে আসছে। তারা তাদের স্বার্থে আসছে, না আমাদের প্রয়োজনে। এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেখলে আপনার ভালো মনে হবে; কিন্তু, তা আসলে কতটা ভালো হবে তা আমাদের দেখতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে এটি খুব বেশি মানুষকে আশাবাদী করতে পারবে না। এ নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে, এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করতে হবে। আর এসব প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি রুখতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।”
দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিন্ন ফি কাঠামোর বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সবাইকে একই কাঠামোতে নিয়ে আসতে, কিন্তু এখনও পারিনি। সব প্রতিষ্ঠানকে একই কাঠামোয় নিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের চেষ্টা আছে।
আর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মনে করেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের আইনের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই। এ সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সই যথেষ্ট। তিনি বলেন, বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে প্রবেশ সহজ হয়েছে। আগে একটি ধারণা ছিল- ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল উচ্চবিত্তদের জন্য। এখন সে ধারণা পাল্টেছে। বর্তমানে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরাও ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।