২৪ মার্চ ২০২২, ২১:০৯

পাবিপ্রবির বিদায়ী ভিসির নামে ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা

অধ্যাপক রুস্তম আলী  © টিডিসি ফটো

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক রুস্তম আলীর নামে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ড. আওয়াল কবির জয়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি পাবনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন।

মামলার এজাহারে শিক্ষক আওয়াল কবির দাবি করেছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি, প্রক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। তাকে (আওয়াল কবির) বিভিন্নভাবে হয়রানি ও অপদস্ত করেন। ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের ৫৩তম সভায় উপাচার্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তিনি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণের জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে তাকে সভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন: ক্রিকেটের মাঠ থেকে হাসপাতালের বেডে ঢাবি শিক্ষার্থী মোশাররফ

শিক্ষক আওয়াল কবিরের দাবি, উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্ত কমিটির নামে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। দীর্ঘ সময় তদন্ত কমিটি ঝুলিয়ে রেখে প্রতিবেদন না দিয়ে উপাচার্য মেয়াদ শেষের আগেই ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এতে তাঁর (আওয়াল কবির) সামাজিক, ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক সম্মানহানি হয়েছে এবং তিনি সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এতে তাঁর ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই তিনি মামলাটি করেছেন।

আওয়াল কবির একসময় ছাত্রলীগ করতেন। ২০১০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০১৬ সালে প্রক্টরের দায়িত্ব পান। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যেই শিক্ষক রাজনীতিতে জড়ান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্ন্তয শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৭–১৮ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়াল কবিরকে নিয়ে ২০১৭ সালে ‘অনিয়মে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকই এখন হর্তাকর্তা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়।

মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে উপাচার্য এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

ঘটনার এত পরে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আওয়াল কবির বলেন, উপাচার্য এম রোস্তম আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বপালনকালে ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁর অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয়ে কেউ কথা বলতে গেলেই বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং ষড়যন্ত্র করে হয়রানি করেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে তাঁর বিপক্ষে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মামলাটি করা হলো।

উল্লেখ্য, রোস্তম আলী উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার, একাডেমিক-প্রশাসনিক আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ইউজিসির তদন্তে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তিনি বেশ কিছু টাকা ফেরতও দেন।

আরও পড়ুন: ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানছেন অধ্যক্ষ সেলিম

গত ৭ মার্চ এই উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষের আগে গণনিয়োগের আয়োজন করেন এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে সভা বাতিল করে পুলিশ পাহারায় রাতের অন্ধকারে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। অনৈতিকভাবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন নিজের ভাতিজি কানিছ ফাতিমা (সেকশন অফিসার), ভাগিনা হাসিবুর রহমানসহ (অফিস সহকারী) অনেককে।

রোস্তম আলীর অনিয়ম, ক্ষমতার অবব্যবহারের প্রতিবাদ এবং নানা দাবিতে গত প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নানা সংকট তৈরি হয়েছে।