বুয়েট ছাত্রী সনি হত্যার ২০ বছর আজ

  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার (৮ জুন)। ২০০২ সালের এই দিনে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সনি।

এই ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সারাদেশের মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানায়। আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত সনি হত্যা মামলার দ্রুত বিচার শেষে সন্ত্রাসী মুকি ও টগরসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার রায় ছিল দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘সনি স্মৃতিফলক’ এর সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, আমার সনিকে হারিয়েছি, কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়। আমি এক সনিকে হারিয়ে আমার চোখে হাজারো সনিকে দেখেছি। আর একজন সনিও যেন না হারায়। শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। তার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা জানি। তবে আমি হতাশ নই। একদিন দেশে সুদিন আসবে। হাজারো বেঁচে থাকা সনিদের জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।

মানববন্ধনে নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খবির উদ্দীন খান, সনির বড় ভাই মো. মামুন মোল্লা, সনির চাচী মালতী ফারুক, খালা রোকোয়া খানম, সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ নিয়ামুল করিম, স্থপতি বিজয় তালুকদার, স্থপতি সুব্রত সরকার প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। 

মানববন্ধনে বক্তারা শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ৮ জুনকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। 

মানববন্ধনে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো 

 ১. শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক; 

 ২. রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক; 

 ৩. অঙ্গ সংগঠনের পরিচয়ে ছাত্র সংগঠনের ছত্র ছায়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বখাটেপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; 

 ৪. শিক্ষার্থীদের সুস্থ সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; 

 ৫. শিক্ষাঙ্গনে মেয়েদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করাসহ সকল প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি; 

 ৬. স্বাধীনতা পরবর্তী শিক্ষাঙ্গনে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। 

মানববন্ধনের আগে সনির স্মৃতি ফলকে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশন অভিভাবক পরিষদ, বুয়েট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সুরা ফাতেহা পাঠ ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন শুরু হয়।


সর্বশেষ সংবাদ